× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

হিন্দুপল্লীতে হামলার ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসনের বক্তব্য

বাড়ি ফিরেছেন অধিকাংশ পরিবার, ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামত করে দিচ্ছে প্রশাসন

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর ব্যুরো

২৯ জুলাই ২০২৫, ১৭:৪৮ পিএম

ছবিঃ সংগৃহীত।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক কলেজ শিক্ষার্থীর দেয়া ধর্মীয় উস্কানিমূলক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার একটি হিন্দুপল্লীতে দুদিন আগে হামলার ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার পর বেশকিছু পরিবার আতঙ্কিত হয়ে বাড়িঘরের জিনিসপত্র বিভিন্ন স্থানে ও আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে সরিয়ে নেন। আবার কেউ কেউ ভয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেন। তবে গতকাল সোমবার বিকেল থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে উপজেলার বেতগাড়ী ইউনিয়নের আলদাতপুর ছয়আনি বালাপাড়া হিন্দুপল্লীতে। ভয়ভীতি ও হামলার আতঙ্ক কেটে যাওয়াতে পরিবারগুলো বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন।

এদিকে মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সকাল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামত করে দেয়ার কাজ শুরু করেছেন উপজেলা প্রশাসন। 

এর আগে, সোমবার ক্ষতিগ্রস্থ হিন্দুপল্লীর পরিবারের সার্বিক অবস্থা পরিদর্শন করেন জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ফেসবুক পোস্টে এ তথ্য জানান। 

রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ২২টি পরিবারের মধ্যে ১৯টি পরিবার বর্তমানে তাদের বাড়িতেই আছে। ধর্ম নিয়ে কটুক্তিকারী রঞ্জন কুমার রায় এবং তার চাচার পরিবারসহ তিনটি পরিবার পার্শ্ববর্তী গ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে রয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় গ্রামটিতে স্বস্তি ফিরেছে। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নিয়োজিত রয়েছে।

তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের বাড়িঘর মেরামত করার কাজ শুরু করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসব কাজ তদারকি করছেন।  

এদিকে রংপুর জেলার পুলিশ সুপার মোঃ আবু সাইম জানান, হিন্দু পরিবারগুলোর ওপর হামলার ঘটনায় মোট ১২টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই বাড়িগুলোতে ২২টি পরিবার বসবাস করতো। 

তিনি আরও জানান, রঞ্জন আটক হওয়ার পর থেকেই তার বাবা, দাদা এবং চাচার পরিবার বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আছেন। অন্যান্য ১৯টি পরিবারের সকল পুরুষ সদস্য তাদের নিজ নিজ বাড়িতেই আছেন। ঘরবাড়ি ভাঙা থাকায় কিছু পরিবার নিজেদের জিনিসপত্র অন্যত্র নিয়ে যান। এই হামলার ঘটনায় জড়িতদের সনাক্তে কাজ শুরু হয়েছে। যারা অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বর্তমানে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ হিন্দু পল্লীতে সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনতে সম্মিলিত ভাবে কাজ করছেন। মঙ্গলবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামত কাজ তদারকি করেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে। গঙ্গাচড়া উপজেলা বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষে গুরুত্ব দিয়েছে। পাশাপাশি যেকোনো ধরনের গুজবের ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, এটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উস্কানি ছিল। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকবো। এ ঘটনায় কেউ দেশ ছাড়েনি, এলাকাও ছাড়েনি। এ ধরণের গুজবে কান না দেয়ার অনুরোধ করছি।

তিনি আরও বলেন, সবমিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ২২ পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামত করে দিতে ২২ বান্ডিল টিন, প্রয়োজনীয় কাঠ ও বাঁশ দেয়ার পাশাপাশি তাদের জন্য খাবার, রান্নার চুলা ও টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত ও স্বাভাবিক হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। যেই কিশোরের বিরুদ্ধে ধর্মীয় উস্কানি ছড়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে, তার পরিবারের সদস্যরা ছাড়া এখন সবাই নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন।

উল্লেখ্য, গত শনিবার (২৬ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে রঞ্জন কুমার রায় নামে এক শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় পাশের এলাকার লোকজন এসে ওই শিক্ষার্থীর বাড়ি মনে করে অন্য আরেকজনের বাড়িতে ভাঙচুর চালান। পরে আরেক দফা হিন্দুপল্লীতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।

এতে ১৮টির মতো পরিবারের ঘরবাড়ি তছনছ হয়। আতঙ্কে অনেক পরিবার বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের। হামলা ঠেকাতে গিয়ে এক পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ও পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়।

এদিকে আটক কিশোরকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রোববার (২৭ জুলাই) আদালতের মাধ্যমে কিশোর পুনর্বাসনকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ভাঙচুরের ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি।

এ বিষয়ে গঙ্গাচড়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল এমরান বলেন, যদি তাদের পক্ষ থেকে কেউ অভিযোগ করে, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব। আমরা প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছি। পাশাপাশি ঘটনাস্থলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হবে তারা জানিয়েছে।  

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.