নারী অধিকারকর্মী তাজফিয়া মমতাজের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, হত্যার ফতোয়া এবং তাঁর পরিবারের ওপর সরাসরি হামলার চেষ্টা করা হয়েছে।
গত শুক্রবার (১৮ জুলাই) রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রী এলাকায় তাঁর বাবা-মায়ের বাসায় এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জুমার নামাজ শেষে আনুমানিক দুপুর আড়াইটার দিকে ১০-১২ জনের একটি উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী বিক্ষোভ মিছিল বের করে এবং তাঁকে ‘ইসলামবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে প্রকাশ্যে হত্যার ফতোয়া ঘোষণা করে। পরে তাঁকে না পেয়ে দক্ষিণ বনশ্রীর তাঁর পরিবারের বাসায় গিয়ে হামলার চেষ্টা চালানো হয়।
বাসার কেয়ারটেকার মামুন জানান, দুপুর ৩টার দিকে কয়েকজন ব্যক্তি হঠাৎ এসে বাসার সামনে জড়ো হয়, গেট চাপড়ায় ও হুমকি দেয়। স্থানীয় কিছু মানুষ এগিয়ে এসে সহায়তা করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
তবে এমন গুরুতর ঘটনার পরও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে এখন পর্যন্ত ভুক্তভোগী পরিবার থানায় কোনো অভিযোগ বা মামলা করেনি। নিরাপত্তার ঘাটতির আশঙ্কায় পরিবারটি চরম উদ্বেগে রয়েছে।
তাজফিয়া মমতাজ বর্তমানে পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, আমি এখনো গভীর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। দেশে ফিরতে চাই, কিন্তু প্রতিনিয়ত ভয় কাজ করছে। সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি, আমার এবং পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
তাজফিয়ার সহকর্মী, ‘নারী উন্নয়ন শক্তি’ সংস্থার আইন বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট আলম বলেন, তাজফিয়া দীর্ঘদিন ধরে সমাজের অবহেলিত নারী, যৌনকর্মী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য, অধিকার ও সচেতনতা নিয়ে কাজ করে আসছেন। বিশেষ করে যৌন শিক্ষা, জন্মনিয়ন্ত্রণ ও নিরাপদ যৌনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার কারণে একটি উগ্র গোষ্ঠী তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হয়।
তাজফিয়ার মা বলেন, আমার মেয়ে সবসময় মানুষের কল্যাণে কাজ করেছে। অথচ আমাদের বাসায় এসে যেভাবে হুমকি ও হামলার চেষ্টা চালানো হয়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি সরকারের কাছে আমাদের নিরাপত্তার জন্য জোর অনুরোধ জানাই।”
এই ঘটনার পর দক্ষিণ বনশ্রী এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মানবাধিকারকর্মী ও সচেতন নাগরিক সমাজ অবিলম্বে তাজফিয়া ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।