× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

সম্ভাবনার পথরুদ্ধ: জুড়ীর পর্যটন শিল্প

খোর্শেদ আলম,জুড়ী (মৌলভীবাজর) প্রতিনিধি।

০৮ জুলাই ২০২৫, ১৬:৫২ পিএম । আপডেটঃ ০৮ জুলাই ২০২৫, ১৮:৪০ পিএম

ছবিঃ সংবাদ সারাবেলা।

বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের সৌন্দর্য-বিলাসী জেলা মৌলভীবাজার, যার বৈশিষ্ট্য—চা-বাগান, হাওর-বাঁওড়, পাহাড়-ঝর্ণা আর বৈচিত্র্যপূর্ণ নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস। এই জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে জুড়ী উপজেলা পর্যটনের বিশাল সম্ভাবনা নিয়ে এখনো অপেক্ষা করছে উন্নয়নের আলো দেখার। প্রাকৃতিক ও নৃ-সংস্কৃতির অপার সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ হলেও নানা সংকটে পিছিয়ে পড়ছে জুড়ীর পর্যটন শিল্প। জুড়ী যেন এক বিস্ময়কর ভূ-স্বর্গ।

এখানে রয়েছে বিস্তৃত হাওরাঞ্চল, পাহাড়, বন, ঝর্ণা, ঐতিহাসিক স্থাপনা ও আদিবাসী সংস্কৃতি। হাকালুকি হাওরের বিশাল জলরাশি, পরিযায়ী পাখিদের কোলাহল, নৌকা ভ্রমণের রোমাঞ্চ সব কিছুই যেন এক ভিন্ন অভিজ্ঞতার আমন্ত্রণ জানায়। বর্ষায় হাওরের জলসৌন্দর্য আর শীতে পাখিদের আগমনে এই অঞ্চল রূপ নেয় এক জীবন্ত গ্যালারিতে। পাথারিয়া হিলস রিজার্ভ ফরেস্টে রয়েছে ছোট-বড় বেশ কয়েকটি ঝর্ণা—সীতাকুণ্ড, মায়াবন, মায়াকানন, সন্ধানী, শুভাকাঙ্ক্ষী, বিষকরম ইত্যাদি। তাছাড়া রয়েছে, হাতি নালা গিরিখাত, লাঠিটিলার ব্রিটিশ আয়রণ ব্রিজ, ধসল পাহাড়ের শিবমন্দির, কাশ্মির টিলা, লালছড়ার কমলা বাগান ও সাগরনালের হাড়ারগজ সংরক্ষিত বন এবং কালাপাহাড় (সিলেট বিভাগের সর্বোচ্চ চূড়া)—সবই জুড়ীকে পর্যটন মানচিত্রে স্থান দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। খাসিয়া সম্প্রদায়ের জীবনযাপন, তাঁদের সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য ও শিল্পকর্ম এক ভিন্নমাত্রার অভিজ্ঞতা দেয় পর্যটকদের। এইসব কিছুই জুড়ীকে করে তোলে একটি ‘হিডেন ট্রেজার’।

প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক এই অফুরন্ত সম্ভার থাকা সত্ত্বেও, জুড়ীর পর্যটন শিল্প এখনও মূলধারার বাইরে। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর পেছনে রয়েছে কয়েকটি গুরুতর কারণ। যেমন—পর্যটকদের থাকার মতো সরকারি বা বেসরকারি মানসম্মত আবাসন নেই। পরিবার বা দল নিয়ে ভ্রমণকারীরা সমস্যায় পড়েন রাত্রিযাপনের ক্ষেত্রে। পর্যটকদের উপযোগী পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ খাবারের হোটেল নেই বললেই চলে। দর্শনীয় স্থানগুলোতে যাওয়া-আসার উপযোগী রাস্তা নেই। বর্ষায় অনেক জায়গা কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অনেক স্থানেই নেই সাইনবোর্ড, রোড ম্যাপ, গাইড, তথ্যকেন্দ্র বা পর্যটন সহায়তা কেন্দ্র। পর্যটন অঞ্চল হিসেবে জুড়ীর কোনো প্রচার প্রচারণা নেই। ফলে অধিকাংশ পর্যটক এই এলাকা সম্পর্কে অবগতই নন।

পর্যটন খাতকে এগিয়ে নিতে চাই পরিকল্পিত ও টেকসই উদ্যোগ। আধুনিক ট্যুরিজমের প্রতিষ্ঠাতা আশরাফ আলী বলেন: “সরকারি স্বীকৃতি ও পর্যটন ঘোষণার পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে গাইড প্রস্তুত, প্রচারণা জোরদার, রোড ম্যাপ তৈরি, ইকো ট্যুরিজম মেনে চলা, নিরাপত্তা ও পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, হাওরে বর্ষা মৌসুমে খেয়াঘাট নির্মাণ, পর্যটন স্পটে তথ্য বোর্ড বসানো, স্থানীয়দের পর্যটনবান্ধব আচরণের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং সরকারি-বেসরকারি নিরাপত্তা জোরদার করা—এই পদক্ষেপগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

পর্যটন শুধু আনন্দ বা ভ্রমণ নয়—এটা একটা শক্তিশালী অর্থনৈতিক খাত। জুড়ী যদি সঠিকভাবে পর্যটন শিল্পে গড়ে ওঠে, তবে স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক বিনিময়, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হবে। সরকার যদি নির্দিষ্ট নীতির আওতায় জুড়ীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো পর্যটন এলাকা ঘোষণা করে, স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করে পরিকল্পনা করে এবং পর্যটন বান্ধব অবকাঠামো গড়ে তোলে, তবে অচিরেই এই উপজেলা হয়ে উঠবে দেশের অন্যতম পর্যটন হাব।

জুড়ীর সৌন্দর্য শুধুই প্রাকৃতিক নয়—এখানে লুকিয়ে আছে সংস্কৃতি, ইতিহাস, জীবনবোধ আর বৈচিত্র্যের অপূর্ব মিশ্রণ। সঠিক পরিকল্পনা, সরকারি স্বীকৃতি ও স্থানীয় অংশগ্রহণ থাকলে জুড়ী বাংলাদেশের পর্যটন মানচিত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারবে। এখন প্রয়োজন দূরদর্শী পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের দৃঢ়তা। সময় এসেছে, জুড়ীকে পিছিয়ে না রেখে সামনে এগিয়ে দেওয়ার।

প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ করে জুড়ী উপজেলাকে দেশের অন্যতম রোল মডেলে পরিনত করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল আলম খান। তিনি বলেন, “বর্তমান সময়ে প্লাস্টিক ও পলিথিন আমাদের পরিবেশের জন্য এক গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষি জমি, জলাশয়, এবং বাস্তুতন্ত্র এই ক্ষতিকর উপাদানের কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে চাষাবাদের জমিতে পলিথিন জমে থেকে মাটির উর্বরতা হ্রাস করে এবং পানি নিষ্কাশনের পথে বাধা সৃষ্টি করে।

আমরা যদি এখনই সচেতন না হই, তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের কৃষি উৎপাদন ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়বে। তাই আমি সকল কৃষক, ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণের প্রতি অনুরোধ জানাই—দয়া করে পলিথিন এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। পরিবেশবান্ধব বিকল্প যেমন কাপড়ের ব্যাগ, ঝুড়ি কিংবা বায়োডিগ্রেডেবল পণ্য ব্যবহার করুন।

পরিবেশ রক্ষা মানেই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ একটি পৃথিবী গড়ে তোলা। সেক্ষেত্রে সবাই মিলে একটি পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও টেকসই বাংলাদেশ গড়ে তুলার পাশাপাশি জুড়ী উপজেলাকে একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুলি"

এ বিষয়ে জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাবুল সূত্রধর বলেন, "জুড়ী উপজেলার পর্যটন শিল্প নিয়ে খুব বড় পরিসরে কিছু করার সুযোগ সীমিত। এখানে উল্লেখযোগ্য পর্যটন অবকাঠামো বা সুপরিচিত স্থান নেই। পাথারিয়া বনের কয়েকটি ঝর্ণা সম্পর্কে জানা গেছে, তবে সেটি একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল হওয়ায় সেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশে বিধিনিষেধ রয়েছে।"

তিনি আরও বলেন, "হাকালুকি হাওর একটি বিশাল জলাভূমি, যা শুধুমাত্র জুড়ী উপজেলাকে ঘিরে নয়, পাঁচটি উপজেলার অংশজুড়ে বিস্তৃত। ফলে এককভাবে জুড়ী থেকে এর পূর্ণ ব্যবস্থাপনায় এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তবে, হাওরের পর্যটন সম্ভাবনাকে সামনে রেখে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে, যা ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে।"

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.