নীলফামারী জেলার বিভিন্ন স্থানে রেললাইনের ওপর অবস্থিত একাধিক রেলগেট অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। গেটম্যান ও সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় এসব পয়েন্টে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন পথচারী ও যানবাহনচালকরা। এতে করে ঘটছে ছোট-বড় নানা দুর্ঘটনা।বিষয়টি নিয়ে বহুবার প্রশাসন ও রেল কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হলেও এখনো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে স্থানীয়দের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র জানায়, নীলফামারীর অধিকাংশ রেলক্রসিং অরক্ষিত। চিলাহাটি থেকে সৈয়দপুর ৭০ কিলোমিটার রেলপথ। প্রতিদিন এ পথে চলাচল করে লোকাল-মেইল ট্রেনসহ ছয়টি আন্তঃনগর ট্রেন। পাশাপাশি চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথ চালু হওয়ায় এ পথে বেড়েছে পণ্যবাহী ট্রেনের সংখ্যাও।
এ পথে মোট লেভেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা ৩৬টি। এর মধ্যে ২৫টি ক্রসিংয়েই নেই কোনো গেটম্যান। এসব লেভেল ক্রসিংয়ের পাশেই রয়েছে স্কুল হাট-বাজার ও গ্রামের প্রধান রাস্তা। ফলে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। অনেক স্থানে নেই গেট ও গেটম্যান। অরক্ষিত রেলক্রসিং গুলোয় প্রতিরোধের নেই কোনো উদ্যোগ। ফলে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হওয়া এসব রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনাসহ নিহতের ঘটনাও ঘটছে।
এদিকে, গত ২৫ জুন নীলফামারী সদরের পলাশবাড়ির জ্ঞানদাশ কানইকাটা তেঁতুলতলা রেল ঘুমটিতে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের কারণে ট্রেনের ধাক্কায় আরাজি দলুয়া চওড়া বড়গাছা এলাকার মৃত কাল্টু রায়ের ছেলে সন্তোষ রায় (৪০) একই এলাকার শেলটু রায়ের ছেলে ভবেশ রায় (২৮) মোটর সাইকেলে যাওয়ার পথে নিহত হন।
জেলা সদরের চেতাশাহ রেল ঘুন্টির পাশেই বসবাসরত মো. সোহেল রানা বলেন, এখন রেলক্রসিংয়ে যে হারে মানুষ মারা যাচ্ছে, এতে রেল বিভাগের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। তাই রেলপথ ও সড়ক সস্প্রসারণের সঙ্গে মানুষের নিরাপত্তার জন্যও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
জেলা সদরের পলাশবাড়ী জ্ঞানদাশ কানাইকাটা তেঁতুলতলা রেল ঘুমটি এলাকার বাসিন্দা সাইদুর রহমান বলেন, প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া-আসার সময় রেলগেট পার হতে হয়। কোনো গেটম্যান থাকে না। ট্রেন আসছে কি না বুঝে উঠতেই অনেকে বিপদে পড়ে যায়। তিনি আরও বলেন, এইসব অরক্ষিত রেলগেটে অতীতে একাধিক প্রাণহানি ও দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবুও রেল কর্তৃপক্ষ এসব গেটের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।
এ বিষয়ে নীলফামারীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, অরক্ষিত রেলগেটগুলো নিয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে অরক্ষিত রেলগেটগুলোর নিরাপত্তা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে কিছু স্থানে অস্থায়ীভাবে প্রহরী নিয়োগ ও সাইনবোর্ড বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
সৈয়দপুর রেলওয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জনবল সংকট ও বাজেট সীমাবদ্ধতার কারণে সব রেলগেটে গেটম্যান নিয়োগ সম্ভব হচ্ছে না। তবে গুরুত্ব বিবেচনায় কিছু গেটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের কাজ চলছে।
সৈয়দপুর জিআরপি থানা সুত্রে জানা গেছে, গত দুই বছরে নীলফামারীর বিভিন্ন অরক্ষিত রেলগেটে অন্তত ১৭টি ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ১১ জন এবং আহত হয়েছেন অনেকেই।
স্থানীয় সচেতন মহল ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেলগেট এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে সিগন্যাল লাইট, গেটম্যান নিয়োগ ও সতর্কতামূলক প্রচার চালাতে হবে। পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন হতে হবে।
অন্যথায়, এই অরক্ষিত রেলগেটগুলো যে কোনো সময় বড় ধরনের ট্র্যাজেডির জন্ম দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।বিষয়টি নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ ও সরকারের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন জেলার সাধারণ মানুষ।