× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

সকালেও দিল্লি আঁচ করতে পারেনি, ভারতে আশ্রয় নেবেন হাসিনা

ডেস্ক রিপোর্ট।

০৫ আগস্ট ২০২৫, ১৬:৪৪ পিএম

ছবি: সংগৃহীত

দিনটি ছিল ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সোমবার। এদিন ভারতে পার্লামেন্টের বর্ষা অধিবেশনের শেষ সপ্তাহের প্রথম দিন ছিল। অধিবেশনে অনেকগুলো জরুরি বিল তখনো পাস করানোর বাকি, অথচ হাতে সময় খুব কম। কাজেই ট্রেজারি বেঞ্চের বেশ ব্যস্ততা ছিল। রাজধানীতে নেতা–মন্ত্রীদের দৌড়াদৌড়ি চলছিল যথারীতি।

এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সবচেয়ে আস্থাভাজন তিন সহযোগী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে কিন্তু সতর্ক নজর রাখতে হচ্ছিল একটি প্রতিবেশী দেশের খুব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাপ্রবাহের দিকে।

সেদিন সকাল থেকেই বাংলাদেশে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি দিয়ে লাখ লাখ বিক্ষোভকারীর রাজধানীকে অবরুদ্ধ করে ফেলার কথা। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কীভাবে সেই পরিস্থিতি সামাল দেন, এই ‘ত্রয়ী’ চোখ রাখছিলেন সেদিকেই।

কারণ, সেই আন্দোলনের পরিণতি যা-ই হোক, ভারতের ওপর তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব পড়তে বাধ্য এবং যতই হোক, প্রধানমন্ত্রীর টিমে দেশের অভ্যন্তরীণ বা বৈদেশিক নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতির প্রধান কান্ডারি এই তিনজনই।

এই তিনজনের প্রত্যেককে প্রত্যেকের কাছেই গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ‘ব্রিফ’ ছিল, শেখ হাসিনা তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ঠিকই; কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি হয়তো এ সংকটও ‘সারভাইভ’ করে যাবেন। কেন শেখ হাসিনা বিপদটা উতরে যাবেন বলে মনে করা হচ্ছে, তার একাধিক কারণও দেখানো হয়েছিল।

ঠিক এ জন্যই ৫ আগস্ট সকালেও ভারত সরকারের শীর্ষ নীতিনির্ধারকেরা ঘুণাক্ষরেও আঁচ করতে পারেননি, দিনের শেষে সেই শেখ হাসিনাই নাটকীয় পরিস্থিতিতে ভারতের মাটিতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হবেন। এমনকি ৫ আগস্টের আগে শেষবার (সম্ভবত রোববার, ৪ আগস্ট) যখন হটলাইনে শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কথাবার্তা হয়, তখনো এ ধরনের কোনো সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনাই হয়নি।

তবে দুই দেশের দুই সদ্য নিয়োগ পাওয়া সেনাপ্রধান ভারতের জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী ও বাংলাদেশের জেনারেল ওয়াকার–উজ–জামান অবশ্য তার কয়েক দিন আগে থেকেই নিজেদের মধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগে ছিলেন। পরিস্থিতি নিয়ে দুই দেশের সেনাপ্রধানের মধ্যে আলোচনা হচ্ছিল এবং বাংলাদেশের মাটিতে সেনা পাঠানোর কোনো সম্ভাবনা না থাকলেও ভারত যে অন্য সব রকমভাবে সাহায্য করতে প্রস্তুত, সেই বার্তাও দিয়ে রাখা হয়েছিল।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৫ আগস্ট যেভাবে ঘটনাপ্রবাহ মোড় নিল, তার জন্য দিল্লি যে ঠিক ‘প্রস্তুত’ ছিল, সে কথা বলা যাবে না। কারণ, প্রায় ধরেই নেওয়া হয়েছিল, জীবন বাঁচাতে শেখ হাসিনাকে শেষ পর্যন্ত দেশত্যাগ করতে হবে, এমন সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। শেখ হাসিনা নিজে এসেছিলেন তো বটেই, সেদিন রাতের মধ্যেই ভারতীয় দূতাবাসের বেশির ভাগ কর্মী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের কমার্শিয়াল ফ্লাইটে কলকাতা বা দিল্লি উড়িয়ে আনা হয়েছিল।

বাংলাদেশে চলমান আন্দোলনের একটা স্পষ্ট ‘ভারতবিরোধী’ মাত্রা আছে, এটা জানা থাকলেও ঢাকায় ভারতের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রধান কেন্দ্র ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারে সেদিনই ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হবে, এটাও ভারতীয় কর্মকর্তাদের কল্পনার বাইরে ছিল। আসলে ৫ আগস্ট সকালের পর থেকেই বাংলাদেশে একটার পর একটা নাটকীয় ঘটনা সে দিন দিল্লির সব হিসাব এলোমেলো করে দিয়েছিল।

ঢাকা থেকে দিল্লিতে পরপর দুটি ফোন

৫ আগস্ট দুপুর ১২টার পর প্রায় একই সময় নাগাদ ঢাকা থেকে দিল্লিতে পরপর দুটি ফোন আসে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর নিজেই পরে সংসদে দাঁড়িয়ে সে তথ্য নিশ্চিত করেছেন। প্রথম ফোনটা এসেছিল খোদ শেখ হাসিনার কার্যালয় থেকে, কথা বলেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নিজেই।

জয়শঙ্কর অবশ্য ভাঙেননি শেখ হাসিনা কার কাছে ফোন করেছিলেন। তবে প্রটোকল বলে এ ধরনের পরিস্থিতিতে সাধারণত কথা হয়ে থাকে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যেই। ভারত ততক্ষণে জেনে গেছে, দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী হাসিনা পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।

এরপরই দিল্লিতে টেলিফোন করে শেখ হাসিনা অনুরোধ করেন, তাকে ‘তখনকার মতো’ ভারতে আসার অনুমোদন দেওয়া হোক। সেই অনুরোধে সঙ্গে সঙ্গেই ইতিবাচক সাড়া দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ফোনটা আসে একটু পরই বাংলাদেশের বিমানবাহিনীর কাছ থেকে দিল্লিতে ভারতের এয়ারফোর্স কমান্ডের কাছে।

শেখ হাসিনাকে বহনকারী সামরিক বিমান যাতে ভারতের নির্দিষ্ট কোনো বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করার অনুমতি পায়, আনুষ্ঠানিকভাবে সেই ‘ক্লিয়ারেন্স’ চেয়ে করা হয় এই দ্বিতীয় ফোন। সে অনুমতিও দেওয়া হয় সঙ্গে সঙ্গেই। এই দ্বিতীয় ফোনটার অবশ্য একটা বিশেষ ‘পটভূমি’ আছে।

আসতে হবে বাংলাদেশের উড়োজাহাজ বা হেলিকপ্টারেই

বিবিসি বাংলা জানতে পেরেছে, শেখ হাসিনার জীবন বাঁচাতে হলে তাকে দ্রুত দেশের বাইরে পাঠাতে হবে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এটা বোঝার পরপরই ভারতকে অনুরোধ করেছিল, যেন বিশেষ উড়োজাহাজ পাঠিয়ে তাঁকে ঢাকা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

ভারতের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব সেই অনুরোধ সরাসরি খারিজ করে দেন। তাদের অবস্থান ছিল, শেখ হাসিনাকে ভারতে আসতে হলে যদি সেটা খুব অল্প সময়ের জন্যও হয়, তাহলেও তাঁকে বাংলাদেশের কোনো উড়োজাহাজে বা হেলিকপ্টারে চেপেই আসতে হবে।

হেলিকপ্টারে হলে সীমান্তের কাছাকাছি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা বা ত্রিপুরার আগরতলায় আনা যেতে পারে, সে প্রস্তাবও দেওয়া হয়। এবং তিনি কিসে আসবেন, সেটা চূড়ান্ত করা হলে সেই ফ্লাইটের জন্য বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে ফরমাল ক্লিয়ারেন্সও চাইতে হবে বলেও জানানো হয়।

সেই অনুযায়ী বাংলাদেশ বিমানবাহিনী শেখ হাসিনা ও তার সঙ্গীদের জন্য একটি সিজে-১৩০ সামরিক পরিবহন উড়োজাহাজ প্রস্তুত করে এবং সেটি দিল্লির উপকণ্ঠে গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমানঘাঁটিতে অবতরণের অনুমতি পায়। এ অবস্থান নেওয়ার কারণ একটাই, দিল্লি চায়নি পরে এ কথা বলার কোনো সুযোগ তৈরি হোক যে ভারতই বাংলাদেশ থেকে তাদের ‘বন্ধু’–কে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে বা পালাতে সাহায্য করেছে।

ফলে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সামরিক উড়োজাহাজে চেপে দিল্লির কাছে এসে নামার পর ভারত সরকারের কর্মকর্তারা বরং এই যুক্তিই দিতে পেরেছেন যে ‘আমরা নিজেরা গিয়ে ওনাকে আনিনি, বাংলাদেশ সেনাই তাঁকে এখানে পৌঁছে দিয়ে গেছে।’

পার্লামেন্টে দিনভর চাপা ফিসফিসানি

শেখ হাসিনাকে ঢাকা থেকে ভারতে চলে আসতে হচ্ছে—দুপুরের পর থেকে এ খবর দিল্লিতেও দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি প্রথমে আগরতলায় যাচ্ছেন, নাকি শিলিগুড়ি বা দিল্লি—তা নিয়েও চলছে জল্পনা। ফ্লাইটরাডার বা ফ্লাইটস্ট্যাটের মতো বিভিন্ন ট্র্যাকিং সাইটে অনেকে নেহাত শখের বশেও খুঁজতে শুরু করেছেন, কোন উড়োজাহাজটি শেখ হাসিনাকে নিয়ে যেতে পারে।

বেশ কয়েকটি স্যুটকেসসহ গণভবনের কাছে একটি হেলিপ্যাড থেকে তাঁর হেলিকপ্টারে ওঠার যে বিখ্যাত ছবি–ভিডিও এখন ‘ভাইরাল’, সেটিও দিল্লিতে বিবিসির প্রতিবেদকের মোবাইলে এসে পৌঁছায় ভারতীয় সময় বেলা আড়াইটের মধ্যেই। বাইরে এত কিছু ঘটে গেলেও পার্লামেন্টের ভেতরে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে সরকার কিন্তু তখনো সম্পূর্ণ নীরব।

পার্লামেন্টে সেদিন কিন্তু বিরোধীদের কোনো ওয়াকআউটও হয়নি, সভাও মুলতবি হয়নি। সংসদের অন্যান্য কাজ বা বিল পেশ চলছিল পুরো দমেই। বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ লোকসভায় বিরোধী তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় আচমকাই উঠে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করেন, ‘আমাদের ঘরের পাশে বাংলাদেশে যে তীব্র সহিংসতা চলছে...।’

তখন স্পিকারের চেয়ারে ছিলেন বিজেপির নেতা ও উত্তর প্রদেশের এমপি জগদম্বিকা পাল। পশ্চিমবঙ্গের সংসদ সদস্যকে প্রায় সঙ্গে সঙ্গে থামিয়ে দিয়ে তিনি বলে ওঠেন, ‘সুদীপবাবু আপনি আগে নিজের দেশের পরিস্থিতি নিয়ে ভাবুন। বাংলাদেশের কথা পরে ভাবলেও চলবে।’

সভার বাইরে ততক্ষণে ট্রেজারি বেঞ্চের পক্ষ থেকে বিরোধী দলের নেতাদের আলাদা করে ডেকে নিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি এ মুহূর্তে খুবই ‘ফ্লুইড’, ঘটনার গতিপ্রকৃতি কোন দিকে যাচ্ছে, তা বোঝা মুশকিল। ফলে পার্লামেন্টে এখনই সরকারের বিবৃতির জন্য বিরোধীরা যেন চাপাচাপি না করেন। কংগ্রেসসহ সব বিরোধী দলই সরকারের এ অনুরোধ মেনে নেয়। সরকার আরও আশ্বাস দেয়, বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে পরদিন (৬ আগস্ট) সকালেই পার্লামেন্টে অ্যানেক্স ভবনে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হবে।

সংসদের অধিবেশন বসার আগেই সব দলের নেতাদের নিয়ে সে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর ছাড়াও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী সে বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের ‘দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি’ কৌশল সম্পর্কে জানতে চান। বৈঠকের পর জয়শঙ্কর টুইট করে ‘সর্বসম্মত সমর্থনের’ জন্য সব দলকে ধন্যবাদও জানান।

সেদিনই বিকেলের পর পার্লামেন্টে ‘সুয়ো মোটো’ (স্বতঃপ্রণোদিত) বিবৃতি দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদকে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে জানান এবং কোন পরিস্থিতিতে ভারত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে, সেটাও ব্যাখ্যা করেন।

শেখ হাসিনার ‘চূড়ান্ত গন্তব্য’ নিয়ে বিভ্রান্তি

৫ আগস্ট দুপুরে যখন শেখ হাসিনাকে ভারতে আসার আনুষ্ঠানিক অনুমতি দেওয়া হয়, সেই প্রথম মিনিট থেকেই ভারতের ধারণা ছিল, তার এ আসাটা একেবারেই ‘সাময়িক’ এবং এটা তৃতীয় কোনো দেশে রওনা হওয়ার আগে বড়জোর একটা সংক্ষিপ্ত স্টপওভার। শেখ হাসিনা নিজেও ‘তখনকার মতো’ ভারতে আসতে চেয়েছিলেন, যেটা প্রতিবেদনে আগেই উল্লেখ করা হয়েছে।

লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো এই সেদিন পর্যন্ত, অর্থাৎ মাত্র তিন-চার মাস আগেও যখনই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালের কাছে শেখ হাসিনার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়েছে, তিনি সব সময়ই বলেছেন ভারতে তার থাকাটা ‘সাময়িক’।

ভারত যে হাসিনার ‘সুরক্ষা নিশ্চিত’ করার জন্য আশ্রয় দিয়েছে এবং সেটা শুধু ‘তখনকার মতো’ (ফর দ্য মোমেন্ট), এটাই আজ পর্যন্ত ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত অবস্থান। তবে ৫ আগস্ট বিকেল থেকেই দিল্লি প্রবল জল্পনায় সরগরম ছিল, শেখ হাসিনা শেষ পর্যন্ত ভারত থেকে কোন দেশে পাড়ি দিচ্ছেন? যুক্তরাজ্য তো তালিকায় ছিলই, সঙ্গে নরওয়ে বা সুইডেনের মতো কোনো স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ বা এমনকি বেলারুশের কথাও শোনা যাচ্ছিল।

শেখ হাসিনার খবরাখবর জানতে চেয়ে নর্থ ব্লকে (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে) খুব পুরোনো ও নির্ভরযোগ্য একজন ‘সোর্স’কে সকাল থেকেই হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠাচ্ছিলেন বিবিসির এই প্রতিবেদক। এসব মেসেজ দেখলেও ওই সোর্স যেকোনো কারণেই হোক উত্তর দিচ্ছিলেন না। হাসিনার ‘ফাইনাল ডেস্টিনেশন বা ‘চূড়ান্ত গন্তব্য’ কী—এ প্রশ্নের জবাবে হঠাৎ বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ তাঁর উত্তর এল—‘দিল্লি জাস্ট একটা লে-ওভার। যাচ্ছেন আপনাদের (বিবিসির) দেশেই।’

আসলে শেখ হাসিনা তখনো বাংলাদেশের কূটনৈতিক পাসপোর্টধারী, সঙ্গী বোন শেখ রেহানাও যুক্তরাজ্যের দ্বৈত নাগরিক। ফলে ৫ আগস্ট রাতেই দিল্লি থেকে তারা অনায়াসে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হয়ে যাবেন, ভারত সরকার প্রথমে এমনটাই ভেবেছিল। কিন্তু যুক্তরাজ্যের সরকার সেই পরিকল্পনায় বাদ সাধে। দিল্লিতে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে নতুন প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টার্মারের সরকার ভারতকে জানিয়ে দেয়, শেখ হাসিনাকে এখনই তারা সে দেশে আসতে দিতে পারছে না।

অথচ শেখ হাসিনা ও তার সঙ্গীরা আসলে তৃতীয় কোনো দেশে যাচ্ছেন, এ ভাবনাতেই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সিজে-১৩০ উড়োজাহাজকে সে রাতে হিন্দন বিমানঘাঁটিতেই থেকে যেতে বলা হয়েছিল। সেটিকে ঢাকায় ফিরতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু সেটা যে খুব শিগগির ঘটছে না, এটা পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পর ৬ আগস্ট (মঙ্গলবার) সকাল ১০টা নাগাদ উড়োজাহাজটি আবার ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে যায়।

দিল্লিতে রেখে যাওয়া যাত্রীদের ভারতবাস যে মোটেই ‘সাময়িক’ হচ্ছে না, সেটা স্পষ্ট হতে অবশ্য তখনো আরও কয়েক দিন বাকি। ঘটনাবহুল সেই ৫ আগস্টের সন্ধ্যাবেলা থেকেই ভারতে শেখ হাসিনার অঘোষিত অভিভাবকের ভূমিকা পালন করছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। দোভালের সঙ্গে ব্যক্তিগত স্তরে শেখ হাসিনার পরিচয় দীর্ঘদিনের। বিগত এক দশকে ঢাকায় তিনি ঘোষিত–অঘোষিত বহু সফর করেছেন।

৫ আগস্ট সন্ধ্যায় হিন্দন বিমানঘাঁটিতেও প্রধানমন্ত্রী মোদির দূত হিসেবে দোভালই শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাকে স্বাগত জানান। পরবর্তী এক বছর ধরে শেখ হাসিনা কোথায় বা কীভাবে থাকবেন, তার নিরাপত্তার কী ব্যবস্থা হবে, তিনি হাতে গোনা বা বাছাই করা কোন কোন ব্যক্তির সঙ্গে কোথায় কীভাবে দেখা করবেন তার প্রায় সবটাই এখন নির্ধারিত হচ্ছে অজিত দোভালের তত্ত্বাবধানে।

যখনই বিদেশের কোনো হাই প্রোফাইল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে ভারতে আশ্রয় বা আতিথেয়তা দেওয়া হয়, ভারতের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সেই অতিথিদের জন্য শুরুতে নিয়মিত ‘ডিব্রিফিং সেশন’ করে থাকেন। ৬৫ বছর আগে তিব্বতের ধর্মগুরু দালাই লামার জন্যও একই ব্যবস্থা ছিল। এখন শেখ হাসিনার জন্য যেসব সেশন করা হয়েছে, তার কয়েকটি অজিত দোভাল নিজে পরিচালনা করেছেন বলেও জানা যাচ্ছে।

বাবা শেখ মুজিবর রহমানের মৃত্যুর পর শেখ হাসিনা যখন ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত সপরিবার দিল্লিতে ছিলেন, তখন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে তার স্থানীয় অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখার্জি। সেই সুবাদে তাঁরা ঘনিষ্ঠ পারিবারিক বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন। প্রণব মুখার্জিকে শেখ হাসিনা আজীবন ‘কাকাবাবু’ বলেও সম্বোধন করে এসেছেন।

শেখ হাসিনার এই পর্বের ভারতবাস সম্পর্কে খুব ভালোভাবে অবহিত এমন একজন কর্মকর্তা জানান, ‘সেই প্রায় ৫০ বছর আগে প্রণব মুখার্জি শেখ হাসিনার জন্য যে ভূমিকাটা পালন করেছিলেন, বলতে পারেন এখন ঠিক সেই জায়গাটাই নিয়েছেন অজিত দোভাল।’

আর এ সম্পর্কর সূচনাও হয়েছে সেই ৫ আগস্ট সোমবার সন্ধ্যাবেলাতেই, গাজিয়াবাদের কাছে হিন্দন বিমানঘাঁটির টারম্যাকে।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.