রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী গোদাগাড়ীর মাটিকাটা ইউনিয়নের (ইউপি) মহব্বতপুর গ্রামের জয়দুল ইসলামের পুত্র শরিফুল ইসলাম ছিলেন সাবেক এমপি ফারুক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহচর ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি। গণঅভ্যুত্থানে দেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। কিন্ত্ত এখানো এই যুবলীগ নেতার দাপট কমেনি তার দাপটে অতিষ্ঠ এলাকার মানুষ বলেও অভিযোগ উঠেছে।এদিকে গত ২৭ আগস্ট বুধবার শরিফুলের বিভিন্ন অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে গ্রামবাসি ডাকযোগে রাজশাহী জেলা প্রশাসক(ডিসি) ও পুলিশ সুপার(এসপি) এর কাছে লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সাবেক এমপি ফারুক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে শরিফুল এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে নানা অপকর্ম করেছেন।তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও এখানো তার দাপট কমেনি।এমনকি সরকারি খাস জমি বিক্রি, প্রতিবন্ধী ভাতা,মাতৃত্বকালীন ভাতা ও চাকরির নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
এদিকে স্থানীয়রা যুবলীগ নেতা শরিফুল ইসলামকে আটক ও তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে আসছেন কিন্ত্ত অদৃশ্য কারণে এখানো সে ধরাছোঁয়ার বাইরে।এতে জনমনে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা জানান, জয়দুল ইসলাম ও তার পুত্র যুবলীগ নেতা শরিফুল ইসলাম তারা বাপ-বেটা সিন্ডিকেট করে এলাকার খাস পুকুর দখল,খাস জমি বিক্রি ও কথিত খানকা (মাজার) নিয়ন্ত্রণ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। গ্রামবাসির অভিযোগ সন্ধ্যা হলেই খানকায় বসে গাঁজা সেবনের আসর চলে গভীর রাত পর্যন্ত্য।
অন্যদিকে সেখানে গাঁজা সেবন বন্ধ ও মাজারের ১৫ বছরের আয়-ব্যয়ের হিসেবে চাওয়ায় নবাব আলী নামের একজনকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছে শরিফুল বাহিনী। গ্রামবাসি জানান, মাছমারা মোড়ে ভান্ডারী দরবার শরিফ নামে একটি খানকা রয়েছে।দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর খানকা নিয়ন্ত্রণ করেছেন যুবলীগ নেতা শরিফুল ও বাবা জয়দুল। প্রতি বছর সেখানে ওরশ অনুষ্ঠিত হয়। এসব ওরশে ভক্তদের কাছে থেকে অনুদান হিসেবে কমপক্ষে দু’লাখ টাকা করে আদায় হয়। খানকায় গাঁজা সেবন বন্ধ ও আয়-ব্যয়ের হিসেব চাইলে শরিফুলের সঙ্গে নবাব আলীর বিরোধ সৃষ্টি হয়।নবাব আলীর অভিযোগ তারা বাপ-বেটা খানকার লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ২৩ জুলাই গভীর রাতে যুবলীগ নেতা শরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে জয়দুল,ওলিউল,,বনো, রবিউল ও সাগরসহ বেশ কয়েকজন মিলে নবাব আলীকে বেধড়ক মারপিট করে গুরুতর জখম করে রাস্তায় ফেলে রাখে। খবর পেয়ে নবাবের পরিবারের সদস্যরা তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসা করান।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাটিকাটা ইউপির মহব্বতপুর মৌজায়, ১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত ৩০, ৩২ ও ৩৩ নম্বর দাগে ৮১ শতক সরকারি খাস জমি রয়েছে। জয়দুল ও তার পুত্র শরিফুল সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ৩০০ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লেখাপড়া করে এসব খাস জমির সিংহভাগ পজিশন বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।এছাড়াও এক নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত সুগান দিঘীর ২ নম্বর দাগে ১৫ শতক জমি আব্দুর রশিদের কাছে বিক্রি করে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন জয়দুল আলী।
আব্দুর রশিদ বলেন,তার কাছে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি বিক্রির কথা বলে খাস জমি দিয়ে তার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন জয়দুল ইসলাম। তিনি জয়দুলের শাস্তি ও টাকা ফেরত চান।
অন্যদিকে ইউপির মহব্বতপুর মৌজায় ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত ১১৮ নম্বর দাগে ৯ বিঘা জমি রয়েছে।বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে জয়দুল ও শরিফুল তারা বাপ-বেটা, এলাকার রিয়াজুল ও আনারুলের কাছে থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে তাদের কাছে ১০ কাঠা করে জমি বিক্রি করে দিয়েছেন।
রিয়াজুল ও আনারুল বলেন, তাদেরকে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দেখিয়ে খাস দিয়ে প্রতারণা করেছেন জয়দুল ও শরিফুল।এছাড়াও মাছমারা মৌজায় ৩টি,হাউসপুর মৌজায় ২টি ও কুড়লবাড়িয়া মৌজায় একটিসহ বিভিন্ন এলাকায় সরকারি খাস পুকুর দখল করে নিয়ে আছেন শরিফুল ইসলাম। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে পুকুর জবরদখল ও মাছ লুটের মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। ভুক্তভোগীরা যুবলীগ নেতা শরিফুল ইসলামকে আটক ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, এমন অভিযোগ তার কাছে আসেনি।তিনি বলেন,অভিযোগ হলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।এবিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব জমি দুই নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত বিনিময় মুলে কয়েকজনকে পজিশন দেয়া হয়েছে,এর সঙ্গে নয়মুদ্দিনও সম্পৃক্ত রয়েছে,এখন তাকে ফাঁসানোর জন্য তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনা হচ্ছে।তিনি বলেন,খাস পুকুর দখল, খাস জমি বিক্রি ও খানকা নিয়ন্ত্রণসহ সব অভিযোগ পুরোটাই মিথ্যা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh