. আ.লীগ নিয়ন্ত্রিত ডিলার সিন্ডিকেটে জিম্মি কৃষকরা
. গুদামে সার মজুত, তবুও বাজারে হাহাকার
মৌলভীবাজারে গুদামে পর্যাপ্ত সার মজুত থাকলেও কৃষকদের জন্য নেই। শুধুই হাহাকার। রোপা আমনের ভরা মৌসুমে ধান বাঁচাতে মরিয়া কৃষকরা জিম্মি আ.লীগ নিয়ন্ত্রিত ডিলার সিন্ডিকেটের হাতে। ‘সার নেই’ নাটক সাজিয়ে সরকারি নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা গুনতে বাধ্য করা হচ্ছে কৃষকদের। অথচ বাস্তবে পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক ডিলাররা বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কৃষকদের কাছে নিচ্ছে চড়া দাম।
রোপা আমন ধানের ভর মৌসুমে মৌলভীবাজারে সারের জন্য কৃষকদের হাহাকার দেখা দিয়েছে। প্রয়োজনীয় সার না পেয়ে তারা বিপাকে পড়েছেন। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে প্রতিটি বস্তা ইউরিয়া, ডিএপি, টিএসপি ও এমওপি সারের জন্য অতিরিক্ত ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা গুনতে হচ্ছে।
কৃষকদের অভিযোগ, সরকারি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে প্রতিটি বস্তা ইউরিয়া, ডিএপি, টিএসপি ও
এমওপি সারের জন্য অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে। অনেক জায়গায় আবার নির্ধারিত পরিমাণ সরবরাহও মিলছে না। ফলে মৌসুমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সেচ ও পরিচর্যার কাজে সমস্যায় পড়ছেন কৃষকরা। এছাড়াও মৌলভীবাজার জেলার ২০২৫-২৬ সনের বিসিআইসি সার ডিলারদের রাজনৈতিক বিবেচনায় ডিলার দেয়া হয়েছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ৯৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৮০ হাজার হেক্টরে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ইউরিয়া ৪ হাজার ২৯৬, টিএসপি ৫শত ৯০, ডিএপি ১ হাজার ৪১৯, এমওপি ৮ শত ৪০ মেট্রিক টন। এরমধ্যে ডিলাররা উত্তোলন করেছে ইউরিয়া ২ হাজার ৫, টিএসপি ৩শত ৩৮, ডিএপি ৭শত ২০, এমওপি ৪ শত ৭১ মেট্রিক টন। মজুদ আছে ইউরিয়া ১ হাজার ২৬, টিএসপি ১ শত ৭০, ডিএপি ২ শত ১৫, এমওপি ২ শত ৮ মেট্রিক টন সার।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গুদামে এখনো মজুত আছে বিপুল পরিমাণ সার কিন্তু বাজারে সংকট তৈরি করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। জেলার ৫৩ জন ডিলারের সবাই সরাসরি বা পরোক্ষভাবে আ.লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের সাথে যুক্ত। রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০২৫-২৬ সনের জন্য তাদেরকে ডিলারশিপ দেওয়া হয়েছে।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, সদর উপজেলার নতুন ব্রীজের মেসার্স আলহাজ্ব মাসুক ট্রেডার্সের মালিক বর্তমান পলাতক আওয়ামী চেয়ারম্যান আপ্পান আলীর আত্মীয়। শ্রীমঙ্গলের ভুনবীর ইউনিয়নে নিষিদ্ধ সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তির নামেও একাধিক ডিলার রয়েছে। ডিলারদের হাতেই গড়ে উঠেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তারা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কৃষকদের জিম্মি করে রাখছে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার জগৎপুর গ্রামের কয়েছ আহমদ বলেন, আমাদের ধান এখন সার ছাড়া বাঁচানো কঠিন। কিন্তু বাজারে গেলেই নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম চাওয়া হচ্ছে। বাধ্য হয়ে নিতে হচ্ছে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভুনবীর ইউনিয়নের ভিমসি গ্রামের কৃষক মহরম আলী, নাসির, মান্নান, বেলাল ও অজি উল্লাহ ইউরিয়া সার না পাওয়ার অভিযোগ করে বলেন, ৬ থেকে ৭ মাস ধরে মিলছেনা সার। তবে মোটা অংকের টাকা দিলেই কেবল মিলছে সার। এগুলো বস্তা প্রতি ১ হাজার ৮ শত টাকা। এর জন্য ম্যামো চাইতে হেলে ডিলাররা ম্যামো দিচ্ছে না।
সার চাইতে গেলে ডিলার বলে সারের বরাদ্দ নেই। কৃষকরা জানান, ১ হাজার ৩ শত পঞ্চাশ টাকায় সার বিক্রি করার কথা থাকলেও ১৮ শ থেকে ২ হাজার টাকা ব্যায় করলেই মিলছে সার, তাও ১ থেকে ২ বস্তা। এর জন্য ডিলারদের সাথে কৃষকদের অনেক দেনদরবার করতে হয়। ওই কৃষক জানান, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি সংকট মরোক্কর টিএসপি সার।
আশিদ্রোন ইউনিয়নের ভুজপুর বাজারের খুচরা সারের ডিলার আশিকুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, গত মাসে চাহিদার তুলনায় কম দিলেও এ মাসে এখনো কোন সার পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, গত ৬ থেকে ৭ মাস ধরে মরোক্কর বাংলা টিএসপি পাচ্ছি না। কিন্তু আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে সারগুলে চা-বাগানে বিক্রি করা হয়।
তিনি বলেন, সারের যদি সংকট থাকে তাহলে তো সব জায়গায় সংকট থাকার কথা। কিন্তু আমরা সার হবিগঞ্জ ও শায়েস্তাগঞ্জে চাইলেই পাই তবে টাকা বেশি দিতে হয়। শায়েস্তাগঞ্জে প্রতি বস্তা ডেপ সারের সরকার নির্ধারিত মূল্য ১ হাজার ২০ টাকা হলেও সেখানে তারা বিক্রি করে ১৩শত টাকায়। আর মরক্কোর টিএসপি সার সরকার নির্ধারিত মূল্য ১৩শ ২০ টাকা হলেও বিক্রি হচ্ছে ১৮ শত থেকে ২ হাজার টাকায়।
জেলা সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়নের উলুয়াইল গ্রামের কৃষক শেখ ইমাদ উদ্দিন বলেন, ডিলারদের ধরনা দিচ্ছি। কেউই সার দিতে পারছে না। ৩ দিন পর ২ বস্তা সার পেয়েছি।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় সারের ডিলারদের নিয়োগ দেয়া। যার কারণে বাজারে সমস্যা হচ্ছে। মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জালাল উদ্দীন বলেন, কোথাও কোথাও সংকট থাকতে পারে, সারের বড় কোন সংকট নেই। জেলার সবগুলো উপজেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে সার মজুত রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, অনিয়ম হলে ডিলারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় বাজারে সারের কৃত্রিম সংকটের বিষয়টি উর্ধবতন উর্ধ্ব কতৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh