রংপুরের তারাগঞ্জে জামাই-শ্বশুরকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত সোমবার দিবাগত রাতে সয়ার ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে ওই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তি হলেন, সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট কুটিপাড়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে শাহজালাল (২৯)।
পুলিশ জানায়, গত ৯ আগস্ট রাতে মিঠাপুকুরের ছড়ান বালুয়া এলাকা থেকে প্রদীপ লাল ও রুপলাল ভ্যান নিয়ে তারাগঞ্জের ঘনিরামপুর গ্রামে রুপলালের বাড়িতে আসছিল। ওই দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট বটতলা মোড়ে পৌছালে তাদেরকে চোর সন্দেহ করে ওই এলাকার লোকজন তাদের ভ্যান দাঁড় করায়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে রুপলাল ও প্রদীপের সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাসি করে স্পিড ক্যানের বোতলে দুর্গন্ধ যুক্ত পানীয় ও কিছু ওষুধ পায়।
মামলাতে ভারতী রানীর বরাতে উল্লেখ্য করা হয়, আমার স্বামী রূপলাল এবং জামাই প্রদীপের সঙ্গে থাকা ব্যাগের ভেতরে স্পিড ক্যানের বোতল খুললে মেহেদী হাসানসহ তাৎক্ষণিক কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতা স্বামী রুপলাল ও জামাই প্রদীপকে রাত ৯টার দিকে বুড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়ে গিয়ে অজ্ঞাতনামা অনুমান ৫০০/৭০০ জন উত্তেজিত জনতা রুপলাল ও প্রদীপ লালকে লাঠি-সোটা, লোহার রড, দ্বারা গণপিটুনী দিতে থাকে।
গণপিটুনীর একপর্যায়ে রুপপাল ও প্রদীপ লাল গুরুতর জখম হয়ে দুই কান দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করে। তাদের আশঙ্কাজন অবস্থা দেখে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করালে কর্মরত চিকিৎসক রুপলালকে মৃত্যু ঘোষণা করেন এবং প্রদীপকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পাঠানো হলে সেখানে ভোরে তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় ১০ আগস্ট রুপলালের স্ত্রী ভারতী রানী বাদী হয়ে তারাগঞ্জ থানায় ৭০০জন অজ্ঞাতনামা আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই দিন দিবাগত রাতে ঘটনার সময়ের ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে চার জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পূর্বে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের বালাপুর এলাকার এবাদত হোসেন (২৭), বুড়িরহাট এলাকার আক্তারুল ইসলাম (৪৫), রফিকুল ইসলাম (৩৩) ও রহিমাপুরের মিজানুর রহমান (২২)। ওই মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ৭০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমএ ফারুক বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি, ভিডিও বিশ্লেষণ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের দেওয়া তথ্য মিলিয়ে ঘটনাটির সঙ্গে জড়িত শাহজালালকে রাতে তাঁর নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে আজ মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারেও অভিযান চলছে।