ছবি: সংগৃহীত।
জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে হতদরিদ্র ছাত্রীদের সরকারি অনুদানের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
শিক্ষার মান উন্নয়ন ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তার উদ্দেশ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘পারফরমেন্স বেজড গ্র্যান্টস ফর সেকেন্ডারি ইন্সটিটিউশনস (পিবিজিএসআই)’ প্রকল্পের অধীনে জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার নওটিকা কেশুরতা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ৫ লক্ষ টাকা অনুদান পায়। এর মধ্যে ৪ লক্ষ টাকা বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে এবং বাকি ১ লক্ষ টাকা হতদরিদ্র ২০ জন ছাত্রীকে সমানভাবে ৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোজাফফর হোসেনের যোগসাজশে সহকারী শিক্ষক ফরহাদ হোসেন ও অফিস সহকারী উত্তম বাবু ওই ছাত্রীদের কাছ থেকে চেক বইয়ে সাক্ষর নিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে প্রত্যেক ছাত্রীকে মাত্র ১ হাজার থেকে দেড় হাজার বা দুই হাজার টাকা দিয়ে বাকি অর্থ ভাগবাটোয়ারা করে আত্মসাৎ করেন।
প্রতারণার শিকার একাধিক ছাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘আমাদেরকে বলা হয়েছিল ৫ হাজার টাকা পাবো। কিন্তু পরে আমাদের থেকে স্বাক্ষর নিয়ে কাউকে ১ হাজার, কাউকে দেড় করে টাকা দেয়। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে আমাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফরহাদ স্যার ভয়ভীতি দেখিয়েছে। বলেছে, আমাদের কেউ টাকার কথা জিজ্ঞেস করলে আমরা যেন বলি ৫ হাজার টাকাই পেয়েছি। আমরা আমাদের বাকি টাকা ফেরত চাই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ছাত্রী বলেন, ‘ফরহাদ স্যার আর অফিস সহকারী উত্তম বাবু মিলে সব টাকা তুলে সবাইকে বিতরণ করেছে। ফরহাদ স্যার স্কুলেই প্রাইভেট পড়ায়, যারা তার কাছে প্রাইভেট পড়ে তাদেরই সব সময় সুযোগ-সুবিধা দেয়। এই অনুদানের টাকাও তাদেরই দিছে যারা তার কাছে প্রায়ভেট পড়ে। এমনকি পরীক্ষার প্রশ্নও তাদের দিয়ে ভাল রেজাল্ট করায়, যাতে সবাই তার কাছে প্রায়ভেট পড়ে।
এ ঘটনায় অভিভাবক ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, অনুদানের টাকা লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, হেড স্যারের যোগসাজশেই ছাত্রীদের অনুদানের টাকা আত্মসাতের বন্দবস্ত করেন সহকারী শিক্ষক ফরহাদ এবং অফিস সহকারী উত্তম বাবু। এই দুজন হলো হেড স্যারের দুই হাত। তাদের কথায় সবাইকে চলতে হয়। এমনকি বিদ্যালয় উন্নয়নের বাকি ৪ লক্ষ টাকাও পুরানো এবং নতুন নামকাওয়াস্তে কিছু কাজ দেখিয়ে হেড স্যার আত্মসাৎ করেছে। আমাদের এগুলো বিষয়ে কিছু বলে না। ঠিকমত তদন্ত হলেই সব বেরিয়ে আসবে।
অভিযুক্ত অফিস সহকারী উত্তম বাবু বলেন, আমি শুধু তাদের চেক লেখে দিয়েছি। স্যারেরাই চেক দিয়েছে স্যারেরাই টাকা নিছে। আমি কোনো টাকা কারও হাতে দেইনি কারও থেকে নেইওনি। ওগুলো সম্ভবত হেড স্যার আর ফরহাদ স্যার করেছে।
অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক ফরহাদ হোসেন অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, আমি সবার থেকে চেকে স্বাক্ষর নিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে এনে সবার হাতে দিয়েছি। টাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী আমাকে দিয়েছে। তবে আমি তাদের থেকে টিউশনির টাকা পাইতাম সে টাকা নিয়েছি। তবে তারা বড়িতে গিয়ে বাবা মা কে সেটা না বলায় এ অভিযোগ উঠেছে। কতজন তার কাছে টিউশন পড়ে জানতে চাইতে তিনি বলেন, মোটামুটি সবাই পড়ে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোজাফফর হোসেন বলেন, আমি কারো থেকে টাকা নেইনি, আমি সবার হাতে চেক তুলে দিয়েছি। পরে তারা বাইরে গিয়ে কি করেছে আমি তা জানিনা। আমি বিদ্যালয়ের প্রত্যেকটা কাজ স্বচ্ছভাবে করি। আমার জায়গায় আমি নিট এন্ড ক্লিন। আমার উপরে যে অভিযোগ আসছে আমি পরে তদন্ত করে দেখলাম দু-তিন জনের থেকে টাকা নিছে। প্রাইভেট পড়া এবং গাইড বইয়ের জন্য। তবে আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (অতি.দা.) কাজী মনোয়ারুল হাসান কালবেলাকে, বিষয়টি আমিও মৌখিকভাবে জেনেছি। তবে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবুও আমি আমার একাডেমিককে বলেছি বিষয়টি দেখার জন্য।
এবিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাইমেনা শারমীন কালবেলাকে বলেন, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। পুরো বিষয়টি আগে খোঁজ নিয়ে দেখি। তবে অভিযোগ আসলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh