রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে তৃতীয় দিনে গড়িয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন কর্মসূচি। এরই মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বেশ কয়েকজন। গুরুতর অসুস্থ চারজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অসুস্থ হয়ে পড়া বাকিদের স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসি ও সরকারের পক্ষ থেকে কোন সিদ্ধান্ত না আসায় ক্ষুব্ধ অনশনকারীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, যতক্ষণ না ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে, ততক্ষণ তারা অনশন চালিয়ে যাবেন।
সোমবার (১৯ আগস্ট) গভীর রাতে অনশনে থাকা শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শওকাত আলী ও রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল।
জানা গেছে, ইউজিসির সাথে কথা বলেই ১০ কার্যদিবসের মধ্যেই দাবি মেনে নেয়ার বিষয়ে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই আশ্বাসে দুজন শিক্ষার্থী অনশন ভেঙেছেন। কিন্তু অন্যরা অনশন ভাঙছেন না, তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে অনড় থাকবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
অনশন প্রত্যাহার করা শিক্ষার্থীরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী শিবলী সাদিক ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান।
এদিকে বেরোবি প্রশাসন বলছে, ছাত্র সংসদ গঠনের ব্যাপারে বর্তমান প্রশাসনও শিক্ষার্থীদের সাথে একমত। ছাত্রদের সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলার জন্য নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বেরিয়ে আসুক, তারা নেতৃত্ব দিক; বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটা বিশ্বাস করে। কিন্তু ছাত্র সংসদ সংবিধি বিদ্যমান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর আইন, ২০০৯ -এ নেই। আইনে না থাকায় বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণ করেই ১০৮তম সিন্ডিকেট সভায় ছাত্র সংসদ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে।
এ জন্য দুটো কাজ করা হয়েছে- ১. ছাত্র সংসদের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ সংরক্ষণের জন্য আলাদা একটি ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে এবং সেখানে জমা রাখা হয়েছে। এই ব্যবস্থা আগে ছিল না। যাতে জমাকৃত টাকা শুধুমাত্র ছাত্র সংসদের জন্যই খরচ করা যায়, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ২. ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য উপাচার্য একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন। কমিটির সদস্যগণ ৪টি বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি, রাবি, চবি ও জাবি) থেকে গঠনতন্ত্র সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ এবং তিনটি আবাসিক হলের জন্য আলাদা করে ছাত্র সংসদের জন্য একটি গঠনতন্ত্র প্রস্তুত করেন। যা এ বছরের গত ১৪ মে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বরাবর পাঠানো হয়েছে।
গঠনতন্ত্রটি এখন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছে যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রয়েছে। এখান থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হয়ে গঠনতন্ত্রটি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণ করা হবে। নিয়ম অনুযায়ী এই গঠনতন্ত্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পরে সরকারি গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে। তারপরই এর আলোকে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করার আগে ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র প্রণয়নের এই সকল ধাপ পর্যায়ক্রমে অতিক্রম করতে হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
এদিকে আমরণ অনশনে থাকা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বিশেষজ্ঞ কমিটির সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. শওকাত আলী। তিনি ইউজিসির বরাত দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে দশ কার্যদিবসের মধ্যেই ছাত্র সংসদের খসড়া নীতিমালাটি যাচাই-বাছাই পূর্বক অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিকট উপস্থাপন করা হবে। আইন সংশোধন হলে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই ছাত্র সংসদের নীতিমালা সম্পর্কিত সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। অক্টোবর মাসের মধ্যেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তার এই আশ্বাস প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এর আগে, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে রোববার (১৭ আগস্ট) সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের উত্তর গেটে আমরণ অনশনে বসেন শিক্ষার্থীরা। তাদের এই দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করে অনেকেই অনশনে অংশ নেন। দ্রুত ছাত্র সংসদ আইন সংশোধন করে নির্বাচন আয়োজনে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য চাপ সৃষ্টি করে আসছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
সোমবার ইউজিসিকে ব্যর্থতার দায় দিয়ে প্রতিবাদ স্বরুপ প্রতীকী গায়েবানা জানাজা পড়েছেন চব্বিশের কয়েকজন জুলাই যোদ্ধা। এদিন ঢাকায় শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে বেরোবিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান শহীদ আবু সাঈদের দুই ভাই রমজান আলী ও আবু হোসেন।