মাদারীপুরের মাটিতে, যেখানে নদীর ঢেউয়ের সাথে মিশে যায় মানুষের স্বপ্নের ছায়া, সেখানে ৪ বছর ধরে এক অদৃশ্য জালে আটকে আছে এক গুরুত্বপূর্ণ সমীক্ষা প্রকল্প। “বরিশাল অঞ্চলের নদী সমূহের অববাহিকা ভিত্তিক পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা” এর আওতায় আড়িয়াল খাঁ নদের অববাহিকার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের এই কাজটি, যেন একটি আলোকিত পথের প্রথম ধাপ, কিন্তু এখনও অন্ধকারে ডুবে আছে। আমার হৃদয় কেঁপে ওঠে ভেবে, কত সাধারণ মানুষের জীবন এই বিলম্বে ক্ষয় হচ্ছে- যারা প্রতি বর্ষায় নদীর ক্রোধের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁপেন, তাদের জন্য এই সমীক্ষা শুধু একটা কাগজ নয়, বরং একটা আশার আলিঙ্গন। এটি না হওয়ায় মাঠের কাজগুলো স্থবির হয়ে পড়েছে, আর আড়িয়াল খাঁর অববাহিকার ছোট-বড় নদীগুলোর তীর ধসে যাচ্ছে, ফসলের মাঠগুলো গিলে খাচ্ছে নদীর গর্ভ, বসতবাড়িগুলো মুছে যাচ্ছে মানচিত্র থেকে। প্রতি বছর হাজারো পরিবার গৃহহীন হয়ে রাস্তায় ভিখারি হয়ে পড়ছে-এই দৃশ্য আমাকে ব্যথায় ভরিয়ে তোলে, কারণ এরা তো আমাদেরই মতো সাধারণ মানুষ, যাদের হাতে নেই কোনো অলৌকিক শক্তি, শুধু আছে অবিরাম সংগ্রামের ইচ্ছা। কর্মকর্তারা বলছেন, এই সমীক্ষা হয়ে গেলে প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করা যেত, নদীর ভাঙ্গন থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষকে রক্ষা করা যেত। আমি বিশ্বাস করি, এই অঞ্চলের মানুষদের জন্য এটি একটা সোনার সুযোগ-যাতে তাদের জীবন আবার ফুটে উঠতে পারে, ফসলের সবুজে, বাড়ির ছায়ায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মীরা আশা জানাচ্ছেন, সমীক্ষা শেষ হলে নদী ভাঙ্গন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যাবে, আর সেটা হবে সাধারণ মানুষের জন্য একটা স্থায়ী উপহার, যা তাদের হাসির মুখ ফিরিয়ে আনবে।
মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র থেকে জানা যায়, এই সমীক্ষা প্রকল্পের লক্ষ্য-মাদারীপুর জেলার সদর, রাজৈর ও কালকিনি উপজেলায় প্রবাহিত আড়াইয়াল খাঁ, আপার কুমার, লোয়ার কুমার, কাটা কুমার, মাদারীপুর বিলরুট, কীর্তিনাশা, সাধুর খাল, অবদা খাল ও টরকী নদীর তীরগুলোকে সুরক্ষিত করা, ড্রেজিং করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা। এটা শুধু নদীর জন্য নয়, বরং সেই সব পরিবারের জন্য যারা নদীর তীরে বাস করে, তাদের স্বপ্নগুলোকে বাঁচানোর জন্য। ২০২৪ সালের ২৮ মে এই প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন হয়েছে, কিন্তু তারপর থেকে কাজগুলো ধীরে ধীরে এগোচ্ছে, যেন একটা অদৃশ্য হাত টেনে ধরে রেখেছে। আমার মনে হয়, এই বিলম্বে কত আশা মরে যাচ্ছে। পূর্বে মাদারীপুরের সদর, কালকিনি ও রাজৈর উপজেলায় আড়াইয়াল খাঁ, আপার কুমার, লোয়ার কুমার, কীর্তিনাশা নদী এবং সাধুর খালের ভাঙ্গন রোধ ও নাব্যতা নিরসনে ১৪৮২.১৭ কোটি টাকা খরচের ৩৭.১১ কিলোমিটার তীর প্রতিরক্ষা ও ১২ কিলোমিটার ড্রেজিংয়ের প্রস্তাব (ডিপিপি) পানি উন্নয়ন বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া, মাদারীপুর সদরে আড়িয়াল খাঁ নদীর তীরে ১৬৯.২৫ কোটি টাকায় ৪.৩৫৬ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ ও পুনর্বাসনের প্রস্তাবও পরিকল্পনা কমিশনে গেছে। কিন্তু সবকিছু আটকে আছে সমীক্ষা প্রতিবেদনের অভাবে। এই অপেক্ষা আমাকে চিন্তায় ফেলে, কারণ এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা আরও কঠিন হয়ে উঠছে। যাদের জন্য এই প্রকল্পগুলো একটা আলোর রশ্মি হতে পারত, তাদের হাত থেকে সরে যাচ্ছে সেই আশা। আমি কল্পনা করি, এগুলো বাস্তবায়িত হলে কত পরিবারের মুখে হাসি ফুটবে, কত ফসলের মাঠ সবুজ হয়ে উঠবে।
সরেজমিন পরিদর্শনে যখন পা দিলাম এই অঞ্চলে, তখন হৃদয় ভারী হয়ে উঠল। চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই মাদারীপুরের তিনটি উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ, আপার কুমার, লোয়ার কুমার, অবদা খাল, কীর্তিনাশা, টরকি ও পালরদী নদীর তীরগুলো তীব্রভাবে ভেঙে পড়ছে। গত কয়েক মাসে শত শত বসতভূমি ও ফসলি জমি নদীর গর্ভে মিলিয়ে গেছে।এই দৃশ্য দেখে চোখে জল চলে আসে, কারণ এর পিছনে লুকিয়ে আছে হাজারো মানুষের কান্না, তাদের স্মৃতির টুকরো, সেই বাড়িটা যেখানে তারা স্বপ্ন বুনত। এই ভাঙ্গনগুলো শুধু মাটি নয়, মানুষের আত্মবিশ্বাসকেও ক্ষয় করছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, এই কষ্টের মাঝে আছে একটা সম্ভাবনা। যদি কর্তৃপক্ষ এখনই সচেতন হয়, তাহলে এই নদীগুলোকে আবার বাঁচানো যাবে, আর সেই সাথে বাঁচবে অসংখ্য পরিবারের ভবিষ্যৎ। এই ঘটনা আমাদের সকলকে জাগিয়ে তোলে, যাতে আমরা মিলে এই অঞ্চলের মানুষের পাশে দাঁড়াই, তাদের জন্য একটা নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তুলি।
মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজের কথা শুনে মনে হয়, এই লড়াইয়ে আমরা সকলে এক। তিনি বলছেন, মাদারীপুর ও বরিশাল অঞ্চলের নদীতীরবাসীদের জীবনমান রক্ষা ও তীর সংরক্ষণের জন্য একটা দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ৪ বছর ধরে আটকে আছে। প্রকল্পটি আলো দেখাতে অফিসিয়াল কাজগুলো ধীরগতিতে চলছে। তাঁর দাবি, এই অঞ্চলের মানুষের জীবনমান বাড়াতে ও নদী রক্ষায় প্রকল্প বাস্তবায়ন জরুরি। প্রশাসনিক জটিলতায় সাধারণ জনগণ ভুক্তভোগী হচ্ছে, সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে অনেকে। দ্রুত সমীক্ষা শুরু করে প্রকল্পগুলো এগিয়ে নেওয়া দরকার। এই কথাগুলো আমার হৃদয় ছুঁয়ে যায়, কারণ এতে ফুটে ওঠে সেই সব মানুষের কণ্ঠ, যারা নীরবে সহ্য করছে। আমি অনুভব করি, এই দাবি শুধু তাঁর নয়, আমাদের সকলের। যাতে এই অঞ্চলের মানুষ আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে, তাদের শিশুরা নিরাপদে খেলতে পারে নদীর তীরে।
মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সানাউল কাদের খানের কথায় আশার আলো জ্বলে ওঠে। তিনি বলছেন, মাদারীপুর সদর, রাজৈর ও কালকিনিতে আড়াইয়াল খাঁ, আপার কুমার, এমবিআর, লোয়ার কুমার, কীর্তিনাশা, টরকী নদী ও সাধুর খালের তীর সংরক্ষণ ও ড্রেজিংয়ের পরিকল্পনা আছে। ২০২১ সালে নেওয়া এই প্রকল্পে মাদারীপুরের জন্য ১৪৮২ কোটি ১৭ লাখ ৭১ হাজার টাকা বরাদ্দ। কিন্তু বাস্তবায়নের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা দরকার- ৪ কোটি ৮ লাখ টাকার এই সমীক্ষার দরপত্র মূল্যায়ন চলছে। কিছুটা ধীরগতি থাকলেও, এটি হয়ে গেলে টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা সম্ভব, আর সাধারণ মানুষ পাবে তার সুফল। এই কথা শুনে আমার মনে জাগে একটা উষ্ণ আশা-যেন এই অঞ্চলের নদীগুলো আবার হাসবে, মানুষের জীবন আলোকিত হবে। আমি প্রার্থনা করি, এই কাজগুলো দ্রুত এগিয়ে যাক, যাতে হাজারো পরিবারের হৃদয়ে শান্তি নামে, আর মাদারীপুর হয়ে ওঠে একটা উন্নয়নের উদাহরণ। এই ঘটনায় কর্তৃপক্ষের সুচিন্তিত দৃষ্টি পড়লে, সাধারণ মানুষের জন্য এটা হবে একটা অমূল্য উপহার।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh