কয়েকদিন যাবত মৌলভীবাজারের কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী বাসিন্দাদের মধ্যে অপেক্ষার প্রহর। এ অপেক্ষার প্রহর বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ার কারণে নয়। এ প্রহর আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের। তাই এ উৎসব এ জনপদের মানুষের উচ্ছ্বাস, হাসি আনন্দ-বেদনা একাকার। এর কারণ শুধুমাত্র যাদের ভিটেমাটি নদীতীরে শুধু তারাই বুঝবে।
বর্ষায় যে কুশিয়ারা তাদের কাদায় সেই কুশিয়ারা আবার বর্ষা শেষে তাদের হাসি-আনন্দেরও খোরাকও জোগায়। এটাই যেন নদী তীরের বাসিন্দাদের নিয়তি। সেই উচ্ছ্বাস আনন্দের সারথি ছিল গ্রাম বাঙলার নানা ঐতিহ্যের সাথে যুগযুগ ধরে মিশে থাকা ছলাৎছলাৎ ঢেউয়ের সাথে মিতালি করা ঐতিহ্যের নৌকা বাইচ।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেষ প্রান্ত শেরপুরের হামড়কোনা গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা কুশিয়ারা নদীতে এবারও কোরাস কন্ঠের সাথে ঢাকের বাজনা, নানা রঙের পাঁচমিশালি বৈঠার ছলাৎছলাৎ ছন্দ আর দর্শকদের হুই হুল্লোড়ে মুখরিত।
শুক্রবার বিকেলে কুশিয়ারা তীরে অনুষ্ঠিত হয় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। নদী তীরের এই আঙিনা জুড়ে প্রতি বছরই হয় এমন আয়োজন নৌকা বাইচ দেখতে দুপাড়ে জড়ো হন কয়েক হাজার মানুষ।
পুরো আয়োজন জুড়ে সেখানে ফুটে উঠে নদীমাতৃক বাংলার চিরায়ত দৃশ্য আর গ্রামীণ আনন্দের অনন্য বৈচিত্র্য। এই উৎসবের সারথি হতে শুধু যে মৌলভীবাজারের মানুষরা এসেছেন তা কিন্তু নয়, আশপাশের জেলা থেকেও বিপুল দর্শনার্থী ছুটে আসেন কুশিয়ারার তীরে।
রঙিন সাজে সজ্জিত নৌকা, হাতে বৈঠা আর ঢাক-ঢোলের তালে তালে গাওয়া গান, সব মিলিয়ে উৎসবের আবহে ভরে ওঠে নদী আঙিনা।
প্রতিটি নৌকায় ১৮-২০ জন বৈঠাবাজ একই ছন্দে বৈঠা চালিয়ে এগিয়ে চলে। তাদের উৎসাহ দিতে নদীর দুই তীরে দাঁড়িয়ে থাকা দর্শকেরা করতালি, স্লোগান আর উল্লাসে মাতিয়ে রাখেন পুরো পরিবেশ। প্রতিযোগিতায় সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দলগুলো অংশ নেয়। চ্যাম্পিয়ান হয় নবীগঞ্জ উপজেলার মরহমের তরী।
দিনভর ঢাক-ঢোল, বৈঠার শব্দ আর দর্শকদের উচ্ছ্বাসে মুখর ছিল কুশিয়ারা নদী। স্থানীয়রা প্রত্যাশা করছেন, গ্রাম বাংলার এই আয়োজন নিয়মিত হলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে টিকে থাকবে নৌকা বাইচের গৌরবময় ঐতিহ্যে।
অংশগ্রহণকারী শহীদুল্লাহ বলেন, নদীমাতৃক এ দেশে নৌকা বাইচ একসময় ছিল গ্রামবাংলার প্রধান বিনোদন। এখন তা প্রায় বিলুপ্তির পথে। নতুন প্রজন্মকে এই ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই এই আয়োজন।
দর্শনার্থী ইঞ্জিনিয়ার মহসিন আলী বলেন, আমরা ছোটবেলায় গ্রামে নৌকা বাইচ দেখতাম, আজ আবার কুশিয়ারায় সেই পুরনো দিনের আবহ ফিরে পেলাম। হাজারো মানুষ একসাথে এই উৎসব উপভোগ করছে, সত্যিই অভাবনীয় দৃশ্য। নৌকা বাইচ শুধু বিনোদন নয়, এটা আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ। আমি চাই, এ ধরনের আয়োজন প্রতিবছর নিয়মিত হোক, যাতে নতুন প্রজন্ম নদী ও নৌকার এই ইতিহাস জানতে পারে।”
স্থানীয় হামরকোনা গ্রামবাসীর আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান। পরে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন তিনি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh