প্রশিক্ষণ দিচ্ছে অস্ত্রের কারিগর মফিজ ইনসেটে ছবির বাম থেকে আনসার ডাকাত তারেক দুইজনে ভিডিও কলে অস্ত্র প্রদর্শন করছে একে অপরজনকে। ছবি: সংগৃহীত।
* অস্ত্র সরবরাহের নিরাপদ ট্রানজিট শাপলাপুর-কালারমারছড়া রুট
দেশের একমাত্র পাহাড়ী দ্বীপ কক্সবাজারের মহেশখালীতে যেন ‘অস্ত্রের মেলা’ বসেছে। নতুন-পুরাতন অস্ত্রের কারিগর কারবারিরা মিলে দেশীয় অস্ত্রের চাহিদা ভেবে গৃহীণ পাহাড়ের ভ্রাম্যমান অস্ত্রের কারখানায় এই মেলার আসর বসিয়েছে।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অস্ত্রের চাহিদা ভেবে নতুন অস্ত্র তৈরিতে নেমেছে আত্মগোপনে থাকা মহেশখালীর ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীদের একাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো। মুলত তারাই পাহাড়কে নিরাপদজোন হিসেবে বেচে নিয়ে সেখানে আস্তানা গেড়েছে।
জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঘন ঘন অভিযানের কারনে দ্বীপের পরীক্ষিত অস্ত্র কারিগর’রা মহেশখালী ছেড়ে দীর্ঘদিন অন্যত্রে আত্মগোপনে থাকলে সম্প্রতি একপক্ষ কাল ধরে অবস্থান করছে এলাকায়। হাত দিয়েছে নতুন করে অস্ত্র তৈরির কাজে।
উপজেলার অস্ত্র তৈরির স্বর্গ রাজ্য হিসেবে দেশব্যাপি পরিচিত কালারমারছড়া বাজারের পূর্বপাশে ফকিরজুম পাড়ার গহীন পাহাড়ের গোলাইল্যা জিরি এলাকা, নোনাছড়ি ও আঁধার ঘোনা মিজ্জির পাড়া পাহাড়, শাপলাপুর ইউনিয়নের জেমঘাট পাহাড়ি এলাকা, বড় মহেশখালীর বড় ডেইল পাহাড়সহ কয়েকটি স্পটে অস্ত্র তৈরির ভ্রাম্যমান কারখানা রয়েছে। ফলে অস্ত্র তৈরির আবারও ধুম পড়েছে বলে শঙ্কা প্রকাশ স্থানীয় বাসিন্দাদের। এসব পাহাড়ে অস্ত্রের কারিগর সন্ত্রাসীরা হাতে বন্দুক নিয়ে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার কালারমার ছড়ায় যৌথ বাহিনীর সোর্স পরিচয়ধারী পাহাড়ে অবস্থান করা আনসার ডাকাতের কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্র নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। ভিডিও কলে আরেক ডাকাত ছোট তারেককে বিভিন্ন ধরনের একাধিক অস্ত্র দেখানো হচ্ছে, একইভাবে তারেক ডাকাতও আনছারকে ভিডিও কলে দেখানো অস্ত্রের ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে দেশব্যাপি।
ভিডিওগুলোতে দেখা যায়- উপজেলার কালারমারছড়ার নোনাছড়ি সীমান্ত এলাকার ছামিরাঘোনার মো. ইসমাইলের ছেলে আনসার ভিডিও কলে ডাকাত তারেককে পাহাড়ে অস্ত্রের কারখানায় তৈরিকৃত বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র প্রদর্শন করছে। এসময় অস্ত্র সরবরাহ ও সংগ্রহ, ডাকাতির পরিকল্পনা, মারামারি এবং পুলিশের ভয়ে আত্মগোপনে থাকার বিষয়েও কথোপকথন হতে শোনা যায়।
অন্যদিকে, তারেক নামের আরেক ডাকাত ও সন্ত্রাসীর একই ধরনের আরেকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ফলে পরপর দুই সন্ত্রাসীর একাধিক অস্ত্রসহ ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে সু-কৌশলে সংগ্রহ করা আরেকটি ছবিতে দেশীয় অস্ত্র লম্বা বন্দুক নিয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে অস্ত্রের কারিগর মফিজ। তাদের গ্রেপ্তারের দাবী উঠেছে।
এদিকে অস্ত্রের ভিড়িও ভাইরাল হওয়ার পর কালারমারছড়া ছামিরা ঘোনার গতকাল বিকালে তারেকের আস্তানায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে তার বড় ভাই উকিল আহমেদকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীদের সোস হিসেবে সঙ্গে নিয়ে অভিযান করায় পুলিশের চলমান অভিযান প্রশ্মবিদ্ধ হচ্ছে। তবে সন্ত্রাসী উকিল আহমেদ গ্রেপ্তারে জনমনে স্বস্তি ফিরেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, র্যাব, নৌ বাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে দাগী সন্ত্রাসী কারিগরদের আটক করতে পারলে অস্ত্র তৈরির কারখানা বন্ধ করা সম্ভাব বলে তাদের অভিমত। না হলে অস্ত্র তৈরি নির্মূল সম্ভাব হবেনা।
স্থানীয় শিক্ষক আবু তাহের জানান, পাহাড়ের মুল স্পটে অভিযান করে অস্ত্রের কারিগর ও আওয়ামীলীগের লেভাসে দীর্ঘদিন মাফিয়া করে দাপিয়ে বেড়ানো দাগী অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে এলাকার শান্ত পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।
জানাগেছে, পাহাড়ে উল্লেখিত গহীন অরণ্যে খোদাই করে ও সুড়ঙ্গ করে ওয়ার্কসফ এর স্টাইলে অস্ত্র তৈরির কারখানা গুলো করা হয়েছে। প্রায় ৫টি অস্ত্রের কারখানার মধ্যে বেশির ভাগ এখনো অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। গহীন পাহাড় হওয়ার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন পৌঁছা ও বড় কঠিন-ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা জঙ্গলের অস্ত্রের কারখানা উচ্ছেদ চান।
উপজেলার শাপলাপুর পাহাড়ি অঞ্চলের আঁকাবাঁকা রাস্তা হয়ে দীর্ঘদিন ধরে দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র চট্টগ্রাম, ঢাকা ও নোয়াখালীর মতো জেলায় সরবরাহ করে আসছিলো সংঘবদ্ধ একটি চক্র। উপকূলীয় দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করে তারা তৈরি করে আসছিল অস্ত্রের গোপন ভাণ্ডার
সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় লোকজন অবৈধ অস্ত্রের বিকিকিনি বেড়েছে। জানাগেছে, উপজেলার দাগী সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে নিকটস্থ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে পাচার হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্ত্র ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক দলের ক্যাডারদের হাতে।
এসব দৈশী অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে এক-দুই নলা লম্বা বন্দুক,কাটা বন্দুক-থ্রী কোয়াটার বন্দুক, জি -ফোরের মত ভারী অস্ত্র। মহেশখালী-বদরখালী সংযোগ সেতু হয়ে সড়ক পথে অথবা নৌ-পথ দিয়ে ফিশিং ট্রলার করে সংঘবদ্ধ পাচারকারীরা পাচার করছে এসব অস্ত্রের চালান। তবুও মহেশখালী থেকে বন্ধ করা যাচ্ছেনা অস্ত্র তৈরির কারখানা এবং উপজেলার আলোচিত ফকিরজুম পাড়ার পূর্বপাশে পাহাড়তলী এলাকার বিশাল অস্ত্রের কারখানাটি।
অভিযোগ আছে বিভিন্ন সময় র্যাব-পুলিশ ফকির জুমপাড়া পাহাড়তলী এলাকায় অস্ত্রের কারখানায় অভিযান চালিয়ে কয়েক বছর আগে ১২ টি অস্ত্র, আরেকবার ৯টি অস্ত্র,অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম কারিগরহ দাগী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। তার পরেও স্বমুলে উৎপাটন করা যাচ্ছেনা এসব অস্ত্রের কারখানা। গ্রেপ্তার করা যাচ্ছেনা দাগী সন্ত্রাসীদের।
‘অস্ত্রের মেলা’ চালু করতে গিয়ে রাজনৈতিক বিশ্বাস ভুলে কারবারিরা একটি প্লাটফর্মে বসে অস্ত্র বানিয়ে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জোরালো অভিযোগ তুলেছেন মহেশখালীর সাধারণ মানুষ। এজন্য পুলিশকে দায়ী করছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহেশখালী সাধারণ মানুষের অভিযোগ, অস্ত্র কারিগর সন্ত্রাসীরা অস্ত্র ও গুলি জমা দিয়ে আত্মসমর্পণের মত বিরল ঘটনা ঘটলে বন্ধ করা যায়নি পাহাড়ের ভ্রাম্যম্যমান অস্ত্রের কারখানা ও সন্ত্রাসীদের। আর অস্ত্র কারবারি সন্ত্রাসীদের বিচরণ ও দাপটে এলাকায় এখন অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। দেখতেও ভালো লাগছে না, কিছু বলাও যাচ্ছে না!
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে মহেশখালী পাহাড়ের অস্ত্রের কারখানা থেকে পানের বস্তার আড়ালে দেশীয় অস্ত্র পাচারকালে দুই অস্ত্র চোরাকারবারিকে গ্রেফতার করেছে কোস্টগার্ড ও র্যাব-১৫ এর সমন্বয়ে যৌথবাহিনী।
রবিবার (৮ জুন) সন্ধ্যা ছয়টার দিকে মহেশখালী ব্রীজের বদরখালী ফেরীঘাট সিএনজি স্টেশনে ৭টি দেশীয় অস্ত্রসহ দুই পাচারকারীকে গ্রেফতার করে যৌথবাহিনী।
এর আগে গত ৩ মে মহেশখালী থেকে নোয়াখালীতে অস্ত্র পাচারের সময় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া বাজার এলাকায় একটি চেকপোস্টে তল্লাশির করে দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এসময় তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসের ভেতর থেকে ৮টি দৈশিয় তৈরি বন্দুক উদ্ধার করা হয়। দুই মাসে ২টি অস্ত্রের চালানো ১৫টি অস্ত্র উদ্ধার করে অভিযানকারীরা।
মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মনজুরুল হক জানান, অস্ত্রের কারিগরও সন্ত্রাসীরা মাথাচড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে জন্য পুলিশ টহল জোরদার রয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ অস্ত্র উদ্ধারও করা হয়েছে। তিনি অস্ত্র তৈরির মুল স্পটে খবর নিয়ে অভিযান চালাবে বলেও জানান।
কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিডিয়া জসিম উদ্দিন জানান, পুলিশ তৎপর রয়েছে অস্ত্র ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের আটক করতে। তবে এলাকার লোকজন সহযোগিতা করলে অস্ত্রের কারখানা যদি তাকে মুল স্পটে অভিযান চালানো হবে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি মোহাম্মদ আহসান হাবিব পলাশ জানান, মহেশখালীতে নতুন ওসিকে নির্দেশনা দাওয়া আছে অপরাধীদের আটক করতে। পুলিশ সন্ত্রাস বিরুদ্বী অভিযান শুরু করেছে। অস্ত্রধারী যেই হোক না কেন আইনের আওতায় আনা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh