সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রোববার (৩ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ সূচনা বক্তব্য শুরু হয়। চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম তার বক্তব্য দেন বিচারক প্যানেলের সামনে। শুনানির শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ট্রাইব্যুনালের সামনে বলেছেন, শেখ হাসিনা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মিথ্যাবাদী স্বৈরাচার। মিথ্যার ওপর পিএইচডি করতে হলে শেখ হাসিনার কাছ থেকে শিখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর সব স্বৈরাচারের সমিতি হয়, শেখ হাসিনা হবেন তার সভাপতি। দেশের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তার জন্য এই স্বৈরাচার ও তার সহযোগীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। সভায় তার বক্তব্যে তিনি অন্যান্য স্বৈরশাসকদের পরিণতির উদাহরণও তুলে ধরেন।
এই মামলায় অন্য দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান দু’জনই পলাতক রয়েছেন এবং তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন আদালতে যুক্তি উপস্থাপন করছেন। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বর্তমানে কারাগারে আছেন এবং তিনি আদালতে উপস্থিত হয়ে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন। তিনি বলেন, জুলাই আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার দায় আমি স্বীকার করছি; আমি দোষী, এবং আদালতের সহযোগিতায় ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে চান।
গত ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে। অভিযোগ গঠনের পূর্বে আসামিদের অব্যাহতির আবেদন করা হলেও ক্রমান্বয়ে তা খারিজ করা হয়। ১ জুন পাঁচটি মানবতাবিরোধী অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল এবং এরপর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের নামে।
আজকের বিচার কার্যক্রম আদালতের অনুকূলে এবং ট্রাইব্যুনালের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে। এই চেষ্টা বিচারিক স্বচ্ছতা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
এই মামলায় পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে আন্দোলন দমনে হত্যাযজ্ঞ চালানো, রাজকীয় উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া, রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করার নির্দেশ দেওয়া, নিরীহ মানুষের ওপর গুলি ও আগুন দিয়ে হত্যার মতো অপরাধ। মামলা এখন প্রক্রিয়ার সূচনায়, এবং সাক্ষ্য গ্রহণসহ এরপরের কার্যক্রম নির্ধারিত হবে পরবর্তী দিনগুলোতে।