১২ বছর আগে নীলফামারীর রামগঞ্জে ঘটে যাওয়া এক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড আবারও উঠে এসেছে আলোচনায়। এবার সেই সত্য উদঘাটনের সম্ভাবনায় কবর খুঁড়ে উত্তোলন করা হলো নিহত জামায়াত কর্মী আবু বকর সিদ্দিকের মরদেহ।
ঘটনা সুত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়। এ রাতে জেলা সদরের লক্ষ্মীচাপ ও পলাশবাড়ী গ্রামে অগ্নিসংযোগ ও হামলা করেন জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীরা। ১৪ ডিসেম্বর সদর আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন শেষে জেলা শহরে ফেরার পথে বিকেলে টুপামারী ইউনিয়নের রামগঞ্জ বাজারে জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হন।
জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে তখন রাজনৈতিক অস্থিরতা। জামায়াতের ডাকা হরতাল ও আন্দোলন ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নীলফামারীর রামগঞ্জ এলাকা। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। সেই সময় সংঘর্ষে নিহত হন স্থানীয় জামায়াতকর্মী আবু বকর সিদ্দিকসহ পাঁচজন।
নিহতের পরিবার দাবি করে, আওয়ামী লীগের স্থানীয় কর্মীরা তাকে পরিকল্পিতভাবে পিটিয়ে, এরপর গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা করে। কিন্তু প্রশাসনের তৎকালীন অবস্থান ছিল ভিন্ন—তারা এটিকে ‘সাধারণ সংঘর্ষে প্রাণহানি’ বলে দাবি করেছিল।
একটি হত্যা মামলা হলেও, প্রায় এক দশক কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। তদন্ত এক পর্যায়ে থেমে যায়, এবং মামলাটি ধামাচাপা পড়ে যায় বলেই দাবি করে পরিবার।
২০২৪ সালের শেষ দিকে নিহতের ভাই আদালতে পুনঃতদন্তের আবেদন জানান। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ দেয়। আজ বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) পুলিশ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সিআইডি, এবং ফরেনসিক টিমের উপস্থিতিতে মরদেহ উত্তোলন করা হয়।
এ সময় জামায়াত ও বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মী ছাড়াও গণমাধ্যমের সাংবাদিকরাও উপস্থিত ছিলেন।
নিহতের ছেলে লিটন মিয়া বলেন, “আমার বাবাকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়েছে। এখন অন্তত চাই প্রকৃত সত্য প্রকাশ পাক।”
সিআইডির ফরেনসিক ময়নাতদন্ত শেষে প্রতিবেদন আদালতে জমা দিলে, মামলাটি পুনরায় সচল হবে বলে আশা করছেন নিহতের পরিবার।
আইনি বিশ্লেষকরা বলছেন, “ফরেনসিক রিপোর্ট যদি পূর্বের তদন্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে নতুন তদন্তে অভিযুক্তদের শনাক্ত করার পথ উন্মুক্ত হবে।”