× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

রানীক্ষেত রোগ

রাবিতে প্রথমবারের মতো কার্যকর থার্মোস্টেবল ভ্যাকসিন উৎপাদন

জুবাইর হোসেন, রাবি প্রতিনিধি।

০৩ আগস্ট ২০২৫, ১৬:৪০ পিএম

ছবিঃ সংগৃহীত।

মুরগির সংক্রামক রোগের মধ্যে রানীক্ষেত সবচেয়ে মারাত্মক। এটি একটি ভাইরাসজনিত ছোঁয়াচে রোগ, যা অল্প সময়ের মধ্যে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং এতে মুরগির মৃত্যুহার অনেক বেশি।

এ কারণে খামারিদের জন্য রোগটি বেশ আতঙ্কের। সরকারিভাবে প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও কিছু বেসরকারি কোম্পানি রোগের ভ্যাকসিন উৎপাদন করে। তবে সেগুলোর কার্যকারিতা নির্ভর করে কোল্ড চেইনের ওপর যেখানে উৎপাদন থেকে মাঠপর্যায়ে পৌঁছানো পর্যন্ত ২-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বজায় রাখা বাধ্যতামূলক।

তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) প্রথমবারের মতো উদ্ভাবন হয়েছে কার্যকর থার্মোস্টেবল (তাপমাত্রা সহনশীল) ভ্যাকসিন, যা আই-টু স্ট্রেইন দিয়ে তৈরি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা প্রকল্পটির সার্বিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছেন এবং ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় উৎপাদিত ভ্যাকসিনটির পর্যাপ্ত কার্যকারিতা পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শশি আহমেদের নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণায় এ সাফল্য অর্জন হয়েছে। এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের আই-টু এনডি ভ্যাকসিন ল্যাবরেটরিতে।

নিউক্যাসল ডিজিজ (এনডি), যা বাংলাদেশে রানীক্ষেত রোগ নামে পরিচিত। এটি ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ, যা প্যারামিক্সো ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয়। এ রোগ মুরগি, কবুতর, টার্কি ও অন্যান্য পাখির মাঝে বেশি দেখা যায়। সবুজ রঙের পায়খানা, পাখনা ঝুলে যাওয়া, পশম এলোমেলো হওয়া, ঝিম ধরে বসে থাকা, খাওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া, ঘাড় বাঁকা করে মাথা পেছনের দিকে রাখা ইত্যাদি এ রোগের সাধারণ লক্ষণ।

ভাইরাসটি মুরগির দেহে ঢুকে ১৫ দিন পর্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে এবং পরবর্তী সময়ে লক্ষণ প্রকাশ পায়। এটি পানি, খাবার, বাতাস, এমনকি মানুষের মাধ্যমে এক মুরগি থেকে অন্য মুরগিতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। একটি খামারে এ রোগ ছড়িয়ে পড়লে অধিকাংশ মুরগিই মারা যায়।

গবেষকরা বলছেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনটি থার্মোস্টেবল, অর্থাৎ এটি অধিক তাপমাত্রা সহনশীল। ভ্যাকসিনটি কোল্ড-চেইন ব্যাহত হলেও ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সাত দিন পর্যন্ত কার্যকারিতা বজায় রাখতে পারে। ফলে দেশের বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অঞ্চল, প্রান্তিক খামারি ও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ভ্যাকসিন সহজেই কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা যাবে।

২০২৪ সাল থেকে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে গবেষণার কাজ শুরু হয়, যা ২০২৭ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলবে। বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে সাড়ে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটি পরিচালিত হচ্ছে। এতে সরকারি অর্থায়নের পাশাপাশি হেইফার ইন্টারন্যাশনাল (আমেরিকা), কায়িমা ফাউন্ডেশন (অস্ট্রেলিয়া, ব্রিসবেন) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুদানও রয়েছে।

এ বিষয়ে প্রধান গবেষক ও রাবির সহযোগী অধ্যাপক শশি আহমেদ বলেন, ‘ভ্যাকসিন মুরগির শরীরে রানীক্ষেত রোগের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে প্রতিরোধক্ষমতা সৃষ্টি করবে। এটি চোখে ফোঁটা ও পানিতে মিশিয়ে বা খাদ্যের সঙ্গে প্রয়োগ করা যাবে। প্রকল্পটি রাজশাহী ও নাটোর জেলার ছয়টি উপজেলায় পাঁচ হাজার পরিবারের মধ্যে পরিচালিত হচ্ছে।

দেশী মুরগির জন্য একটি গবেষণালব্ধ সফল মডেল তৈরি করাই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। সফল মডেল প্রণয়ন করে তা সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে সারাদেশে প্রয়োগ করা গেলে একদিকে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে, অন্যদিকে গ্রামীণ নারীদের আত্মনির্ভরশীল করাও সম্ভব হবে।’

ভ্যাকসিনটির উদ্ভাবক ও প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক শশি জানান, ‘৩১ জুলাই থেকে ভ্যাকসিনটির মাঠপর্যায়ের গবেষণা শুরু হয়েছে এবং দ্রুতই এর পূর্ণাঙ্গ কার্যকারিতা সম্পর্কে ফলাফল পাওয়া যাবে। যদি কার্যকারিতা সন্তোষজনক হয়, তবে প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা সরকারিভাবে ভ্যাকসিনটি উৎপাদনের পরিকল্পনা করছেন। এটি সফলভাবে প্রয়োগ করা গেলে দেশের পোলট্রি শিল্প এবং দেশী মুরগি উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।’

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.