শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা তৈরির কারিগররা। এখন সাজানো-গোছানোর কাজ চলছে। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। দেবী দুর্গাকে বরণে কারও হাতে কাদামাটি, কারও হাতে রংতুলি। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কর্মব্যস্ততায় সময় কাটছে তাদের। তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে পরম যত্নে প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন তারা, আর বর্তমানে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
শেরপুরের পালপাড়া ঘুরে দেখা যায় খড়, বাঁশ, কাঠ, সুতা আর মাটি দিয়ে নিপুণ হাতে গড়ে উঠছে দেবী দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ, কার্তিক ও অসুরের প্রতিমা। সময় যত ঘনিয়ে আসছে, তত বাড়ছে কারিগরদের ব্যস্ততা। অনেক মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হয়ে রঙের কাজ শুরু হয়েছে।
এবার শেরপুরের পাঁচ উপজেলায় মোট ১৭২টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সদর উপজেলাতেই রয়েছে ৮১টি মণ্ডপ। ভক্তদের জন্য প্রতিটি মণ্ডপে সাজসজ্জা ও নানান কারুকাজে গেট নির্মাণের কাজও চলছে। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মাধ্যমে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে, ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠী দিয়ে শুরু হবে মূল উৎসব, আর ২ অক্টোবর মহাবিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসব।
প্রতিমা কারিগর পলাশ চন্দ্র পাল জানান, কয়েক বছর ধরে প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে, কিন্তু ক্রেতারা প্রতিমার দাম বাড়াচ্ছে না। এতে প্রত্যাশিত আয় হচ্ছে না। কারিগর জগদীশ চন্দ্র পাল বলেন, “আগের মতো আর লাভ থাকে না। মাটি, কাঠ, বাঁশ—সবকিছুর দাম দ্বিগুণ হলেও প্রতিমার দাম বাড়েনি।”
কারিগর হিরেন চন্দ্র পাল বলেন, “এখন লাভ না থাকলেও বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখেছি। গত বছর ৪২টি প্রতিমার কাজ করেছিলাম, এবার মাত্র ১৮টি কাজ হাতে নিয়েছি। যদি সরকার কিছু আর্থিক সহযোগিতা দিত, তাহলে এ পেশা ভবিষ্যত প্রজন্মও টিকিয়ে রাখতে পারত।”
জুথি রাণী পাল জানান, “এখন সবকিছুর দাম বেশি, শ্রমিকদেরও বেশি টাকা দিতে হয়। তার ওপর কারিগর সংকট। একটি প্রতিমার কাজ শেষে কোনো মতে ১০ হাজার টাকা থাকে। এবার প্রতিমার দাম ৩০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করেছি।”
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট শেরপুর জেলা আহ্বায়ক জিতেন চন্দ্র মজুমদার বলেন, গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপগুলো সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। কমিটির সদস্যরা নিয়মিত পরিদর্শন করছেন এবং জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সর্বাত্মক সহযোগিতা দিচ্ছেন।
শেরপুর জেলা পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম জানান, পূজা নির্বিঘ্নে ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন করতে সব মণ্ডপে থাকবে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা। ইতোমধ্যেই মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।