× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

বিলুপ্তির পথে লাঠিটিলার হাতি

খোর্শেদ আলম (জুড়ী) মৌলভীবাজার

০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১:১৮ পিএম

বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা শেষ ৩টি মা বন্যহাতিকে টিকিয়ে রাখার জন্য লাঠিটিলা বনে কাজ করতে চায় বন বিভাগ। গাজীপুর সাফারী পার্ক বা দেশের অন্য কোনো স্থান থেকে হাতি স্থানান্তরপূর্বক পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে বিশেষায়িত কারিগরি কমিটি মৌলভীবাজারের জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার পাথারিয়া হিলস্ রিজার্ভ ফরেস্টের লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনাঞ্চল পরিদর্শন করেছেন।

প্রধান বন সংরক্ষকের কার্যালয় থেকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের আওতায় গঠিত এ কমিটি গত শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী এ বনাঞ্চল পরিদর্শন করেন। এ সময়ে কমিটি লাঠিটিলায় হাতি পুনর্বাসনের উপযোগিতা, বনাঞ্চলের অবকাঠামো, খাদ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার সম্ভাবনা যাচাই করা হয়।

বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লাঠিটিলা বনবিটের অধীনে ৫ হাজার ৬৩১ হেক্টর বনভূমি রয়েছে। মৌলভীবাজারের ৬০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে সিলেট বনবিভাগের জুড়ী ফরেস্ট রেঞ্জের লাঠিটিলা পাথারিয়া হিল রিজার্ভ ফরেস্টের অংশ। ২০১৫ সালের সর্বশেষ পরিমাপ অনুযায়ী বর্তমানে সংরক্ষিত বনের আয়তন ৮০ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে লাঠিটিলার আয়তন ২০ বর্গকিলোমিটার।

জুড়ীর লাঠিটিলায় গিয়ে এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা হয়। তাদের কাছ থেকে জানা যায়, দীর্ঘ ৪ যুগ আগে ভারতের আসাম রাজ্য থেকে আসা একদল বন্যহাতি বিচরণ করতো পাথারিয়া হিলস্ রিজার্ভ ফরেস্টে। দুই এক বছর আগেও পাথারিয়া বনে দল বেঁধে বিচরণ করতো এই হাতিগুলো। মাঝে মধ্যে আসা-যাওয়া করতো ভারতের আসাম রাজ্যের কিছু জায়গায়।

উল্লেখ্য, “টিকে থাকার লড়াইয়ে লাঠিটিলার চার বন্য হাতি” শিরোনামে দৈনিক সংবাদ সারাবেলা পত্রিকার অনলাইন ও প্রিন্ট সংস্করণে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সংবাদটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে এলে বিলুপ্তির পথে থাকা লাঠিটিলার ৪ মাদি বন্য হাতিগুলোকে ঘিরে সরকার একটি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে আরেকটি হাতি মারাগেছে ভারতের অংশে। বর্তমানে এদের সংখ্যা ৩ টিতে এসে দাঁড়িয়েছে।

এই উদ্যোগের মাধ্যমে লাঠিটিলায় বন ও বন্য হাতির জন্য নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত করার পাশাপাশি স্থানীয় মানুষের নিরাপদ বসবাসও নিশ্চিত করা হবে। পরবর্তী ধাপে বিষয়টি বাস্তবায়নের কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হবে।

সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির বলেন, “বন ও পরিবেশ কোনো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়—এগুলো সবার সম্পদ। দেশের মধ্যে লাঠিটিলা বন একটি সমৃদ্ধ বন হিসেবে পরিচিত। আমরা বনটি হাতির জন্য কতটা উপযোগী তা সঠিকভাবে জরিপ করে দেখবো। যদি দেখা যায় হাতির জন্য পর্যাপ্ত খাদ্যের ব্যবস্থা রয়েছে, তবে সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।”

তিনি আরও বলেন, “সবাই মিলে চেষ্টা করলে আমরা অবশ্যই ভালো কিছু করতে পারবো। তবে এ ক্ষেত্রে স্থানীয় মানুষের যেন কোনো ক্ষতি না হয়, সেটি সর্বাগ্রে বিবেচনায় রাখবে বন বিভাগ। পাশাপাশি বন জাগিদারদের প্রতি আহবান থাকবে—লাঠিটিলা বনের ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধি বজায় রাখতে সকলে একসাথে কাজ করতে হবে।”

বন সংরক্ষক বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল ঢাকা, সানাউল্লাহ পাটুয়ারী বলেন,“সিলেটের এই অঞ্চলে হাতির আধিবসতি ছিল-এটি কেউ প্রত্যক্ষ করেছেন, আবার কেউ শোনেছেন। সরকার চায়, এই এলাকায় হাতিকে কীভাবে সংরক্ষণ করা যায় তা নিশ্চিত করতে।”

বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ আলী রেজা খান বলেন, হাতির স্বাভাবিক বসবাসের জন্য একটি নির্দিষ্ট এলাকা থাকা জরুরি। এমন জায়গা না থাকলে হাতিকে বন্দী রাখা সম্ভব নয়। “হাতি স্বাভাবিকভাবেই জানে কোন জায়গা তাদের জন্য নিরাপদ। তবে ভারতের মতো দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে হাতির ওপর অত্যাচার অনেক কম।” তিনিও আরও বলেন, “সরকার যদি হাতির প্রজনীগুলোকে আনে, তবে সরকারি ভূমিতে একটি বিশেষ এলাকা ঘোষণা করা হবে।

সেখানে তাদের চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। মাহুতদের মাধ্যমে হাতির পরিচর্যা করা হবে। বিদেশে হাতিগুলোকে সুন্দরভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে রাখা হয়, কিন্তু আমাদের দেশে এত বড় এলাকা বা এত হাতি নেই। তাই ছোট উদ্যোগে বন্যহাতির সঙ্গে মিশে কাজ করা হবে। হাতি অত্যন্ত স্মরণশক্তি সম্পন্ন প্রাণী; তারা গন্ধ শুঁকে তাদের বংশ বা গোষ্ঠি চিনতে পারে। বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার ও শ্রীলঙ্কার হাতিগুলো একই বংশের।”

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.