টিনের চালে মরিচা, চারপাশে ভাঙা বেড়া, ঝুলে থাকা জানালা আর কোথাও বৃষ্টির পানি ঠেকাতে পলিথিনের ছাউনি। এমন জরাজীর্ণ ঘরেই স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন সীতাকুণ্ডের কুমিরা ইউনিয়নের উত্তর জেলেপাড়ার জেলে ফকির চান দাশ (৭০)। জীবনভর অভাব-অনটনের সঙ্গে যুদ্ধ করে এসেছেন তিনি। অথচ সেই ঘরেই এবার আলো করে এলো রাষ্ট্রীয় সম্মাননা।
সোমবার (১৮ আগস্ট) রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাত থেকে “ব্রোঞ্জ পদক” গ্রহণ করেন ফকির চান। সীতাকুণ্ডে তিনিই প্রথম জেলে যিনি রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে ভূষিত হলেন।
নিয়ম মেনে মাছ ধরা -
উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া ১৪টি ফাঁড়ে মাছ ধরেন ফকির চান। তবে সন্দ্বীপ চ্যানেলে মাছ কমে যাওয়ায় সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ঋণের বোঝা প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। তারপরও কখনো নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করেননি তিনি। সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে চলেন, অন্যদেরও উৎসাহ দেন নিয়ম মানতে।
ফকির চান বলেন, “সংসারে অভাব আছে, তবুও নিয়ম ভাঙিনি। মাছ ধরার প্রেমে পড়ে গেছি।”
শিক্ষার স্বপ্নে মেয়েরা-
পাঁচ মেয়ের তিনজনের বিয়ে দিয়েছেন ফকির চান। ছোট দুই মেয়ে পড়াশোনা করছে। বড় মেয়ে কণিকা দাশ স্নাতকের দ্বিতীয় বর্ষে, ছোট মেয়ে পূজা দাশ একাদশ শ্রেণিতে। নিজে পড়াশোনা না করলেও মেয়েদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখেন তিনি।
“আমি পড়তে পারিনি। চাই সন্তানরা যেন বড় হয়, শিক্ষিত হয়,” বললেন ফকির চান।
পরিবারের গর্ব-
পদক হাতে বাবাকে দেখে আবেগাপ্লুত ছোট মেয়ে পূজা দাশ বলেন, “বাবা কখনো অসৎ উপায়ে আয় করেননি। রাষ্ট্রের প্রধানের হাত থেকে পুরস্কার পাওয়া আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।”
প্রাপ্য স্বীকৃতি-
প্রতিবেশী বিপ্লব জলদাস জানান, ফকির চান সবসময় নিয়ম মেনে মাছ ধরেন। অভাবের মধ্যেও মেয়েদের শিক্ষার প্রতি যত্নবান। তাই এ সম্মান তার প্রাপ্য।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোতাছিম বিল্লাহ বলেন, “বিভিন্ন মানদণ্ড যাচাই করে মৎস্য অধিদফতরের পরিচালক সরেজমিনে তদন্ত করে তাকে মনোনীত করেছেন।”
অনুপ্রেরণা-
অভাবের ঘরেও সততা, নিয়ম মেনে চলা আর পেশার প্রতি ভালোবাসাই ফকির চানকে পৌঁছে দিয়েছে রাষ্ট্রীয় সম্মানের আসনে। তার জীবনের এ স্বীকৃতি শুধু সীতাকুণ্ড নয়, পুরো জেলে সমাজের জন্য এক অনুপ্রেরণা।