× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

জবিতে শিক্ষক সংকটে ৯ বিভাগ ও ২ ইনস্টিটিউট

জবি প্রতিনিধি।

২৭ জুলাই ২০২৫, ১৭:৫৬ পিএম

ছবিঃ সংগৃহীত।

বিশ্ববিদ্যালয় মানে শুধু শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রম শেষ করা নয়, গবেষণা, সাংস্কৃতিক চর্চা, উদ্ভাবনী চিন্তা বিকাশেরও অন্যতম ক্ষেত্র। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বর্তমান চিত্র একটু ভিন্ন। শিক্ষার্থীদের পাঠ সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষকই নেই অনেক বিভাগে। গবেষণা কিংবা অন্য সহপাঠ্য কার্যক্রম তো আরও দূরে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৯টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউটে শিক্ষক সংকট প্রকট। বজায় নেই আন্তর্জাতিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত। যেসব শিক্ষক আছেন তাদের নিতে হচ্ছে অতিরিক্ত ক্লাস। ফলে তারা গবেষণায় সময় দেওয়া কিংবা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মানসম্মত একাডেমিক সংযোগ তৈরি করতে পারছেন না। সেশন জট থাকায় প্রতিটি বিভাগে ছয় থেকে সাতটি ব্যাচের শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এতে চাপ আরও বাড়ছে।

আন্তর্জাতিকভাবে নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক থাকা আদর্শ ধরলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিভাগে এই অনুপাত আঁতকে ওঠার মতো।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজ, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, নাট্যকলা, ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন, চারুকলা, আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগে শিক্ষক সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। অনেক বিভাগে পূর্ণ অধ্যাপকও নেই। কোনো কোনো বিভাগে একাধিক শিক্ষক আছেন শিক্ষাছুটিতে।

আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট:

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট। এই ইনস্টিটিউটে মাত্র ছয়জন শিক্ষক, বিপরীতে চলমান ছয়টি শিক্ষাবর্ষে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫০, শিক্ষক ছয়জন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৪১। একজন অধ্যাপক, দুজন সহযোগী অধ্যাপক, দুজন সহকারী অধ্যাপক ও একজন প্রভাষক এ বিভাগে।

আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, ‘শিক্ষক সংকট কাটাতে আমরা শিক্ষক নিয়োগের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। বিভাগীয় সভার মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি চূড়ান্ত করে ইতোমধ্যে উপাচার্য মহোদয়ের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এখন শুধু রেজিস্ট্রার মহোদয়ের অনুমোদনের অপেক্ষা। যে কোনো মুহূর্তে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হতে পারে। বর্তমানে বিভাগে পাঁচটি ব্যাচ একযোগে চালু। অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ সময়ের দাবি।’

এ বিভাগের শিক্ষক ও সাবেক পরিচালক খন্দকার মুন্তাসির বলেন, ‘আমাদের শিক্ষক সংকট প্রবল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কয়েকবার জানিয়েও কোনো সুরাহা হচ্ছে না।’

প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ:

২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করে প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ। কাগজে-কলমে বিভাগটিতে ৯ জন শিক্ষক থাকলেও বর্তমানে একাডেমিক কার্যক্রমে যুক্ত সাতজন। বাকি দুজন শিক্ষাছুটিতে। এর মধ্যে অধ্যাপক একজন। বিপরীতে সাতটি শিক্ষাবর্ষে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৪৫। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:২৭।

নাট্যকলা বিভাগ:

এদিকে একই রকম সংকট রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে। প্রতিষ্ঠার ১১ বছরেও বিভাগে নেই কোনো পূর্ণ অধ্যাপক। মাত্র সাতজন শিক্ষকের মধ্যে একজন শিক্ষাছুটিতে, যার বিপরীতে চলমান সাতটি শিক্ষাবর্ষে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৪৫। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৩৫।

ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগ:

ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগ চলছে চারজন শিক্ষক দিয়ে। সাতটি শিক্ষাবর্ষে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৪৫। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৬১। এর মধ্যে একজন আছেন শিক্ষাছুটিতে। মাত্র তিনজন শিক্ষকের মাধ্যমে পাঠদান চলছে বিভাগটিতে।

ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শাহ মো. নিসতার জাহান কবীর বলেন, ‘আসলে একটি পূর্ণাঙ্গ বিভাগ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য মাত্র চারজন শিক্ষক যথেষ্ট নয়। বিশেষ করে যখন সেই বিভাগে পাঁচটি ব্যাচ একসঙ্গে চালু রয়েছে। কেবল খণ্ডকালীন শিক্ষক এনে বিভাগের মৌলিক সংকট কাটানো সম্ভব নয়। বর্তমানে বিভাগের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। এ অবস্থায় আমরা দ্রুত শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে উপাচার্য মহোদয়ের কাছে লিখিত আবেদন জমা দিয়েছি।’

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ:

২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ। দুজন অধ্যাপকসহ কাগজে-কলমে এ বিভাগে শিক্ষক আটজন। বিপরীতে ছয়টি শিক্ষাবর্ষে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫০। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:১৯। তবে চারজন শিক্ষক শিক্ষাছুটিতে থাকায় একাডেমিক কার্যক্রমে সরাসরি যুক্ত মাত্র চারজন শিক্ষক।

আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগ:

আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগে মাত্র আটজন শিক্ষক। প্রায় তিনশ শিক্ষার্থী বিভাগটিতে। বিপরীতে চলমান ছয়টি শিক্ষাবর্ষে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৬০। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৪৫। আট শিক্ষকের মধ্যে দুজন শিক্ষাছুটিতে। অধ্যাপক নেই একজনও। ফলে বেশি ক্লাস নিতে হচ্ছে কর্মরত শিক্ষকদের। পাশাপাশি অতিথি শিক্ষকের মাধ্যমে শিক্ষক সংকট পূরণের চেষ্টা চলছে বিভাগটিতে।

শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট:

শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে শিক্ষক আটজন, যার মধ্যে অধ্যাপক একজন। বিপরীতে চলমান ছয়টি শিক্ষাবর্ষে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৪০। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৩০। একজন শিক্ষক শিক্ষাছুটিতে থাকায় বর্তমান সরাসরি একাডেমিক কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট সাতজন শিক্ষক।

চারুকলা অনুষদ:

নতুন চালু হওয়া চারুকলা অনুষদের তিন বিভাগেও রয়েছে শিক্ষক সংকট। থ্রিডি আর্ট বিভাগে মাত্র তিনজন শিক্ষক, প্রিন্টমেকিং বিভাগে চারজন, এর মধ্যে একজন শিক্ষক বর্তমানে শিক্ষাছুটিতে। এছাড়া ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগে আছেন মাত্র তিনজন পূর্ণকালীন শিক্ষক। অতিরিক্তভাবে দুজন খণ্ডকালীন শিক্ষক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরাই। একদিকে তারা পর্যাপ্ত সংখ্যক ক্লাস পাচ্ছেন না, অন্যদিকে শিক্ষকদের অতিরিক্ত চাপের কারণে সহশিক্ষা বা প্রকল্পভিত্তিক কাজের সুযোগও সীমিত। শিক্ষকরাও গবেষণায় পর্যাপ্ত মনোনিবেশ করতে পারছি না। মানসম্পন্ন শিক্ষাদানও ব্যাহত হচ্ছে।’

সংকট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘শিক্ষক সংকটের বিষয়টি আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। বেশ কিছু শিক্ষক বর্তমানে শিক্ষাছুটিতে থাকায় সাময়িক সংকট তৈরি হয়েছে। তবে আমরা এ সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিচ্ছি।’

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.