বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক-কে গ্রেফতার করে এতো দিন পর একটা কাজের মতো কাজ করেছে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার। যে গণতন্ত্র ধ্বংশ করেছে, ন্যায় বিচারও ধ্বংশ করেছে, তত্তাবধায়ক ব্যবস্থা উঠিয়ে দিয়েছে। যে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় জেল খাটিয়েছে।
এতো বড় দুর্নীতবাজ হতে পারেনা। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। গোটা দেশকে শেখ হাসিনার মতো এক রক্তপিপাসু রাক্ষুসির হাতে একেবারে উপহার হিসেবে তুলে দিয়েছেন এই খায়রুল হক। কেন তুলে দিয়েছে? যে ৩-৪ জন তার উপরের সিনিয়র জজকে ডিঙিয়ে খায়রুল হককে প্রধান বিচারপতি বসিয়েছে শেখ হাসিনা। একারণে উপহার হিসেবে দিয়েছেন এক ভয়ঙ্কর ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনাকে। তার অনেক আগেই গ্রেফতার হওয়া উচিত ছিল। যাই হোক তার পরও একটু দেড়ি হলেও তাঁকে গ্রেফতার করায় ধন্যবাদ ড. মোহাম্মদ ইউনুস সাহেবকে। এই ধরণের সত্যিকার অর্থেই যারা দুর্নীতিবাজ তাদের বিচার করতে হবে। যাতে আর কোনদিন নতুন করে গণতন্ত্র বিরোধী কোন ধরণের আইন প্রণয়ন করতে না পারে।
বৃহস্পতিবার(২৪ জুলাই) দুপুরে মৌলভীবাজারের এম সাইফুর রহমান অডিটোরিয়ামে জেলা বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ফ্যাসিবাদ আমলে কারা নির্যাতিত বিএনপির কেন্দ্রীয় এই নেতা।
দেশে গণতন্ত্র বিরোধী সর্বনাশা শক্তির পূণরুত্থান ঘটতে পারে বলে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারকে সতর্ক করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, এ জন্য যা কিছু করা দরকার এই মুহুর্তেই করতে হবে। তবে এটা যদি লম্বা সময় নেন নানা অজুহাতে। তাহলে কিন্তু ভাল ফল পাওয়া যাবেনা,অনেক দিন তো হয়ে গেলো। একবছর পার হতে চলেছে। সামনে আরো কয়েকমাস বাকি আছে। এর মধ্যে এই প্রয়োজনীয় সংস্কারটুকু করা সম্ভব হতো। কিন্তু আমরা শুনি সরকারের মধ্যে অনেক উপদেষ্টা রয়েছেন তারা না কী প্রলম্বিত করতে চায়। তারা তাদের লোকজনকে দিয়ে এটা বলাচ্ছে ফেসবুক,সোস্যাল মিডিয়া, সামাজিক গণমাধ্যমে দিচ্ছেন তিন বছর থাকা উচিত এই সরকারের ৫ বছর থাকা উচিত এগুলো বলাচ্ছেন বিভিন্ন ভাবে নানা কায়দায়। তারা বলাচ্ছেন এটা আমরা জানি। এটা বলে গণতন্ত্রের ক্ষতি করছেন। গণতন্ত্রের যে ইমারত নির্মাণ করা হবে, সে ইমারতের ফাউন্ডেশন তৈরি হওয়াতো মুশকিল।
এখন যে কাজগুলি হচ্ছে সেটা ফাউন্ডেশ তৈরি হচ্ছে। এবং অবাধ সুষ্টু নির্বাচন হলে আরও দৃর ফাউন্ডেশন তৈরি হবে। এরপর জনগণের দাবি, সকলের দাবির উপর ভিত্তি করে সংস্কার চলতে থাকবে। যেখানে ত্রæটি দেখা যাবে সেখানেই সংস্কার হবে। এটাতো দীর্ঘদিনের কোন মিনারনা। কুতুব মিনারের মতো মিনার না। যে সেই ৭শ ৮শ বছর আগে কুতুব উদ্দিন আইয়ুব দিল্লিতে কুতুব মিনার করেছেন। এটা ওইভাবেই চলছে,এর কোন পরিবর্তন নাই। সংবিধানও কোন কুতুব মিনার না। সংবিধান হচ্ছে একটি ডায়নামিক ডকুমেন্ট।
মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. ফয়জুল করিম ময়ূন এর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) আলহাজ্ব জি কে গউছ, সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি এম নাসের রহমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও দপ্তর সংযুক্ত মো. তারিকুল আলম তেনজিং,দলটির প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রমের টিম প্রধান ও জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সৈয়দ আশরাফুল মজিদ খোকন এবং কমিটির সদস্য কামরুজ্জামান
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তব্যে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত বলেন, সারা দেশে এককোটি সদস্য ফরমের টার্গেট করা হয়েছে। নতুন সদস্য যারা হবেন তারা যেন বিএনপির ১৯ দফায় বিশ্বাস করে। তারা যেন বেগম খালেদা জিয়ার ৩১ দফায় বিশ্বাস করে। মাদকসেবি, দুর্বীত্ত ও গুন্ডাদের যেন দলে নেয়া না হয়। কারণ আমরা বিএনপিকে পরিশুদ্ধ দল হিসেবে দেখতে চাই।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ভিপি মিজানুর রহমান মিজান, আহবায়ক কমিটির সদস্য মো: ফখরুল ইসলাম. মৌলভী আব্দুল ওয়ালী সিদ্দিকী, মোয়াজ্জেম হোসেন মাতুক, বকশী মিছবাহ উর রহমান, এডভোকেট আবেদ রাজা, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মুজিবুর রহমান মজনু, সাধারণ সম্পাদক মারুফ আহমেদ,সাংগঠনিক সম্পাদক কাজল মাহমুদ সহ জেলার ৭ উপজেলা এবং ৫ পৌরসভা বিএনপির সিনিয়র নেতারা।
এদিকে বক্তব্য দেয়ার সময় অনুষ্ঠানের সভাপতি ও জেলা বিএনপির আহবায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন বুকে ব্যথা অনুভব করলে সাথে সাথে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। পরবর্তীতে কিছুটা সুস্থ হলে ফিরে যান নিজ বাসায়। এর পর সেভান থেকে মুঠেফোনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের অতিথি ও দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে দোয়া চেয়ে জানান তিনি কিছুটা সুস্থ আছেন।