ছবি: সংগৃহীত।
“আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা আমি বাধি তার ঘর, আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করিয়াছে পর”। পল্লী কবি জসিমউদ্দীনের কবিতার এই চরণগুলোর সাথে যেন বাস্তব জীবনের মিল খুজে পাওয়া যাচ্ছে পদ্মার পারের মানুষগুলোর। নদীগর্ভে নিজেদের সর্বস্ব হাড়িয়ে আবারো সেই নদীর পারকেই আপন করে নিতে চায় থাকতে চায় নদীর একটু কোল ঘেসে।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে আবারও পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকা গুলোতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই পদ্মার প্রবল স্রোতের কারণে গাঁওদিয়া ইউনিয়নের হাড়িদিয়া পশ্চিমপাড়া শিমুলবাড়ি এলাকায় বহু জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। শতাধিক বসতঘর ও একটি মসজিদ ভাঙনের মুখে পড়েছে। ভাঙন আতঙ্কে দুই শতাধিক পরিবার নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। অনেকেই ইতোমধ্যে নিরাপদ স্থানে সরে গেছেন।
সর্বনাশা পদ্মার ছোবলে প্রতিবছরই আঘাত হানছে আড়াই লাখ জনসংখ্যার এই উপজেলার মানচিত্রে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের আওতাভুক্ত না হওয়ায় গত দুই বছরে শতাধিক বসতঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। প্রায় দুইশ পরিবার অন্যত্র সরে যেতে বাধ্য হয়েছে। বর্ষার সময় ভাঙন শুরু হলে কর্তৃপক্ষ বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেললেও কয়েক মাসের মধ্যেই আবারো ভাঙন শুরু হয়। হাড়িদিয়া পশ্চিমপাড়ার আল-মদিনা জামে মসজিদের অজুখানায় বড় ধরনের ফাটল ধরেছে। মসজিদের ভেতরেও ফাটল দেখা দিয়েছে। পদ্মার তীব্র স্রোত ও পানির ঘূর্ণিপাকে নদীর তলদেশ ধসে গিয়ে চারপাশে ভাঙন তীব্র হচ্ছে। স্থানীয়রা তাদের গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র সরিয়ে নিতে ব্যস্ত।
স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল জানান, আমরা একশ খাম্বা দিয়ে বাঁধ দিয়েছিলাম, কিন্তু গত দু’দিনেই সেগুলো নদীতে ভেসে গেছে। এখন কেবল ২০টা খাম্বা টিকে আছে। বাসিন্দা নিজাম মাদবর বলেন, ২৫ বছর আগে ভাঙনে বসতবাড়ি হারিয়ে এখানে নতুন করে বসতি গড়েছি। এখন আবার নদী ভাঙতে শুরু করেছে, এ বাড়িও হয়তো থাকবে না।
হাড়িদিয়া গ্রামের সেলিম মল্লিক বলেন, আল-মদিনা জামে মসজিদের দুই পাশ নদীতে ভেঙে যাচ্ছে। দুদিন আগে ইউএনও মহোদয়ের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছি। স্থানীয়রা অনেকে জানান, গত কয়েক বছর ধরে হাড়িদিয়া ও গাঁওদিয়া গ্রামে পদ্মার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। যার ফলে আমরা
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলেছি তারা শুধু আশ্বাস দিয়ে রেখেছেন। মসজিদের মুসল্লিরা জানান, মসজিদটি ভেঙে গেলে নামাজ পড়তে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হবে। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রচণ্ড স্রোতের ভাঙনে এ স্থানে ৪০-৫০ হাত গভীর গর্ত তৈরি হয়েছে। এখান কার অনেকে অভিযোগ করেন, বাঁধ নির্মাণের কাজ ধীরগতিতে চলছে। বর্ষা এলেই কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হয়, কিন্তু বর্ষা শেষে আর কোনো কার্যকর অগ্রগতি দেখা যায় না। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এই ভাঙন সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে।
গাঁওদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান টিটু শিকদার বলেন, অতি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পদ্মা পাড়ের অসংখ্য পরিবার বসতভিটা হারাবে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের আওতায় এনে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নেছার উদ্দিন জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে লৌহজংয়ে এটি দীর্ঘদিনের সমস্যা বহু দিন ধরে বিদ্যমান। এ সমস্যাটি এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক ও মানসিক ভাবে আঁকড়ে ধরেছে। সমস্যাটির বিষয়ে নির্দিষ্টভাবে জানা গেলে তার সমাধান বা প্রতিকার সম্পর্কে ধারণা দেওয়া সম্ভব হবে অল্প সময়ের মধ্যে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh