বংশ পরম্পরায় যুগ-যুগ ধরে প্রতি-বছরের ন্যায় এবারও প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার মানুষের সমাগমে অত্যান্ত ঝাকজমকপূর্ণভাবে নালুয়া চা-শ্রমিকসহ বাগানবাসীরা এই কারাম উৎসব পালন করেছে।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার নালুয়া চা বাগানের ফুটবল খেলার মাঠে এ ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসব পালন করেছেন ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের লোকজনরা। সিলেট, মৌলভীবাজার, সাতগাঁও, সুরমা, দেউন্দী, লালচান্দ ও আমু-নালুয়া চা-বাগানসহ বিভিন্ন বাগান থেকে আগত ওরাওঁ, মুন্ডা, ঝড়া, হাড়িয়া, বারাইক, কর্মকার, ভূমিজ, তুরিয়া, নোহানী ও চাঁওতাল সম্প্রদায়সহ আদিবাসী সম্প্রদায়ের ১২-১৩টি নৃত্যের দল অংশ নেয়।
কারাম উৎসবে তারা নেচে-গেয়ে তাদের নিজেদের ভাষা, সাংস্কৃতি আর ঐতিহ্য তুলে ধরেন।
কারাম একটি গাছের নাম। বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠির মানুষের কাছে এটি একটি পবিত্র গাছ, মঙ্গলেরও প্রতীক। পূজার সময় দুই ভাই ধর্মা ও কর্মার জীবনী তুলে ধরা হয়। তারা বিশ্বাস করেন ধর্ম পালন করায় ধর্ম রক্ষা পান সকল বিপদের হাত থেকে। আর কর্মা ধর্ম পালন না করায় ক্ষতি হয়। কারামডাল অস্থায়ী মণ্ডপে পুঁতে রেখে পূজা-অর্চনা আর নাচ-গান ও কিচ্ছা বলার মধ্য দিয়ে প্রতিবছর কারাম উৎসব পালিত হয়। এ সময় পুরো এলাকার ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী সম্প্রদায়সহ সকল সম্প্রদায়ের মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়।
পূজা শেষে পরদিন কারাম ডাল উঠিয়ে গ্রামের তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের নারী-পুরুষ নেচে গেয়ে গ্রামের বাড়ি-বাড়ি ঘুরে পুকুরে জল বিসর্জন দেন। আদিবাসীরা এ কারাম উৎসবের জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন। এ উৎসবে আদিবাসী সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক দলগুলো তাদের নাচ-গান পরিবেশন করেন।
আমুরোড হাইস্কুল এন্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষক রামেস্বর ভৌমিক ও নালুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবু হরেন্দ্র উরাং এর যৌথ সঞ্চালনায় প্রথম অধিবেষনে সভাপতিত্ব করেন নালুয়া চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি ভূপেন্দ্র উরাং। দ্বিতীয় অধিবেষনে সঞ্চালনায় ছিলেন আকাশ মুন্ডা, দেবরাম মুন্ডা এবং বিচারক ডুলনা প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক প্রবীর ঝরা, নালুয়া উচ্চ বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক দূর্জয় তাতী।
উৎসবে উপস্থিত ছিলন আমুরোড হাইস্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আব্দুর রউফ, নালুয়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক ইফতেখার এনাম, মো. রফিকুল ইসলাম, সাব্বির আহমেদ, মো. আব্দুল কাদির সহ আরো অনেকেই।
উৎসব শেষে ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের ১২ থেকে ১৩টি নৃত্যের সাংস্কৃতিক দলগুলোকে পুরস্কৃত করা হয়। প্রথম স্থান অধিকারী সাংস্কৃতিক দলকে ৫ হাজার টাকা, দ্বিতীয় স্থান অধিকারীকে সাড়ে ৪ হাজার. তৃতীয় স্থান অধিকারীকে ৪ হাজার টাকা ও অংশগ্রহণ করা প্রত্যেক সাংস্কৃতিক দলকে ৩ হাজার টাকা করে পুরস্কৃত করা হয়।