দুপুরের প্রখর রোদ, সকাল থেকে কোনো বৃষ্টি নেই। তবু সাভার পৌরসভার সিআরপি (সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অফ দ্য প্যারালাইজড) হাসপাতালের প্রবেশপথে বছরের পর বছর ধরে জমে আছে ড্রেনের নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি। দীর্ঘদিন ধরে এই জলাবদ্ধতা মাড়িয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা পঙ্গু রোগী, স্বজন, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের।
গতকাল বুধবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতাল সংলগ্ন সড়কের ফুটপাত দিয়ে মানুষজন হাঁটছেন, যাতে নোংরা পানি এড়িয়ে চলা যায়। কিন্তু গাড়ি,মোটরসাইকেল কিংবা রিকশা চলাচলের সময় ছিটকে পড়া পানি গিয়ে লাগছে পথচারীদের গায়ে। নিয়মিত চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের জন্য চরম দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে সড়কটি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছরের পর বছর এভাবেই ড্রেনের পানি জমে থাকে সড়কটিতে। বৃষ্টি হলে পানি হাঁটুর ওপর পর্যন্ত উঠে যায়। শীতকালেও এই জলাবদ্ধতা কমে না। মাঝে মধ্যে পৌরসভা পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নিলেও কয়েক দিনের মধ্যেই আগের অবস্থায় ফিরে যায়।
হুইলচেয়ারে করে স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য নিয়মিত হাসপাতালে আনেন ইয়াসিন আরাফাত। তিনি সংবাদ সারবেলাকে জানান, 'গত এক বছর ধরে এখানে আসি। আমার স্ত্রীর কোমরে আঘাতের চিকিৎসা নিতে যতটা কষ্ট না হয়, তার চেয়ে বেশি কষ্ট হয় এই ড্রেনের পানি মাড়িয়ে হাসপাতালে পৌঁছাতে।'
অন্যদিকে, সড়ক দুর্ঘটনায় পা ভেঙে ফেলা রোগী রাতুল জানান, 'ক্রাচে ভর করে ফুটপাত ধরে খুব কষ্ট করেই হাটি। নোংরা পানি মাড়িয়ে এই অল্প পথটুকু হেঁটে যেতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। পৌরসভার লোকজনের জায়গাটা দ্রুত মেরামতের ব্যাবস্থা নেওয়া উচিত। বিশেষ করে আমাদের মত মানুষের কথা অন্তত ভেবে হলেও দ্রুত এই রাস্তার সমাধান করা জরুরী।
ফার্মেসি ব্যবসায়ী অর্পণ বলেন, 'প্রায় ৭–৮ বছর ধরে এই অবস্থা। পৌরসভা মাঝে মধ্যে নামে মাত্র কাজ করে, কিন্তু স্থায়ী সমাধান হয় না। আমরা দ্রুত এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চাই।'
সিআরপি হাসপাতালের শিক্ষার্থী জাফরিন সুমা বলেন, 'প্রতিদিন এই নোংরা পানি মাড়িয়ে ক্লাসে যেতে হয়। পানি কখনো বাড়ে, কখনো কমে, কিন্তু শুকায় না। ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সময় গাড়ি গেলে গায়ে পানি লাগে।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানান, 'প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে, যার বেশির ভাগই পঙ্গু রোগী। তাদের হুইলচেয়ার নিয়ে নোংরা পানির ভেতর দিয়ে যেতে হয়। তারা এই ময়লা পানির ভেতর কত কষ্ট করে হুইল চেয়ার নিয়ে আসে তা যে দেখবে একমাত্র সেই বুঝবে। সমস্যাটি সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেও কোনো কাজ হয়নি। আমরা বারবার তাদের নজরে আনার চেষ্টা করেছি বিষয়টি,কিন্ত তারা ভূরুক্ষেপই করেনি।'
এ বিষয়ে সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আবুবকর সরকার বলেন, 'এ এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা পুরোনো ও দুর্বল। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটা টেন্ডারও হয়ে গিয়েছে। যেহেতু সংস্কার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই কাজ শুরু হবে।'