এক সময়ে গ্রাম কিংবা শহর উভয় জায়গাতেই যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল প্যাডেল চালিত রিকশা। গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠোপথে, শহরের অলিগলিতে রিকশার টুংটাং শব্দ আজও অনেকের কানে বাজে। প্যাডেল চালিত রিকশায় উঠে বসলে নিজের মধ্যে রাজকীয় ভাব চলে আসতো। মাথা সামান্য উচু করলেই আকাশ দেখতে পাওয়া যেত। অথচ সময়ের পরিবর্তন আর দিন বদলে আজ ঐতিহ্য হারাতে যাচ্ছে রিকশার। প্যাডেল রিকশার ব্যবহার কমে গেলেও, এর স্মৃতি ও ঐতিহ্য আজও অমলিন। যান্ত্রিকতার এ আধুনিক যুগে কর্মজীবী মানুষের জন্য এখন পেশি শক্তির বদলে আবিষ্কার হয়েছে ইলেকট্রনিক ও সহজলভ্য যানবাহন। বিজ্ঞান যত উন্নত হচ্ছে, পৃথিবী তত ক্রমশ এগিয়ে চলেছে, আর সেই সাথে পিছিয়ে পড়ছে পুরনো অনেক ঐতিহ্য। একসময় রাস্তাঘাটে বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে চলতো তিন চাকার পায়ে টানা রিকশা। বর্তমানে ব্যাটারি চালিত তিন চাকার রিকশার দাপটে অনেকেটাই হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলার পায়ে টানা ঐতিহ্যবাহী রিকশা। করোনা কালিন সময় কর্মহীন হয়ে পড়া কম শিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষত কিংবা দিনমজুরের কাজ করা লোকেরাই এখন বেশিরভাগ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকলেও এটাই এখন কর্ম হারানো মানুষের প্রথম পছন্দ। কারো কারো মতে অলস মানুষের পেশা হিসেবে ব্যাটারিচালিত রিকশাই বেশি পছন্দ।
তাই পায়ে রিক্সার প্যাডেলের পরিবর্তে মানুষ এখন ঝুঁকে পড়েছে যান্ত্রিক এই ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সার প্রতি। এজন্য হারাতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী এই রিক্সা। তবে বেপরোয়া ব্যাটারি চালিত রিক্সাই দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে বেশি। এছাড়া অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেরা ব্যাটারি চালিত রিক্সা চালিয়ে বিভিন্ন দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। সরজমিনে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা শহর ও আশেপাশের এলাকায় প্রচুর রিকশা রয়েছে। তবে, এর প্রায় সবগুলোই ব্যাটারি চালিত। লক্ষ্মীপুর পৌর শহরে দু’একটা পায়ে টানা রিকশা রয়েছে। এছাড়া ব্যাটারি চালিত অটোরিকশায় সয়লাব পুরো জেলা।
প্রবীণ রিকশা চালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০০০ সালের দিকেও উপজেলা জুড়ে প্যাডেল চালিত রিকশার দাপট ছিল। কিন্তু বর্তমানে এর অস্তিত্ব বিলীন হতে চলেছে। হাতেগোনা ১০-১২টির মতো প্যাডেল চালিত রিকশা থাকলেও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ভিড়ে তা এখন খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যে কয়টা প্যাডেল চালিত রিকশা চলছে সেগুলোও চালাচ্ছেন বৃদ্ধরা। টাকার অভাবে অটোরিকশা কিনতে না পারা ও ব্যাটারি চালিত রিকশা চালাতে সাহস না পাওয়ায় তারা প্যাডেল চালিত রিকশা চালাচ্ছেন। প্যাডেল চালিত রিকশার জায়গা পুরোটাই দখল করেছে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পার্বতী নগর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের রিকশা চালক মহরম আলী (৫৫),নুর ইসলাম (৬০) ,সৈয়দ আহমেদ (৭০), বিজয়নগর এলাকার আমির হোসেন (৬০), বশিকপুর এলাকার তাজুল ইসলাম (৪৮) নূর আলম (৫০)সহ কয়েকজন প্রবীণ রিকশা চালকের সাথে কথা বললে তারা বলেন, বর্তমানে যাত্রীরা খুবই ব্যস্ত তাই তারা প্যাডেল চালিত রিকশায় চড়তে চান না। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আমরা মাত্র ১০-১২ জন এই রিকশা চালাচ্ছি। সবার বয়স হয়ে গেছে। অটোরিকশা চালানোর মতো সাহস নেই। এছাড়া অটোরিকশা কেনার মতো টাকাও নেই। তাই বাধ্য হয়েই এই রিকশা চালাচ্ছি।
তারা আরও বলেন, গত ১০-১২ বছর আগেও প্রতিদিন ৭০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা আয় করতে পারতাম। এখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে ২’শ থেকে ৩’শ টাকা আয় করতে পারি। আবার কোনো কোনো দিন সেটা হয় না। বাজারে জিনিসপত্রের যে দাম তা দিয়ে সংসার চলে না। এ পেশা ছেড়ে দিয়ে এখন অন্য কোনো পেশায় যাব তারও কোন উপায় নেই।
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের স্থানীয় প্রবীণ সাংবাদিক লক্ষ্মীপুর প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক (৬৩) লক্ষ্মীপুর সময় টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক মাজহার আনোয়ার টিপুর সাথে কথা হলে তারা বলেন, “আমরা ৮-১০ বছর পূর্বে বাজার করা সহ বিভিন্ন কাজে বের হলে এ রিকশাতেই ঘুরে বেড়াতাম। তাছাড়া সেই সময়ে এতো মোটরসাইকেলের বা অটো রিক্সা ব্যবহার ছিল না। অধিকাংশ মানুষ বাসা থেকে বের হয়ে প্যাডেল রিকশা যোগেই অফিস, আদালত ও দোকানপাটে পৌঁছাতো। খুব ভালো ছিল সেই দিনগুলো এখনকার মতো সেই দিনগুলোতে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটতো না। ছিল না কোন যানজট। বর্তমানে মানুষের মধ্যে অলসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অটো চালকরা পায়ের উপর পা তুলে অটো চালায় এমনকি এরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ড্রাইভার নয় । লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হোসাইন আহমদ হেলাল বলেন কোন এক সময় এরা গ্রামে - ক্ষেত খামারে কাজ করতে অথবা কেউ শহরে কুলির কাজ করতো এখন গ্রাম অথবা শহরে কুলি - মুজুর পাওয়া অনেক কষ্টকর কারণ সবাই এখন অটো রিকশা ক্রয় করে গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত ঘুরে বেড়াচ্ছে আর এদের প্রশিক্ষণ না থাকার কারণে দুর্ঘটনাও ঘটে। বর্তমানে শহরে যে পরিমান ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা চলাচল করে তাতে এই শহর থেকে প্যাডেল রিকশা বিলুপ্ত হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।’’
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh