উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দুপুর ১২টায় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডালিয়া পয়েন্টে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৮ মিটার থেকে ১৮ সেন্টিমিটার ওপরে পানি প্রবাহ রেকর্ড করে।
গতকাল বুধবার সকাল থেকে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে ওঠানামা করছে। রাতে ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে আজ সকালে ১৫ সেন্টিমিটার এবং দুপুরে ১৮ সেন্টিমিটার ওপরে পৌঁছেছে।
টানা ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকায় জেলার বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। অন্তত ১৫টি গ্রামের প্রায় ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে রোপা আমনসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ডিমলার পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, গয়াবাড়ী, খালিশা চাপানী ও ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি গ্রাম ও চরাঞ্চল পানির নিচে।
জুলাইয়ের শেষ দিকে ও আগস্টের শুরুতে দুই দফা পানি বৃদ্ধির পর এবার তৃতীয় দফায় বন্যা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা ত্রাণের বদলে স্থায়ী সমাধান হিসেবে ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ বাস্তবায়নের দাবি তুলেছেন।
বন্যাকবলিত আলেয়া বেগম বলেন, “তিন দিন ধরে রান্না করতে পারিনি। গরু-ছাগল ও পরিবারের সদস্যদের উঁচু জায়গায় রেখেছি। সাহায্যের চেয়ে চাই, যেন পানি আর না আসে।”
মর্জিনা বেগম বলেন, “গরু-ছাগলের খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছি। ১০ কেজি চাল পেয়েছি, কিন্তু এটা সমাধান নয়।”
কৃষক আব্দুল আলীম বলেন, “বারবার বন্যায় ধান, পাট, মাছ সব নষ্ট হয়ে গেছে। অর্থনৈতিকভাবে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি।”
পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে পানি বাড়তে শুরু করেছে এবং তিস্তাপারের মানুষ আতঙ্কে আছেন।
টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, কৃষিজমি প্লাবিত হওয়া ঠেকাতে স্বেচ্ছাশ্রমে চ্যানেল বন্ধের কাজ চলছে এবং পাউবো সহায়তা দিচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, আগামী দুই দিন ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢল অব্যাহত থাকতে পারে। এতে লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যারাজের সব কটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।”
চলতি মৌসুমে এটি তিস্তায় তৃতীয় দফা বন্যা। এর আগে ২৯ জুলাই ও ৩ আগস্ট পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছিল। এবার ১৩ আগস্ট থেকে বিপৎসীমার ওপরে পানি প্রবাহিত হচ্ছে এবং বিপদের আশঙ্কা কাটেনি।