সৃষ্টিশীলতা স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গি আর নির্মাণশৈলির মুন্সিয়ানায় খুব অল্প সময়ে হয়ে ওঠেন দেশের নতুন ধারার সিনেমার পথিকৃৎ তারেক মাসুদ। গুনি এই নির্মাতার ১৪ তম প্রয়াণবার্ষিকীতে সাদামাটা ভাবে নিজ বাড়ি ভাঙ্গায় উদযাপন করা হয়।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিঝরা দিনে বাঙালির আত্মা যে স্বাধীনতার শিখায় জ্বলছিল, তারেক মাসুদ পরবর্তী সময়ে বাংলা চলচ্চিত্রে তা অসাধারণভাবে ধারণ করেন।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নির্মাতা তারেক মাসুদ ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মারা যান এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায়। সে সময় তিনি মানিকগঞ্জ থেকে ফিরছিলেন ‘কাগজের ফুল’ ছবির শুটিং এর লোকেশন দেখে।
এ সময় তারেক মাসুদের সাথে ছিলেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী চিত্রগ্রাহক ও এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আশফাক মুনির মিশুক সহ ৫ জন মারা যান। এ সড়ক দূর্ঘটনায় গুরুতরভাবে আরও আহত হয়েছেন তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ, প্রখ্যাত দুই চিত্রশিল্পী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনিস্টটিউটের শিক্ষক ঢালী আল মামুন ও তার স্ত্রী দিলারা বেগম জলি।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের ১৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী তার নিজ বাড়িতে সাদা মাটা হবে পালিত হল। তিনি ১৯৫৬ সালের ৬ ডিসেম্বর ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার পৌর সদরের নূরপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। মাদ্রাসা লাইনে তার শিক্ষা জীবন শুরু হয়। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগ নিয়ে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। এর মধ্যে কখনও তার সিনেমা দেখার সুযোগ হয়নি। ১৯৮৯ সালে মুক্তি পায় তাঁর প্রথম ডকুমেন্টারি ফিল্ম 'আদম সুরত'। তাঁর নির্মিত প্রমান্য চলচ্চিত্রের মধ্যে মুক্তির গান (১৯৯৫) ও মুক্তির কথা (১৯৯৯) বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ২০০২ সালে তাঁর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র 'মাটির ময়না' মুক্তি পায়। তাঁর অন্যান্য পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে অন্তর্যাত্রা (২০০৬) ও রানওয়ে (২০১০) উল্লেখযোগ্য। তাঁর 'মুক্তির গান' ও 'মাটির ময়না' সহ অনেক ছবি আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করে। নির্মাতা হিসেবে তিনি পেয়েছেন দেশ-বিদেশের অনেক সম্মাননা।
তারেক মাসুদের স্বপ্নের চলচ্চিত্র ছিল কাগজের ফুল যদিও প্রস্থানের ১২ বছরেও হয়নি এর দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি। ভক্ত ও সিনেমা প্রেমীদের প্রত্যাশা দ্রুত 'কাগজে ফুল' চলচ্চিত্রের কাজ সম্পন্ন করে তারেক মাসুদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে দর্শকদের মাঝে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হোক।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের ১৪ তম প্রয়াণ দিবস নিয়ে তার দুই ভাই মাসুদ বাবু ও সাইদ মাসুদ বলেন, এ বছর তারেক মাসুদ ভাই এর প্রয়াণ দিবস ছোট পরিসরে সাদামাটা ভাবে উদযাপন করা হয়।
সিনেমা যোদ্ধা তারেক মাসুদ আমেরিকার বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে সিনেমার প্রতি ভালবাসা থেকে সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছিলেন বাংলাদেশে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র কে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিতে যাদের ভূমিকা অগ্রগণ্য তারেক মাসুদ তাদের অন্যতম। স্মৃতি আর ছবির ফ্রেমে বন্দী তারেক মাসুদ, তবে তার চলচ্চিত্র আজও করছে মানুষকে অনুপ্রাণিত। ২০১১ সালের ১৩ই আগস্ট ঘাতক বাস কেড়ে নেয় সৃষ্টিশীল শুদ্ধতম সিনেমা কারিগরদের যাদের ক্যামেরায় প্রতিটি ফ্রেমে বন্দী ছিল এদেশের মানুষের মুক্তির গান স্বাধীনতা মৌলবাদ মুক্ত অসাম্প্রদায়িক সমাজ গড়ার স্বপ্ন। এদেশে আর কারও জীবন যেন সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে ঝরে না যায় তারেক মাসুদ চলচ্চিত্র প্রেমীদের এই প্রত্যয়।