কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলায় ধরলা নদীবেষ্টিত নিভৃত গ্রাম জনতারহাট মুন্সিপাড়া। বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের এই অজপাড়াগাঁয়ের পরিচিতি উপজেলার গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। এটা সম্ভব হয়েছে সোলাইমান হোসেন ও রেগুনা বেগম রিনা নামে এক দম্পতির সুবাদে। বেকার যুবক ও তরুণীদের কর্মসংস্থানে তারা নিজ গ্রামে জুতা ও চামড়ার পণ্য তৈরির কারখানা স্থাপন করেছেন।
সোলাইমান ও রিনার প্রতিষ্ঠিত জুতা তৈরির কারখানার নাম ‘বেস্ট সুজ অ্যান্ড হ্যান্ডিক্রাফটস’। কারখানায় নারী-পুরুষ ও শিশুদের বাহারি মডেলের জুতা তৈরি হয়। অত্যাধুনিক মেশিনে উন্নতমানের জুতা তৈরি করা হচ্ছে কারখানাটিতে। এই কারখানার জুতা দেশের বিভিন্ন নামিদামি শোরুমে স্থান করে নিয়েছে। সুনামের কারণে কারখানাটির জুতার চাহিদা ও উৎপাদন বাড়ছে। উলিপুর উপজেলাজুড়ে সোলাইমান ও রিনা দম্পতির সফলতার গল্প এখন মানুষের মুখে মুখে।
মো. সোলাইমান হোসেন জানান, তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে রাজধানীর একটি লেদার ফ্যাক্টরিতে চাকরি করতেন। এক সময় দুজনে মিলে নিজ গ্রামেই জুতার কারখানা করার সিদ্ধান্ত নেন। স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিজেদের জমানো অর্থ ও জমি বিক্রি করে ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে জুতা তৈরির ৪০টি আধুনিক মেশিন কিনে কারখানা স্থাপন করেন। ঢাকা থেকে প্রশিক্ষক এনে গ্রামের আগ্রহী ছেলেমেয়েদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কারখানায় নিয়োগ দেন। ২০২৩ সালে মাত্র ১০ জন শ্রমিক দিয়ে কারখানার যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে ৭৫ জন নারীসহ এ কারখানায় শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, প্রায় ৫০ শতক জমিতে তিন তলা একটি ভবন ও একটি টিনশেড ভবন নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘বেস্ট সুজ অ্যান্ড হ্যান্ডি ক্রাফটস’-এর কারখানা। অত্যাধুনিক মেশিনের মাধ্যমে দক্ষ শ্রমিকরা চামড়ার জুতা, স্যান্ডেল, লোফার, চামড়ার মোজা, লেডিস জুতা, ব্যাগ, মানিব্যাগ, ওয়ালেটসহ উন্নতমানের চামড়াজাত পণ্য তৈরি করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. আব্দুল কাদের, মো. মমিনুল ইসলাম ও হাজেরা বেগম বলেন, এমন অভাবি গ্রাম এলাকায় জুতার কারখানা হবে এটা তারা স্বপ্নেও ভাবেননি। কারখানাটিতে স্থানীয় শতাধিক নারী-পুরুষ চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কারখানায় কাজ করে প্রতিদিন একেকজন শ্রমিক ৫০০-৬০০ টাকা মজুরি পাচ্ছেন। এতে এলাকার দরিদ্রতা দূর হচ্ছে। এলাকার মানুষ এতে খুশি।
কারখানায় কর্মরত রিনা বেগম, আরজিনা বেগম, সাবিনা ইয়াসমিন, জান্নাতুন ফেরদৌসি, নুর আলম ও মাহফুজার রহমান বলেন, আগে ১৫০-২০০ টাকায় ক্ষেতে-খামারে কাজ করতেন তারা। গ্রামে কাজ না থাকলে ঢাকা বা বড় কোনো শহরে গিয়ে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। গ্রামে জুতার কারখানা হওয়ায় তারা বাড়িতে থেকেই কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। কারখানাটিকে ঘিরে গ্রামের মানুষ অনেক স্বপ্ন দেখছেন। মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এলাকার উন্নয়ন হবে।
স্থানীয় তরুণী হাবিবা বেগম ও শাম্মি আক্তার জানালেন, এ কারখানায় সাশ্রয়ী মূল্যে উন্নতমানের জুতা বিক্রি হয়। নিজ গ্রাম ও আশপাশের এলাকার মানুষ সবাই এখান থেকে জুতা কেনেন।
বুড়াবুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মো. আশাদুজ্জামান খন্দকার বলেন, প্রত্যন্ত গ্রামে এ ধরনের কারখানা করা অনেক সাহসী উদ্যোগ। কারখানাটি এলাকায় সুনাম কুড়িয়েছে। এলাকায় শ্রমিকের পারিশ্রমিক তুলনামূলক কম হওয়ায় কারখানাটি দিনদিন ভালো করবে বলে তিনি আশাবাদী।
কারখানা ব্যবস্থাপক মো. রেজাউল ইসলাম রোহান বলেন, বায়ার ও নিজস্ব মার্কেটিং ব্যবস্থায় প্রায় সারাদেশে তাদের পণ্য বিক্রি হচ্ছে। তবে অনিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুতের সমস্যা দূর হলে চাহিদা অনুযায়ী জুতা উৎপাদন করা সম্ভব।
তিনি জানান, বর্তমানে কারখানায় পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার জোড়া জুতা তৈরি হয়। গত দুই বছরে তাদের পণ্যের চাহিদা ও উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে। কারখানার মালিক মোঃ সোলাইমান হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দরিদ্রতা দূরীকরণ ও স্বাবলম্বী করার উদ্দেশে নিজ গ্রামে কারখানা করেছি। কারখানায় বর্তমান কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছি। পণ্য প্রতিদিন অনলাইনে ও বিভিন্ন শোরুমে অর্ডারের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে। তিনি জানান, বাজারে তাঁর কারখানার তৈরি জুতার চাহিদা ভালো। এ কারণে নানা প্রতিকূলতা থাকলেও কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা ধীরে ধীরে বাড়ানো হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম বিসিকের উপব্যবস্থাপক শাহ মোহাম্মদ জোনায়েদ বলেন, তিনি বেস্ট সুজ অ্যান্ড হ্যান্ডি ক্রাফটস কারখানার মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কুড়িগ্রাম বিসিকে তাঁকে কারখানা স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আগ্রহী হলে তাঁকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh