অগ্নিকান্ড, সড়ক দুর্ঘটনা, ভবন ধস কিংবা বন্যা, দুর্যোগ, দুর্ঘটনাসহ যেকোন সংকটের মুখোমুখি হয় মানুষ, তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে আসেন একদল সাহসী মানুষ। তারা হলেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্য। সব সময় মানুষের প্রাণ বাঁচাতে তারা কাজ করেন নিরলসভাবে, কখনো দিন-রাতের পার্থক্য না করেই। তারা শুধুই আগুন নেভান না, তারা বাঁচিয়ে তোলেন স্বপ্ন, আশ্রয় দেন ভেঙে পড়া পরিবারকে, ফিরিয়ে দেন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা।
গত বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বেলা দেড়টার দিকে শেরপুর-ঝিনাইগাতী সড়কের খৈলকুড়া এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের পকুরে যাত্রীবাহী একটি বাস উল্টে যায়। ওই বাস দুর্ঘটনায় তাদের ভূমিকা আবারও প্রমাণ করেছে এই বাহিনীর সদস্যরা কেবল পেশাগত দায়িত্ব নয়, মানবিক দায়বদ্ধতাকে সবচেয়ে বড় করে দেখেন।
জানা গেছে, বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের একটি পুকুরে পড়ে গেলে মুহূর্তেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে যাত্রীদের মাঝে। বাসটি আংশিক পানির নিচে ডুবে গেলে যাত্রীরা নিজেরাই জানালার কাঁচ ভেঙে বের হয়ে আসেন ৩০-৩৫ জন। তবে সবার মাঝে নিখোঁজ হয়ে যায় এক নারীর কোলে থাকা তিন মাস বয়সী শিশু সন্তান। পুকুরে যাত্রীবাহী বাস উল্টে পড়ার সংবাদ পেয়ে ছুটে আসেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং পুলিশ সদস্যরা।
এসেই পরে আহতদের চিকিৎসার জন্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান তারা। অপরদিকে ঝিনাইগাতী উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন কর্মকর্তা মো. আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে ফায়ার ফাইটার মো. আমিনুর ইসলাম, মো. শাহীন আলম, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. ওমর ফারুক, মো. সাবেরিন সিকদারসহ এক দল কর্মী পুকুরের পানিতে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া তিন মাস বয়সী শিশু সন্তানের খোঁজে নেমে পড়েন। পরে প্রায় দুই ঘণ্টার উদ্ধার অভিযান চালিয়ে শিশুটিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরে চেইনের মাধ্যমে উল্টে যাওয়া বাসটি টেনে তোলা হয় সড়কে। আবার শুরু হয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যদের উদ্ধার অভিযান। অবশেষে আড়াই ঘন্টার অভিযান শেষে নিখোঁজ শিশুর মরদেহ খোঁজে পান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্য মো. আমিনুর রহমান। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের এমন সাহসী ও মানবিক ভূমিকায় প্রশংসা জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা ও যাত্রীদের পরিবার। এ ধরনের উদ্ধারে বিশেষ অবদান রাখায় আমিনুর রহমানকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে সামাজিক মাধ্যমেও।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. আব্দুল মান্নান বলেন, দেশে অনেকক্ষেত্রে টাকা খরচ করেও সরকারি বিভিন্ন সেবা পাওয়া যেখানে স্বপ্নের মতো ব্যাপার, সেখানে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিঃস্বার্থভাবে মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের কর্মকাÐ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। নিঃস্বার্থভাবে মানুষকে সেবা দানকারী এই সংস্থাকে তাই অসংখ্য ধন্যবাদ।
ঝিনাইগাতী উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন কর্মকর্তা মো. আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রæত ঘটনাস্থলে পৌঁছাই এবং উদ্ধার অভিযান শুরু করি। প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী চেষ্টার পর পুকুরের পানিতে আংশিক ডুবে যাওয়া বাসটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়। বাসটি তোলার পর আমরা পানির নিচ থেকে একটি শিশুর মরদেহ উদ্ধার করি। ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি যাতে দ্রæত উদ্ধার কার্যক্রম সম্পন্ন করা যায়। এ ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত, এবং নিহত শিশুটির পরিবারের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, ঝিনাইগাতীতে দুর্যোগ, দুর্ঘটনাসহ যেকোন সংকট মোকাবেলায় কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা। গত ২৪ সালের বন্যার পানিতে আটকে পড়াদের উদ্ধার থেকে শুরু করে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছাতেও ব্যাপকভাবে কাজ করেছে তারা। গত বৃহস্পতিবারের বাস দুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যদের উদ্ধার অভিযানটি প্রশংসনীয়। বিশেষ করে ফায়ার ফাইটার মো. আমিনুর রহমান অনেক পরিশ্রম করেছেন। তিনিসহ যারা এ কাজে অংশ নিয়েছিলেন সবাই ধন্যবাদ জানান তিনি।