× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

দুর্নীতি-অনিয়ম ঠেকিয়ে স্বচ্ছতার দৃষ্টান্ত রেখে গেলেন ইউএনও রুলি বিশ্বাস

কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি।

২৯ জুলাই ২০২৫, ১৬:১৭ পিএম

ছবিঃ সংগৃহীত।

খুলনার কয়রা উপজেলার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনতে, প্রশাসনে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং দুর্নীতি-অনিয়ম ঠেকাতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে গেলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলি বিশ্বাস।

সততা, নিষ্ঠা ও জনসেবায় আত্মনিয়োগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে সম্প্রতি তিনি অন্যত্র বদলি হয়েছেন। তাঁর এই বদলি কয়রাবাসীর মাঝে রেখে গেছে প্রশংসা, কৃতজ্ঞতা ও কিছুটা হতাশাও, কারণ অনেকে মনে করেন, এই দক্ষ ও সৎ কর্মকর্তার প্রয়োজন ছিল আরও কিছুদিন।

রুলি বিশ্বাসের দায়িত্বকালে কয়রায় প্রকল্প বাস্তবায়নের ধরন বদলে যায়। প্রশাসনিক উৎসাহ, সময়মতো নজরদারি এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কারণে প্রকল্পগুলোতে আসে স্বচ্ছতা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কয়রার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ও রাজস্ব উন্নয়ন সহায়তা প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ছিল এক কোটি ৮৩ লাখ ৪১ হাজার টাকা। এই অর্থে ৫৭টি উন্নয়ন স্কিম বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়, যার মধ্যে ছিল বিদ্যালয়ের সংস্কার, রাস্তা উন্নয়ন, পুল নির্মাণ, কৃষি সহায়তা ও বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজ।

প্রকল্পগুলোর কোনোটি দরপত্রের মাধ্যমে, কোনোটি কোটেশনের ভিত্তিতে আবার কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় পিআইসি অর্থাৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইউএনও রুলি বিশ্বাস সরাসরি যুক্ত ছিলেন পরিকল্পনা ও তদারকিতে। কোথাও সামান্য অনিয়ম বা গাফিলতির প্রমাণ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

একজন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের নতুন বেঞ্চ ও পাঠ্য উপকরণ যেভাবে এসেছে, সেটি সঠিক সময়ে ও মানসম্মতভাবে এসেছে। কোনো তদবির করতে হয়নি। ইউএনও ম্যাডাম নিজেই সব তদারকি করেছেন।’

নারী উন্নয়ন, শিশু সুরক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে বরাদ্দকৃত সরকারি সহায়তা যেন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা মহলের হাতে সীমাবদ্ধ না থাকে, সেটি নিশ্চিত করেছেন রুলি বিশ্বাস। নারীদের জন্য বিতরণকৃত সেলাই মেশিন, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুলব্যাগ, খেলাধুলার সামগ্রী কিংবা বিশেষ প্রণোদনা—সবই নির্দিষ্ট তালিকা অনুযায়ী প্রকৃত উপকারভোগীর হাতে পৌঁছেছে।

উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত পদসমূহ দীর্ঘদিন শূন্য থাকার পরও তিনি প্রশাসনিক ভারসাম্য ধরে রেখেছেন দক্ষ হাতে। অনেক সময় জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিতিতে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। কিন্তু রুলি বিশ্বাস নিজেই নেতৃত্ব দিয়েছেন বিভিন্ন সভা, পরিদর্শন ও প্রকল্প বাস্তবায়নে। জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করে গেছেন, আবার তাঁদের অনুপস্থিতিতেও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি।

মহারাজপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মাওঃ মাছুদুর রহমান বলেন, ‘তিনি ছিলেন কঠোর, কিন্তু মানবিক। কোথাও পক্ষপাতিত্ব ছিল না। সবার সঙ্গে সমান আচরণ করতেন। সরকারি টাকায় যেন অপচয় না হয়, সেই বিষয়টি সব সময় নজরে রাখতেন।’

রুলি বিশ্বাসের বদলির খবরে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক সবাই তাঁর দায়িত্বপালনের প্রশংসা করেছেন। অনেকেই মনে করেন, এমন সৎ, যোগ্য এবং দায়িত্বশীল কর্মকর্তার আরও কিছুদিন কয়রায় থাকা দরকার ছিল।

স্থানীয় সাংবাদিক আবির হোসেন বলেন, ‘মাঠপর্যায়ের অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা কেবল অফিসকেন্দ্রিক থাকেন। কিন্তু রুলি বিশ্বাস মাঠে ছিলেন। নিজে গিয়ে কাজ দেখেছেন। মানুষের কথা শুনেছেন। এমন কর্মকর্তাই আদর্শ।’

তাঁর বদলি সত্ত্বেও কয়রার মানুষ আশা করছেন, ভবিষ্যতেও তিনি উচ্চপর্যায়ে থেকে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে যাবেন। কারণ একটি উন্নয়নশীল অঞ্চলের অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন এমনই সৎ, মানবিক ও দূরদর্শী নেতৃত্ব।

রুলি বিশ্বাস যেমন প্রশাসনিক দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন, তেমনি জনসেবার এক মানবিক চেহারাও। বিশেষ কোনো শ্রেণি নয়, সমগ্র জনগণের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়েই তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর কাজ অনেকের কাছে হয়ে উঠেছে অনুপ্রেরণার উৎস। কয়রাবাসী মনে করেন, রুলি বিশ্বাসের মতো কর্মকর্তারাই বদলে দিতে পারেন দেশের মাঠপর্যায়ের প্রশাসন ও উন্নয়নের চিত্র।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.