ঠিকাদারদের দাবি, রাসিক সচিব আড়াই মাস ধরে তাদের বিল-সংক্রান্ত প্রায় ২৫০টি ফাইল অফিসের টেবিলে ফেলে রেখেছেন। এতে অন্তত ১৫ জন ঠিকাদারের প্রায় ১০০ কোটি টাকা আটকে আছে। পাওনা টাকা না মেলায় তাঁরা শ্রমিকদের মজুরি দিতে পারছেন না। কাজও চলমান রাখা যাচ্ছে না।
সমাবেশে ঠিকাদার রেজাউল করিম বলেন, ‘২০ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে আমরা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম, বিল ছাড়ের বিষয়ে উদ্যোগ নিতে। কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি। আলোচনায় বসার প্রয়োজনও মনে করেননি তাঁরা। ফলে আমাদের আর কোনো পথ খোলা নেই, বাধ্য হয়েই সব কাজ বন্ধ করে দিতে হচ্ছে।’
ঠিকাদার সালাহউদ্দিন গাজী বলেন, ‘শহরে এখন চারটি ফ্লাইওভার, ছয়টি কাঁচাবাজার ও বেশ কিছু সড়কের কাজ চলছে। মাসিক বিলের ভিত্তিতে আমরা এই কাজগুলো করছি। কিন্তু নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কোনো বিলই ছাড়েনি। শ্রমিকেরা এখন টাকার জন্য আমাদের বাড়ির সামনে অপেক্ষা করছে। আমরা বাড়ি থেকে বের হতেও পারছি না। তাই কাজ বন্ধ করে রাখা ছাড়া উপায় নেই।’
ঠিকাদার ইঞ্জিনিয়ার শাকিলুর রহমান শাকিল বলেন, ‘টাকার অভাবে ঠিকাদারেরা দ্রুত কাজ শেষ করতে পারছেন না। এতে রাস্তাগুলো দীর্ঘদিন ধরে খোঁড়া অবস্থায় পড়ে থাকছে, ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। শহরে বাড়ছে ধুলাবালু ও দূষণ। রাজশাহীকে গ্রিনসিটি বলা হলেও এই অবস্থায় তা থাকবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।’
শাকিলুর রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আমলে আমাদের ওপর অন্যায় করা হয়েছে, এখন চলছে নব্য কায়দার দমন। সিটি করপোরেশন আমাদের ‘ভ্যালুলেস’ হিসেবে বিবেচনা করছে। সচিবের কাছে গেলে ঠিকাদার অ্যালাউ না। কয়েক হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর পরিবার আমাদের ওপর নির্ভরশীল, তারাও আজ চরম দুর্দশায়।’
ঠিকাদার ও বিএনপি নেতা ইয়াহিয়া খান মিলু বলেন, ‘সচিব রুমানা আফরোজ আড়াই মাস ধরে একটি বিলও ছাড়েননি। এর ফলে জনগণের দুর্ভোগ বাড়ছে। তিনি নিয়মিত অফিস করেন না, বেশির ভাগ সময় রাতের বেলা আসেন। তিনি আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে রাজনৈতিক উদ্দেশে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছেন।’
সমাবেশ শেষে ওই এলাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ বন্ধের ঘোষণা দেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি রাসেল ইসলাম। তাঁর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে অন্য ঠিকাদাররাও নগরজুড়ে চলমান সব উন্নয়নকাজ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন।
এ ছাড়া বকেয়া বিলের দাবিতে আগামী রোববার (২৭ জুলাই) শ্রমিক ও সর্দারদের নিয়ে নগর ভবনের সামনে সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়। সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন ঠিকাদার হাফিজুল ইসলাম, বেলাল খান প্রমুখ।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করলে রাসিক সচিব রুমানা আফরোজ মোবাইল ফোনে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
তবে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ঠিকাদারদের ২৫০টি ফাইল আটকে আছে—এমন কোনো তথ্য আমার জানা নেই। বিল আটকে থাকলে নিশ্চয় তাঁরা আমাদের জানাতেন। কিন্তু আমাকে তো কেউ কিছু বলেননি।’