মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যা নদীর মোহনায় চরমুক্তারপুর এলাকায় অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের কারণে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা ও অন্তত এক একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। শিল্পকারখানা ও বসতবাড়ি এখন মারাত্মক ঝুঁকিতে।
কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ প্রদান করেছেন বিআইডব্লিউটিএ নারায়নগঞ্জ কর্তৃপক্ষ। ১১ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক (বওপ) মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন স্বাক্ষরিত এক আদেশে শাহ সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সামনে কৃত্রিমভাবে ভরাটকৃত মাটি/বালি অপসারণ কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়। হাইড্রোগ্রাফি বিভাগের জরিপ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে।
ড্রেজিং চুক্তি ও অনিয়মের ফলে চরম ক্ষতির সম্মুখীন শিল্পকারখানা। গত ২৭ এপ্রিল আহ্বানকৃত টেন্ডারে ৪১ লাখ ৮১ হাজার ২৫০ ঘনফুট মাটি-বালি উত্তোলনের জন্য এক কোটি ১০ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়। ২৯ জুন থেকে শুরু হওয়া ৯০ দিনের ড্রেজিং প্রকল্পে দিনে ১০টি ড্রেজার ব্যবহারের শর্ত থাকলেও বাস্তবে ২০–২৫টি ড্রেজার দিয়ে রাতভর বালি তোলা হয়। টেন্ডারের নির্দেশনা অমান্য করে দ্রুত বালি উত্তোলনই নদী ভাঙনের প্রধান কারণ বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
শর্ত ভঙ্গ ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অনেক। বিআইডব্লিউটিএর শর্ত অনুযায়ী, বালি উত্তোলনের সময় তীরবর্তী স্থাপনা বা জনগণের কোনো ক্ষয়ক্ষতি করা যাবে না এবং পাশের শিল্পকারখানার কাজে বিঘ্ন ঘটানো যাবে না। কিন্তু বাস্তবে নিয়ম ভেঙে চলা ড্রেজিংয়ের ফলে চর মুক্তারপুরে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে।
স্থানীয়বাসিন্দারা জানান, মাত্র ২০ দিনেই লক্ষ্যমাত্রার প্রায় সব বালি তুলে ফেলা হয়েছে। এরই মধ্যে এক একর জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। যদি ড্রেজিং বন্ধ না হয়, তবে আশপাশের বসতভিটাও নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে। পূর্বেও একাধিক মামলা ও জরিমানা দিয়েও এ ধরনের অনিয়ম থামানো যায়নি।
শিল্পকারখানার উদ্বেগ প্রকাশ করে শাহ সিমেন্ট ফ্যাক্টরির ম্যানেজার আশরাফুল হক বলেন, “ড্রেজিং করার সময় সরকারি নিয়ম মেনে চলা জরুরি। তা না হলে পরিবেশের পাশাপাশি নদীর তীরবর্তী কারখানাগুলোও ঝুঁকির মুখে পড়বে।”
বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক মো. মোবারক হোসেন মজুমদার জানান, “শর্ত ভঙ্গ ও ভাঙন দেখা দেওয়ায় ইজারাদারকে সতর্ক করা হয়েছে এবং নিরাপদ দূরত্বে ড্রেজিং করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ম মেনে পরিচালনার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।