× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

ধর্মীয় সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত; একই স্থানে কবর, সমাধি, ও শ্মশান

জায়েদ আহমেদ, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার)

২৭ আগস্ট ২০২৫, ১৫:৪০ পিএম

ছবি: সংগৃহীত

মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পাত্রখোলা চা বাগানে একই স্থানে হিন্দু, মুসলিম ও খ্রিস্টানদের কবর, শ্মশান ও সমাধিস্থল অবস্থিত, যা ধর্মীয় সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এখানে যুগ যুগ ধরে এই তিন ধর্মের মানুষ কোনো বিরোধ ছাড়াই পাশাপাশি নিজেদের ধর্মীয় রীতি মেনে চলে এবং একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে। এটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক চমৎকার উদাহরণ, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সামাজিক বন্ধন এবং আনন্দ সৃষ্টি করেছে।

আলাদা বিশ্বাস নিয়ে পুরো জীবন পার করে তিন ধর্মের মানুষ শেষ যাত্রায় মিলিত হচ্ছেন কমলগঞ্জের পাত্রখলা চা বাগানে। এখানে পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য শ্মশান, মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য কবরস্থান এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্য সমাধিস্থল রয়েছে। চা বাগানের এই কবরস্থানটি শুধু একটি স্থান নয়, এটি বিভিন্ন ধর্মের মানুষের সহাবস্থানের প্রতীক।

এটি একটি বিরল দৃষ্টান্ত, যেখানে একই স্থানে হিন্দু, মুসলিম ও খ্রিস্টান ধর্মের মানুষের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়, যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল উদাহরণ। একটি চা বাগান ৫০ বছর ধরে ধারণ করে আছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নজির।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই তিনটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের মৃত ব্যক্তিদের শেষকৃত্য এই স্থানেই করে আসছেন এবং এতে কোনো ধরনের সমস্যা বা বিরোধ সৃষ্টি হয়নি। এই স্থানটি ধর্মীয় সম্প্রীতির একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যা অন্যদের জন্যও অনুকরণীয় হতে পারে। এই পাত্রখলা চা বাগানে বিভিন্ন ধর্মের প্রায় ১৮ হাজার মানুষের বসবাস।

তাদের কারও মৃত্যু হলে শেষ ঠিকানা হয় ওই সমাধিস্থল। ১৮৭৫ সালে এ বাগান প্রতিষ্ঠার সময় ৫ একর জমি তিন ধর্মের মানুষের সমাধির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ সমাধিস্থল নিয়ে কখনও কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি। বাগানে ঈদ, পূজা, বড় দিনও উদযাপিত হয় সৌর্হাদ্যপূর্ণ পরিবেশে। সামাধিস্থলে সীমানা দেয়াল নির্মাণ, রাস্তা তৈরিসহ রক্ষণাবেক্ষণ কাজে সরকারি সহায়তার দাবি রয়েছে স্থানীয়দের।

স্থানীয়রা আরও জানান, সব ধর্মের মানুষের মাঝে সৌহার্দ্যের দৃষ্টান্ত হিসেবেই এই সমাধিস্থলটি গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি দাফন, দাহন আর সমাহিত করার এমন পরিবেশ মানবিকতার এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাও। পাত্রখোলা চা বাগানের বিশাল জায়গা জুড়ে অবস্থিত এক জায়গায় তিন ধর্মের সমাধিস্থল। একই স্থানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দাফন কিংবা সৎকার হচ্ছে মুসলমান, হিন্দু এবং খ্রিস্টানদের মরদেহ।

তিন ধর্মের মানুষের সাথে আলাপকালে আরও বলেন, প্রথম যখন এই চা বাগান প্রতিষ্ঠা করা হয় তখন আমাদের তিন ধর্মের মুরব্বীরা ভেবেছিলেন কি দৃষ্টান্ত রাখা যায়? পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এমন একটা সৌহার্দ্য, এমন একটা সুসম্পর্ক রেখে যাব, যাতে পরবর্তীতে এটা তাদের ওপর ভাল সুফল বয়ে আনবে। ধর্ম যার যার উৎসব সবার। তিনটি ধর্মের লোকদের সম সুযোগ দিয়েই এখানে সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি করে মৃত ব্যক্তিদের সৎকার অনুষ্ঠান পালন করা হয়। তাই ধর্ম পালনে কারও কোন সমস্যা হয় না।

আলাপকালে পাত্রখোলা চা বাগান সার্বজনীন মন্দিরের পুরোহিত রাজেশ প্রসাদ শর্মা, পাত্রখোলা জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল আজিজ ও পাত্রখোলা চা বাগান গীর্জার সদস্য উজ্জল বিশ্বাস জানান, ‘এখানে একই স্থানে হিন্দুদের শ্মশান, মুসলমানদের কবরস্থান ও খ্রিস্টানদের সমাধিস্থল। তিন সম্প্রদায়ের মরদেহ নিজ নিজ ধর্মীয় রীতি অনুযায়ীই দাফন কিংবা সৎকার করা হয়ে থাকে এখানে।

তারা বলেন, এক সঙ্গেই যেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জীবনটা কাটাতে পারি। আমরা পাশাপাশি তিন ধর্মের মানুষ এক জায়গায়ই আছি। আমরা বিশ্বাস করি মৃত্যুর পরেও সবতো আমরা একসাথেই থাকব।’

এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এই তিনটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের মৃত ব্যক্তিদের শেষকৃত্য এই স্থানেই করে আসছেন এবং এতে কোনো ধরনের সমস্যা বা বিরোধ সৃষ্টি হয়নি। এই স্থানটি ধর্মীয় সম্প্রীতির একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে তিনটি ধর্মীয় শেষকৃত্য স্থানে বাউন্ডারি সহ উন্নয়ন মূলক কাজের সহযোগীতা করা হবে।’

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.