পরিবেশগত বিপর্যয়ের একটি আতঙ্ক জাগানো প্রপঞ্চের নাম পাহাড় ধস। টানা কয়েকদিন ভারী বর্ষণের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে পাহাড়ের পাদদেশ। পাহাড় ধ্বসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বান্দরবান জেলা জুড়ে।
জেলাতে বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুকিঁপূর্ণ স্থানে বসবাস করছেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। শুষ্ক মৌসুমে বড় বড় পাহাড় টিলা কেটে বসবতঘর তৈরী এবং পাহাড় কাটা মহোৎসবের কারণে প্রত্যেক বছরই পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় মৃত্যু হয়। এসব দুর্ঘটনা থেকে উদ্ধার পেতে প্রশাসন পক্ষ থেকে পাহাড় না কাটার সর্তকতা ও মামলা করা হলেও থামেনি এসব মহাযজ্ঞ কাজ। এতে টানা বর্ষণের কারণে দেখা দিয়েছে পাহাড় ধ্বসে বিপর্যয়।
বান্দরবানের সাত উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশে অপরিকল্পিতভাবে বসতি গড়ে তুলেছে কয়েক হাজারের বেশি পরিবার। জেল শহরে কালাঘাটা, বনরুপা, বীর বাহাদুর নগর, লাঙ্গেপাড়াসহ বেশ আরো কয়েকটি স্থানে পাহাড়ের ঝুকিঝুকিপূর্ণ ভাবে বসবাস করছেন অধিকাংশ মানুষ। জেলা শহরে শুধু নয় লামা, নাইক্ষ্যংছড়িতে একই চিত্র। উচুঁ পাহাড়ের উপর মাটি কেটে বসতঘর নির্মাণের ফলে বর্ষায় মৌমুমে এলে শিকার হয় পাহাড় ধ্বসেআ দুর্ঘনায়। ঝুকিপূর্ণ স্থান থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে যেতে এআকাধিকবার বলা হলেও তবুও সেখানে থাকছেন অনেকেই। প্রত্যেক বছর পাহাড়ের পাদদেশে নতুন নতুন বসতি গড় ওঠায় গত বছরর তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ও পরিবারের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।
প্রশাসনের তথ্য মতে, ২০০৬ সালে জেলা সদরে ৩ জন, ২০০৯ সালে লামা উপজেলায় শিশুসহ ১০জন, ২০১০ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় শিশুসহ ১০ জন, ২০১১ সালে রোয়াংছড়ি উপজেলায় ২ জন, ২০১২ সালে লামা ফাইতং ইউনিয়নে ২৮ জন ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১০ জন, ২০১৩ সালে পৌর শহর কালাঘাটায় ২জন, ২০১৪ সালে সদরে ৪জন, ২০১৫ সালে লামায় ৬ জন ও সদরের বনরূপা পাড়ায় ৩ জন, ২০১৭ সালের সদরের কালাঘাটায় ৭জন ও রুমা সড়কে ৫ জন, ২০১৮ সালে নাইক্ষ্যংছড়িতে ৩ জন ও লামায় ৪ জন, ২০১৯ সালে লামায় ১জন, ২০২০ সালে আলীকদমের মিরিঞ্জা এলাকায় ১ জন, ২০২১ সালে ছাইঙ্গ্যা ঝিরিতে এক পরিবারের ৩ জন, ২০২৩ সালে মা-মেয়ে ২জন ও সর্বশেষ চলতি বছরে নাইক্ষ্যংছড়িতে পাহাড় ধসে নিহত হন ১ জন কৃষক। ফলে বান্দরবান জেলায় গত একদশকে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধ্বসে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১০৫ জনের অধিক।
আবাহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, জেলা গত ২৪ ঘন্টা বৃষ্টিপাতের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০৮ মিলিমিটার। অতিভারী বর্ষণে কারণে বান্দরবানসহ চারটি পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভুমিধ্বসে হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে।।
প্রতি বছরই শুষ্ক মৌসুমে পাহাড় কেটে তার পাদদেশে নতুন নতুন বসতি নির্মাণ করা হচ্ছে। পাহাড়ি জমির মূল্যে সমতলের তুলনায় কম হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষজন পাহাড় কেটে সেখানে বসতি নির্মাণ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করেন। আর বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকায় পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় নিহতদের বেশিরভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ। এ অবস্থায় এবার দ্রুত সময়ের মধ্যে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের অন্যত্র সরিয়ে না নিলে পাহাড় ধসে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
টানা কয়েকদিন ধরে কখনো থেমে আবার অতিভারী বর্ষণের ফলে ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বান্দরবানে পাহাড়ের পাদদেশ। ফলে পাহাড় ধ্বসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঝুকিপূর্ণ স্থানে বসবাসরত মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে যেতে পৌরসভা থেকে করা হচ্ছে মাইকিং। তবুও নিজের ঘর ছেড়ে নিরাপিদ স্থানে অনীহা প্রকাশ করছেন ঝুকিপূর্ণ স্থানে মানুষজন। অন্যদিকে ভারী বর্ষণের কারণে সাঙ্গু নদী ও মাতামুহুরি নদী পানি বাড়ছে। নদীরে পাশের থাকা বসবাসরত মানুষজন আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটে যাচ্ছেন।
বনরুপা,লাঙ্গে পাড়াসহ ঝুকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারী করিম,রোকেয়াসহ বেশ কয়েকজন জানান, ভারী বর্ষণ শুরু হলে পাহাড় ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠে। টানা বৃষ্টি শুরু হলে মাটি গুলো নরম হয়ে যায়। এতে পাহাড় ধ্বসে বাড়িঘর হুমকি মুখে পড়ে যায়। তাছাড়া নিজের ঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে গেলেও আবার সেই ঘরে আসতে হবে। তাই ঝুকিপূর্ণ হলেও বাড়িতে থাকতে হচ্ছে।
জেলা আবাহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সনাতন মন্ডল জানান, বান্দরবানে মঙ্গলবার থেকে প্রায় ৫ দিন মত সকাল থেকে টানা বৃষ্টি শুরু হতে পারে। সেই সাথে বৃষ্টির পাশাপাশি হালকা ঝড়ো বাতাস বইবে। তবে পাহাড়ে যারা ঝুকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন সেখানে পাহাড় ধ্বসে আশঙ্কা রয়েছে।
জেলা প্রশাসক শামিমা আরা রিনি বলেন, ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কিংবা শুরু হলেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌরসভাসহ সকলেই অবহিত করা হয়। আর ঝুকিঁপূর্ণ জায়গায় বসবাস করছে তাদেরকে সরিয়ে নিয়ে আসার জন্য মাইকিং করা হয় এবং আমরা চেষ্টা করি সকলকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে আসতে। আর প্রতিটি উপজেলাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।