“বিদায়”—এই ছোট্ট শব্দটি যেন কাঁপিয়ে দিল পুরো সরকারি বাঙলা কলেজ প্রাঙ্গণ। আবেগে চোখ ভিজে এলো শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার। বিদায় নিচ্ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রিয় মুখ, বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর তানজিদা হোসেন।
দীর্ঘ দেড় দশকেরও বেশি সময় কলেজটিতে শিক্ষকতা করেছেন তিনি। গত মঙ্গলবার (৯ জুলাই) আনুষ্ঠানিকভাবে তার চাকরি জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। তবে এ বিদায় শুধু পেশাগত নয়—এ যেন এক আত্মিক সম্পর্ক, ভালোবাসার অধ্যায়ের শেষ পৃষ্ঠা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক (১৯৮৬) ও স্নাতকোত্তর (১৯৮৭) শেষ করে ১৪তম বিসিএস-এর মাধ্যমে শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি। কর্মজীবনের শুরু বগুড়ার সরকারি মজিবর রহমান ভান্ডারী মহিলা কলেজে। এরপর নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ (২০০১–২০০৪), কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ (২০০৪–২০০৮) হয়ে ২০০৮ সাল থেকে তিনি শিক্ষকতা করেন সরকারি বাঙলা কলেজে। এছাড়াও ১৯৯৪ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একবার আগেও তিনি এই কলেজেই কর্মরত ছিলেন।
ক্লাসের গণ্ডি ছাড়িয়ে তিনি ছিলেন একজন অভিভাবক, একজন পরামর্শদাতা। শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যায় নিজে থেকেই ফোন করে খোঁজ নিতেন। তার বিনয়, মমত্ববোধ ও দায়িত্ববোধ তাকে শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে দিয়েছে।
বিদায় অনুষ্ঠানে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি কেউ। শিক্ষার্থীদের গান চলাকালে কান্নায় ভেঙে পড়েন তানজিদা হোসেন নিজেও। সেই অশ্রু যেন বলে যাচ্ছিল—এই বিদায় শুধুই চাকরি থেকে নয়, প্রিয় একটা জীবনের টুকরো অংশ ছেড়ে যাওয়ার বেদনা।
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কামরুল হাসান বলেন, “জীবনে অনেক কিছু অর্জন করা যায়, কিন্তু মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে পারাটা সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। তানজিদা ম্যাডাম সেই ভালোবাসার স্থান দখল করে নিয়েছেন শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে।”
শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক নাহিদা পারভিন বলেন, “তিনি ছিলেন হাস্যোজ্জ্বল, মানবিক একজন শিক্ষক। তাঁর মতো শিক্ষকরা শিক্ষকতা পেশাকে গর্বিত করেন।”
প্রফেসর তানজিদা হোসেনের রেখে যাওয়া শিক্ষা, মূল্যবোধ ও ভালোবাসা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রতিটি শিক্ষার্থীর পথ দেখাবে আগামী দিনে—এমনটাই প্রত্যাশা বাঙলা কলেজ পরিবারের।