ঢাকা বন বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় এবং সেবা যুব উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর রেঞ্জে বৃহৎ আকারে তালবীজ রোপণ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার চন্দ্রাবিট ইউনিয়নের কালামপুর চাররাস্তা সংলগ্ন বনভূমিতে ১০ হাজার তালবীজ রোপণের কার্যক্রম শুরু হয়। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কালামপুরের নতুন বাগান ও সড়কের দুই পাশে তালগাছ লাগানো হবে। এ সময় কালিয়াকৈর রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুল করিমের নেতৃত্বে তালবীজ রোপণ কার্যক্রম শুরু হয়। উপস্থিত ছিলেন চন্দ্রাবিট কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন, সোহাগ হোসেনসহ বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সুফলভোগী ও স্থানীয় অংশীদাররা।
অনুষ্ঠানে সেবা যুব উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সেলিম রানা বলেন, এ বছর গাজীপুর জেলায় সাড়ে ১৫ হাজার তালবীজ রোপণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে প্রচুর বীজ সংগ্রহ করা হয়েছে। তিনি জানান, “আমাদের লক্ষ্য পরিবেশবান্ধব উদ্যোগকে এগিয়ে নেওয়া। তালগাছের ফলের চাহিদা যেমন রয়েছে, তেমনি বজ্রপাত প্রতিরোধেও এটি বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।”
চন্দ্রাবিট কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, “যদি প্রত্যেকে নিজেদের দায়িত্বে তালবীজসহ দেশীয় ফলজ গাছ লাগাতে এগিয়ে আসে, তবে আবারও সেই সোনালী দিনের মতো সবুজে ভরে উঠবে এ অঞ্চল।” কালিয়াকৈর রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুল করিম বলেন, “তালগাছ হারিয়ে যাওয়ার কারণে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা পিছিয়ে পড়েছি। এ উদ্যোগের মাধ্যমে তালগাছ ফিরিয়ে আনা গেলে তা হবে সময়োপযোগী ও পরিবেশবান্ধব পদক্ষেপ।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তালগাছ শুধু ফল উৎপাদনের মাধ্যম নয়, বরং পরিবেশ রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একটি পূর্ণবয়স্ক তালগাছ বছরে প্রায় ২০০ কেজি কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করতে সক্ষম, যা জলবায়ু ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক। পাশাপাশি এর শক্তিশালী শিকড় মাটির ক্ষয় রোধ করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, তালগাছ বজ্রপাতের আঘাত মাটিতে প্রবাহিত করতে সক্ষম হওয়ায় এটি প্রাকৃতিকভাবে একটি সুরক্ষামূলক ঢাল হিসেবে কাজ করে।
ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যে তালগাছকে ‘নির্ধারিত প্রজাতি’ ঘোষণা করা হয়েছে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার কমানোর জন্য। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দেন, গাছ কখনোই শতভাগ বজ্রপ্রতিরোধক নয়; যদিও তালগাছ প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষায় কার্যকর সহায়ক হতে পারে।
স্থানীয়ভাবে এই কর্মসূচি শুধু বনায়ন নয়, বরং খাদ্য, পরিবেশ ও বজ্র প্রতিরোধের একসাথে সমাধান হিসেবে নতুন আশা জাগিয়েছে।