ছবি: সংবাদ সারাবেলা।
ঝিনাইদহ কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তাদের কার্যালয় যেন প্রকাশ্যে ঘুষ বাণিজ্যের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ভ্যাট নিবন্ধন থেকে শুরু করে মামলা নিষ্পত্তি প্রতিটি ধাপেই চলছে নগ্ন দুর্নীতি। ব্যবসায়ী, শিল্পপতি থেকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা অফিসে ঢুকলেই পড়ছেন বিপাকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন ব্যবসা শুরু করতে হলে উদ্যোক্তাদের ভ্যাট নিবন্ধন সার্টিফিকেট নিতে হয়। অভিযোগ করা হয়েছে, অনলাইনে সব কাগজপত্র সম্পন্ন করা হলেও অফিসে ফাইল আসার পর থমকে যায় সব অগ্রগতি। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীরা ভুক্তভোগীদের ইঙ্গিত দিয়ে বলেন ‘চা মিষ্টির' খরচ ছাড়া ফাইলের কোন অগ্রগতি হয় না এই দপ্তরে। লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রেও চলে একই চিত্র। অনেক উদ্যোক্তা জানিয়েছেন, নবায়নের জন্যই দিতে হয় ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিল্প মালিক সংবাদ সারাবেলা কে বলেন, “আমরা ব্যবসা করতে এসেছি, ঘুষ দিতে নয়। কিন্তু এই অফিসে টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। সরকারের রাজস্ব যাবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে, কিন্তু সিস্টেম করে আদায়কৃত অর্থের অর্ধেক চলে যায় কর্মকর্তাদের পকেটে।”
ব্যবসায়ীদের দাবি, ভ্যাট অডিট এখন দুর্নীতির বড় খাত। অডিট রিপোর্ট ও বাৎসরিক ভ্যাট পরিশোধের প্রত্যায়নপত্র কত টাকায় লেখা হবে তা আগেই চুক্তি করে নেয়া হয়। নগদ টাকা না দিলে নানা ফাঁকফোকর ধরে মোটা অঙ্কের টাকার মামলা দিয়ে ভয় দেখানো হয়। পরে আবার ঘুষের বিনিময়ে সেই মামলা আড়াল করা হয়ে থাকে। আটককৃত পণ্য ছাড়াতেও দিতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা।
এদিকে গত ২৬ আগস্ট সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় চমক প্রমদ এক দৃশ্য। অফিসের ভেতরে কেউ লাউড স্পিকারে গান শুনছেন, কেউ ইউটিউবে খবর দেখছেন, কেউ আড্ডায় ব্যস্ত। এরই মধ্যে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সজীব তালুকদার কে টেবিল থেকে টেবিলে ঘুরে কর্মকর্তাদের হাতে টাকা তুলে দিতে দেখা যায়। এ ঘটনার দৃশ্য ভিডিও ফুটেজে ধরা পড়ে।
ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যায়, আদায়কৃত ঘুষের টাকার ভাগাভাগি। সজীব তালুকদার প্রত্যেক টেবিলে কর্মকর্তাদের মধ্যে টাকা বণ্টন করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার উম্মুল ওয়ারা বলেন, “আমি এই অফিসে সদ্য যোগদান করেছি। ভিডিও ফুটেজে যাকে দেখা গেছে, তিনি বাজার করার জন্য সহকর্মীদের কাছ থেকে টাকা তুলছিলেন।” তবে ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যায়, এটি কোনো বাজার খরচ নয় বরং মোটা অঙ্কের ঘুষের টাকা ভাগাভাগির দৃশ্য । সজীব তালুকদার টাকা নিচ্ছেন না, বরং কর্মকর্তাদের মধ্যে বণ্টন করছেন।
একটি সূত্র জানিয়েছে, নতুন উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীদের জন্য ট্রেড লাইসেন্স, টিন ও বিন সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু তারা ভ্যাট অফিসের অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে যোগসাজশ করে সরকারি নিয়মকানুন না মেনে বাৎসরিক মাসোহারা দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে। সূত্রটি আরো জানায়, ভ্যাট অফিসের কর্মকর্তারা বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ব্যবসায় লগ্নীকৃত টাকার উৎস জানতে চাই। এসময় তারা নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে তাদের সাথে বাৎসরিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রশ্ন তুলেছেন, “সরকার যদি প্রকৃত পক্ষে রাজস্ব আদায়ে আন্তরিক হয়ে থাকে, তবে এই ভ্যাট অফিসের ভেতরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কেন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না এটায় তাদের প্রশ্ন।
ব্যবসায়ী মহল বলছেন, সরকারি কোষাগারে রাজস্ব বাড়াতে হলে প্রথমেই বন্ধ করতে হবে এ ধরনের প্রকাশ্যে ঘুষ বাণিজ্য। অন্যথায় উদ্যোক্তারা আরও হতাশ হবে বিনিয়োগেও ভাটা পড়বে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh