. শহীদ পরিবার নিধনে একাট্টা আ’লীগ ও দালাল সিন্ডিকেট
জুলাই আন্দোলনে নিহত চট্টগ্রামের ২য় ও মহেশখালীর প্রথম শহীদ তানভীর ছিদ্দিকীর চাচা কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের মোহাম্মদ শাহ ঘোনা গ্রামের বাসিন্দা যুবদল কর্মী ও মাছ ব্যবসায়ী তোফায়েল আহমেদ মাতাব্বার খুনের ঘটনায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন উপজেলা আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক তারেক শরীফ, সন্ত্রাসীদের গডফাদার নোমান শরীফ, নুরুল আলম প্রকাশ কালাবদা, লম্বা তারেক, নুরুল আমিন বাচ্চু, রশিদ বাহিনীর প্রধান রশিদ, সন্ত্রাসী জুয়েল, শামসু আলম পিংকিসহ ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
অজ্ঞাত আরোও ১৫/২০ জনকে দেখানো হয়েছে এজাহারে।
গত মঙ্গলবার বিকালে নিহতের ছোট ভাই শিবির নেতা তারেকুল ইসলাম মাতাব্বার বাদী হয়ে মহেশখালী থানায় এ মামলা দায়ের করেন বলে নিশ্চিত করেছেন মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মঞ্জুল হক। এ সময় ওসি জানান, গত মঙ্গলবার বিকালে খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে জঙ্গি রিদোয়ান, কসাই রিদোয়ান নামের ২ সন্ত্রাসীসহ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়াও গতকাল বুধবার বিভিন্ন স্থানে পুলিশ চিরুনী অভিযান চালাচ্ছে বলে জানান তিনি।
আটককৃতরা সবাই কালারমারছড়া ইউনিয়নের ফকিকজুম পাড়া পাহাড়তলী গ্রামের বাসিন্দা। প্রসঙ্গত: শনিবার (২৩ আগস্ট) রাতে পাহাড়ের অবস্থানরত আওয়ামীলীগের পলাতক সন্ত্রাসীরা ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের সংগঠিত করে যুবদল কর্মী ও মাছ ব্যবসায়ী তোফাইল আহমদ (৩৩) নামের এক যুবককে ৮ জইন্যা নিজেদের মৎস্য প্রকল্প থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
এসময় সন্ত্রাসীদের সাথে কোষ্টগার্ডের সদস্যরা ছিল বলে নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করেন। কালারমারছড়া পাহাড়ে অবস্থানরত গডফাদার নোমান ও তারেক চেয়ারম্যানের ২০/২৫ জনের একটি সন্ত্রাসী দল তোফায়েল আহমদকে কুপিয়ে এবং গুলি করে হত্যা করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। ২৪ আগষ্ট (রবিবার) ভোর সকালে উপজেলার কালারমারছড়া বাজারের দক্ষিণে কাউল্যার ব্রিজ সংলগ্ন বাঁশঝাড় থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত তোফায়েল আহমেদ কালারমারছড়া মোহাম্মদ শাহ ঘোনা গ্রামের বাসিন্দা মরহুম ছিদ্দিক আহমেদ মাতাব্বারের পুত্র ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত শহীদ তানভীর ছিদ্দিকীর চাচা ।
তোফায়েল আহমদের বড় ভাই সরওয়ার আজম মাতাব্বার জানান, যে কোন মুল হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার যেন করে প্রশাসন। না হয় বৃহত্তর আন্দোলন করে সড়ক অবরোধ করা হবে। নিহত তোফায়েল আহমদের বড় ভাই শহীদ তানভীর ছিদ্দিকীর পিতা বাদশাহ মিয়া তার ছোট ভাইকে হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানান।
যে কারণে হত্যা:
পলাতক আওয়ামীলীগের শাসন আমলে বিএনপির পরিবার হওয়ার সুবাদে এলাকা থেকে বিতাড়িত করে নিহত তোফায়েল আহমদের পরিবারসহ পুরো খউস্বর ঘোষ্টির শতাধিক পরিবারকে। এসময় ভাঙচুর করে ঘর-বাড়ি দখলে নেয় ৮ জইন্যাসহ ৫টি চিংড়ি প্রকল্প। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলে দীর্ঘ ১৭ বছর পর এলাকায় ফিরে নিহতদের পরিবারসহ পুরো ঘোষ্টির লোকজন। ফিরিয়ে পাই সন্ত্রাসীদের দখলে থাকা হারানো মৎস্য প্রকল্প ও হালচাষের জমি।
নতুন করে বসবাস শুরু করে এলাকায়, ঘরবাড়ি বাঁধে। এর ফাঁকে পলাতক আ.লীগের সন্ত্রাসীরা ভাড়াটিয়াসহ কালারমারছড়া-হোয়ানক পাহাড়ে সংগঠিত হয়। চিংড়ি প্রকল্প দখলে নিতে চক আঁকে। চিংড়ি প্রকল্পে রাতে সংঘবদ্ধ হয়ে হানা দিয়ে শক্ত নাড়া দিয়ে মাছ লুট করে তোফায়েল আহমদকে অপহরণের পর হত্যার মত ঘটনা জন্ম দিয়ে কলঙ্কিত অধ্যয় রচিত করে । মুলত গডফাদার নোমান শরীফের ফোনে নির্দেশে এ ঘটনা ঘটিয়েছে তার বাহিনীর সদস্যরা বলে বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। জানা গেছে, মহেশখালীতে নোমান সন্ত্রাসী গ্রুপের গডফাদার।
তাদের আওয়ামীলীগের প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় গোটা এলাকা একটি সন্ত্রাসের ভূমিতে পরিণত হয়েছে। জুলাই অভ্যুথান হওয়ার পর তার লোকজন এলাকা থেকে স্বদল বলে বিতাড়িত হলে একজন অ্যাডভোকেট হওয়া সত্বেও স্রেফ প্রতিশোধ নিতে তার নিজস্ব বাহিনী গড়ে তোলেন নোমান। এবং ধীরে ধীরে গডফাদারে পরিণত হন। তিনি বিশাল নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করে কালারমারছড়া পাহাড়ে পলাতক আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীদের সংগঠিত করে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করে তুলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
নোমানও একজন গডফাদার
দেখা গেছে, নোমান নিজেও এলাকার বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী বাহিনীর গডফাদার। তারই ছত্রছায়ায় লালিত হচ্ছে সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান তারেক বাহিনী, লম্বা তারেক বাহিনী, কালাবদা বাহিনী, রশিদ বাহিনী ও কালা জাহাঙ্গীর বাহিনী। এসব বাহিনীর প্রধানরা সবাই নোমানের নিকট আত্মীয়। তাদের মধ্যে রয়েছেন নোমানের আপন ভাই পলাতক তারেক চেয়ারম্যান , আপন চাচা কালাবদা, আত্মীয় রশিদ ডাকাত, মামাতো ভাই নুরুল ইসলাম মেম্বার ও তার বাবার আরেক পালকপুত্র কালা জাহাঙ্গীর।
এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নথিতেও বিভিন্ন সময় নোমানকে সন্ত্রাসীদের একজন গডফাদার হিসেবে দেখানো হয়েছে।
একটি অংশ নিরাপদে?
একাধিক সন্ত্রাসী, সন্ত্রাসী বাহিনী ও তাদের গডফাদারদের ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশিত হলেও তাদের একটি অংশ নিজেদের নিরাপদ মনে করছে। ইতোমধ্যে তোফায়েল আহমেদ হত্যায় জড়িত কয়েকজন সন্ত্রাসীকে আটক করে পুলিশ। পুলিশের তাদের অস্ত্র ভাণ্ডার থেকে বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা জরুরি মনে করছে স্থানীয় বাসিন্দারা। নোমান শরীফ, তারেক ও লম্বা তারেকের সহযোগীদের ধরতে গত দু’দিনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একাধিক অভিযান পরিচালনা করেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান কোন দিকে মোড় নিচ্ছে তার গতিবিধি দেখে পা ফেলতে চায় অন্যসব সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসী বাহিনীগুলো। তাই তারা আপাতত নিরাপদ আশ্রয়ে চুপচাপও রয়েছে।
এদিকে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীদের ডেরায় পুলিশ বারবার হানা দেওয়ায় সন্ত্রাসীদের একটি অংশ নিজেদের নিরাপদ ভাবতেও শুরু করেছে। সংবাদে সন্ত্রাসী তালিকায় কোনো কোনো সন্ত্রাসী ও তাদের গডফাদারদের নাম বাদ পড়ায় অনেকে হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন মনে করে নিজেদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ধারণ করে আছেন বলেও সূত্রে প্রকাশ।
প্রশাসনের হিসাব-নিকাশ
নিজেদের রক্ষার ব্যাপারে মৃত ওসমান গণির পুত্র গডফাদার নোমান বাহিনীর সন্ত্রাসীরা যে যতোই আস্থাশীল হোন না কেন প্রশাসনের হিসেব অন্য জায়গায়। সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ইতোমধ্যে মহেশখালীর সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে রেডম্যাপ সম্পন্ন করেছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানতে পেরেছে। খুব শীগগিরই এর একটা প্রভাব সন্ত্রাসী বাহিনীর ওপর পড়তে যাচ্ছে বলে সূত্রে প্রকাশ। ক্ষমতার এক বছরে পা দিয়েছে অন্তবর্তী সরকার। বৃহৎ স্বার্থে সন্ত্রাসী যেই হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়ায় নামছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। এ নিয়ে কক্সবাজারের ইতোমধ্যে ‘সন্ত্রাসীদের আতঙ্ক’ হিসাবে পরিচিত পাওয়া পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ‘সন্ত্রাসী কার’ এ পরিচয় না দেখে অভিযানে নামছেন বলে প্রতিবেদকে জানিয়েছেন।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার মো. সাইফউদ্দীন শাহীন জানান, পুলিশ দ্বীপজুড়ে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সন্দেহজনক কয়েকজনকে। অভিযান চলমান থাকবে হত্যার মুল আসামীরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh