ক্ষুদ্র ব্যবসার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিবন্ধন নেওয়া সমবায়ের আড়ালে গড়ে ওঠে প্রতারণার জাল। ফিক্সড ডিপোজিট ও সঞ্চয়ের নামে তথ্য গোপন করে সদস্যদের কাছ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে সমবায় কর্মকর্তারা গা-ঢাকা দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জমানো টাকা ফেরত পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন নালিতাবাড়ীর অসংখ্য ভুক্তভোগী।
জানা যায়, ২০১৮ সালে নালিতাবাড়ী সদর ইউনিয়নের আমবাগান বাজার এলাকায় ‘সেবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিঃ’ নামে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন আবু নাঈম, শাহীনূর ইসলাম ও এমদাদুল হক। সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন আবু নাঈম, সেক্রেটারির দায়িত্বে শাহীনূর ইসলাম এবং কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে এমদাদুল হক। তবে মূলত নাঈম ও এমদাদুল মিলে সমবায়ের নামে ফিক্সড ডিপোজিট স্কীম চালু করে আত্মসাতের কৌশল সাজান।
প্রথম দিকে নিয়ম মেনে কার্যক্রম চালালেও কিছুদিন পর আত্মীয়স্বজন ও সদস্যদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা ডিপোজিট নেয় তারা। বার্ষিক অডিটে এসব তথ্য গোপন করে প্রতারণার মাধ্যমে অল্প সময়েই হাতিয়ে নেয় প্রায় অর্ধকোটি টাকা। ২০২২ সালের দিকে কার্যক্রম বন্ধ করে দেন তারা। এরপর পলাতক হন কোষাধ্যক্ষ এমদাদুল হক। সদস্যরা টাকা ফেরত চাইলে সভাপতি আবু নাঈম টালবাহানা শুরু করেন এবং দায় চাপান কোষাধ্যক্ষের উপর। পরে এমদাদুলের বিরুদ্ধে প্রায় ১৯ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলা দায়ের করেন নাঈম।
২০২৪ সালে কার্যক্রম স্থবির হয়ে যাওয়ায় সরকারের পক্ষ থেকে সমিতির নিবন্ধন বাতিল করা হয়। তবে এখানেই থেমে থাকেননি আবু নাঈম। নতুন করে নিবন্ধন ছাড়া ‘আমবাগান বাজার সঞ্চয় ঋণদান সমিতি’ নামে আরেকটি সংগঠন চালু করে আবারো সুদের ব্যবসা শুরু করেন তিনি।
ভুক্তভোগীরা জানান, শুরুতে লাভের প্রলোভন দেখিয়ে তাদেরকে টাকার ফাঁদে ফেলা হয়। এখন টাকা চাইলে সভাপতি দায় এড়ান, আর কোষাধ্যক্ষ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সাইদুল ইসলাম হাসান জানান, “আমি ও আমার ভাই মিলে ছয় লাখ টাকা জমা দিয়েছিলাম। এখন চাইলে সভাপতি ক্যাশিয়ারের দোহাই দেন, ক্যাশিয়ার তো পলাতক।” রেজাউল করিম বলেন, “আমার পরিবারের নামে প্রায় সাত লাখ টাকার বেশি জমা দিয়েছি। টাকা ফেরত চাইলে মামলা করার পরামর্শ দিচ্ছেন সভাপতি।”
এছাড়া নারী ভুক্তভোগী জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর তার জমা রাখা দুই লাখ টাকার মধ্যে এক লাখ ফেরত পেলেও বাকি টাকা পাওয়া যাইনি আছে।
উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আমির হোসেন বলেন, “সমিতিটি নিয়ম ভেঙে তথ্য গোপন করে ফিক্সড ডিপোজিট চালু করেছিল। সর্বশেষ অডিটে মূলধন না থাকায় নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। বর্তমানে নতুন নামে যে সমিতি চলছে সেটিরও কোন নিবন্ধন নেই।” এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতারণার দায়ে নাঈম ও এমদাদুলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না নিলে আরও বহু মানুষ প্রতারিত হবে।