× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

মহেশখালী কালারমারছড়া ওয়ার্ডে ৬ মাসে খুন,আইনশৃংখলার চরম অবনতি

এ.এম হোবাইব সজীব, কক্সবাজার

২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:৪১ পিএম । আপডেটঃ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:৪২ পিএম

ছবি: সংগৃহীত।

. ওসি ব্যস্ত ধান্ধায়, নিহত ৩ জন বিএনপির কর্মী

. গুপ্ত হত্যার ঘটনায় শঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা 

. অস্ত্রের কারখানায় পুলিশের অভিযান নাই

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার দেশের আলোচিত ইউনিয়ন কালারমারছড়া। এ কালারমারছড়ার কথা বললে দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষ চমকে উঠে। উপজেলার কালারমারছড়া ৭নং ওয়ার্ড বাজার এলাকায় একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে  অন্তত ৬ মাসে ৬টি হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হওয়ায় দেশবাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে। 

এসব হত্যাকান্ডে যেমন স্থানীয়দের চিন্তিত করেছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ১শত পরিবার। এতে কার লাভ কার ক্ষতি তা নিয়ে এলাকায় চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এদিকে সামাজিকভাবে কিংবা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব বিষয় সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হলেও নানা কারণে তা ভেস্তে যায়। অভিযোগ উঠেছে মহেশখালী থানার ওসি মনজুরুল হকের পক্ষপাতিত্বমুলক অভিযানে আইনশৃংখলার চরম অবনতি।

এক পক্ষ গ্রেপ্তার হলে রয়ে যাচ্ছে অন্যপক্ষ। চুনোপুঁটি গ্রেপ্তার করে পুলিশের এ গুণধর ওসি বাহবা নিলেও আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে তার তেমন কোন মাথা ব্যাথা নাই বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের অভিযানে ছোটখাটো অস্ত্র উদ্ধার হলে পাহাড়ের ভ্রাম্যমান অস্ত্রের কারখানায় আঁচড় লাগাতে পারেনি পুলিশ। যার কারণে পাহাড়ে অস্ত্র তৈরির ধুম পড়েছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। এতে তারা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

এদিকে প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে এক পক্ষ অন্যপক্ষকে ঘায়েল করতে খুনের মত ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। 

অভিযোগ রয়েছে আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে মৃত কবর বাসি ব্যক্তির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা নিয়েছেন স্বয়ং মহেশখালী থানার ওসি মনজুরুল হক। আইনশৃংখলা সমুন্নত রাখতে পুলিশকে নিরপেক্ষ থাকার অনুরোধ জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। খুনের ঘটনার ৬ জনের মধ্যে ৩জন ছিলেন বিএনপি সহযোগী সংগঠনের নিবেদিত কর্মী।

জানাগেছে, গত ৬ মাসে খুনের বলি হয়েছেন শফিউল আলম (২৯) নামের একজন নিহত হয়। গত ২০ মার্চ বৃহস্পতিবার এ খুনের এ ঘটনা ঘটে। কালারমারছড়ার যুবদল কর্মী মামুন আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। সোমবার (৫ মে) দিবাগত রাতে গুলিতে প্রাণ হারান তিনি।

সন্ত্রাসীরা মোহাম্মদ আবু (৪৮) নামে একজন মাছ ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করে। গত মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘরে ঢুকে ফরিদা ইয়াসমিন (৪৫) নামে এক প্রতিবন্ধী নারীকে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) ভোরে এ ঘটনা ঘটে। 

শনিবার (২৩ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে কালারমারছড়ার চিংড়িঘের থেকে সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে ব্যবসায়ী ও যুবদল কর্মী তোফায়েল আহমেদকে। রবিবার (২৪ আগস্ট) ভোরে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

একই কায়দায় যুবদল কর্মী কালারমারছড়ায় শাহাদাত হোসেন প্রকাশ দোয়েল (৪৯) নামের একজনকে গুলি করে হত্যা করেছে সাদ্দামের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯ টায় সময় এ ঘটনা ঘটে।

অভিযোগ উঠেছে দোয়েল খুনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ গ্রেপ্তার করে সাদ্দামকে আদালতে পাঠালেও, খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারে কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। তাছাড়া গণমাধ্যমের সামনে কোনো তথ্য প্রকাশ না করে পুলিশ নীরব থেকেছে, যা পরিবার ও স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। ওসি মনজুরুল হকের এমন নীরবতা হত্যার তদন্ত প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে অভিযোগ করেন নিহতের স্ত্রী জুলেখা বেগম। 

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে কালারমারছড়ার ৭ নং ওয়ার্ডে একটি বলি খেলাকে কেন্দ্র করে বিরোধের সুত্রপাত হয়। এতে তৎকালীন মৃত যুবলীগ ক্যাডার ছৈয়দ নুর বাঙ্গালী ও খউস্বর গোষ্ঠির সাথে ব্যাপক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। তখন ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সভাপতি ছৈয়দ নুর বাঙ্গালীর সৎ ভাই প্রয়াত সাবেক চেয়ারম্যান ওসমান গণী। ক্ষমতার প্রভাবে অনেকটা কোনঠাসা হয়ে পড়ে খউস্বর গোষ্টির লোকজন। তবে এসময় কোন হত্যাকান্ড কিংবা দখলবাজির মত কোন ঘটনা ঘটেনি।

২০০১ সালে ক্ষমতার পালাবদল বিএনপি জোট সরকার ক্ষমতায় আসলে ওই গোষ্ঠির লোকজনের প্রভাব বেড়ে যায়। এতে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয় ওসমান চেয়ারম্যানের পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে। কালারমারছড়া ইউনিয়নের  একজন সাবেক মেম্বার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, মুলত ২০০৭ সালে ছৈয়দ নুর বাঙ্গালীর নেতৃত্বে খউস্বর পরিবারকে এলাকা ছাড়া করতে গিয়েই হত্যাকান্ড শুরু হয়।

ঘটনার শুরুতেই  ২০০৪ সালে একদিনে ত্রি-ফল মার্ডারের মত ঘটনা ঘটে নিহত হন মোজাম্মেল, আবদুল গণী ও জয়নাল আবেদীন। এর কয়েকদিন পরেই নিহত হন নয়াপাড়ার ওসমান গণী। এরপরে গুপ্ত হামলায় ধারাবাহিকভাবে নিহত হন সাবেক চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ওসমান গণী, সাবেক মেম্বার ও তৎকালীন কালারমারছড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জবল চৌধুরী, মৌলভী আবদুল গফুর, বেলাল উদ্দিন, রুহুল কাদের ও আলাউদ্দিনসহ ১৪ জন। এতে নিহতদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগ সমর্থক।

স্থানীয় লোকজনের মতে, অপরাধে জড়িতদের আলোর পথে ফেরাতে চেষ্টা করলে কৌশলে বাধার সৃষ্টি করে প্রভাবশালীরা। তকমার কালিমা লাগিয়ে দে আতাঁতের। বাহিনী না থাকলে স্থানীয়ভাবে ওই প্রভাবশালী মহলের আর গুরুত্ব থাকে না। যার ফলে কোন মামলা আপোষ করতে চাইলেও বাধার সৃষ্টি হয় প্রভাবশালী মহল থেকে।

জানাগেছে, আওয়ামীলীগের শাসনামলে মধ্যে খানে কালারমারছড়া খুনখারাবি একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়ে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরে আসে। মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারত।

কিন্তু জুলাই অভ্যুথানের পর আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীরা এলাকা থেকে বিতাড়িত হলে নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে দীর্ঘ ১৭ বছর এলাকার বাইরে থাকা বিএনপি সমর্থিত খস্বর পরিবারের লোকজন। তাঁরা আস্তে আস্তে সাধারণ মানুষের ভালোবাসা পেয়ে সংগঠিত হলে মধ্যখানে এসে সাধারণ মানুষ তাঁদের কার্যকলাপ দেখে কিছুটা সরিয়ে আসে। এর পর শুরু হয় একের পর এক গুপ্ত হত্যা পড়তে থাকে একের পর এক লাশ।

স্থানীয়রা আরও মনে করেন, কালারমারছড়ার স্থানীয় রাজনীতি সন্ত্রাস নির্ভর হয়ে পড়ে। যার ক্যাডার বেশী তিনিই নেতা, এমন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে সাধারণ মানুষ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চায় না। তাদের পক্ষে কথা বলতে বাধ্য হয়। বিপক্ষে কথা বললে মিথ্যা মামলা ও নানা ভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। বিগত সময় জড়িত না  থেকেও হত্যা মামলার আসামী হয়েছেন এমন দৃষ্টান্ত রয়েছে।

মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ মনজুরুল হক জানিয়েছেন, যারা এসব ঘটনায় জড়িত তারা কোনভাবেই রেহাই পাবে না। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে এবং থাকবে। এসব খুনিদের ব্যাপারে কোন তথ্য থাকলে তা প্রশাসনকে দিয়ে সহযোগীতা করার অনুরোধ জানান তিনি।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.