কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে পেন্টাওশান কোম্পানির কিছু কর্মকর্তা নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে গড়ে তুলেছেন প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট। চাকরির আড়ালে ঠিকাদারি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এই চক্র। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ে জমা দেওয়া অভিযোগপত্র, প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য এবং স্থানীয় অনুসন্ধানে এই সিন্ডিকেটের কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে। স্থানীয় ঠিকাদার ও ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা বলছেন, এই চক্রের কারণে তারা প্রকল্পের কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
স্থানীয়দের দায়ের করা অভিযোগপত্রে বলা হয়, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে পেন্টাওশান কোম্পানির ৬ কর্মকর্তা- ডকুমেন্টস কন্ট্রোলার ইঞ্জিনিয়ার জুবাইর ও কোয়ান্টিটি সার্ভেয়ার আনিছুর রহমানের যোগসাজশে ইঞ্জিনিয়ার সাইট অফিস পলাশ মজুমদার, সেফটি কো. অডিটর আব্দুল কুদ্দুস সুজন, একাউন্ট অফিসার মিজানুর রহমান, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার সিদ্দিকুর রহমান মিলে গড়ে তুলেছেন অঘোষিত একটি সিন্ডিকেট।
এই ৬জন রাষ্ট্রের কর্মচারী হয়েও ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামীলীগের ক্ষমতাকে পুঁজি করে লুটপাটে অংশ নিয়েছিল।সেই সময় ক্ষমতার দাপটে ধামাচাপা পড়েছিল তাদের কোটি টাকা লুটপাটের ঘটনা। ফের সুযোগ বুঝে আবারও দুর্নীতি শুরু করেছে এসব কর্মকর্তারা।
এরা চাকরির পাশাপাশি নিজেদের লোকজনের নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুলে নানা ধরণের কাজ ভাগিয়ে নিচ্ছেন। ফলে সরকারের অগ্রাধিকার এই প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না স্থানীয় উদ্যোক্তারা। অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকলেও প্রশাসনিক উদ্যোগের অভাবে অভিযুক্তরা বহাল তবিয়তে থেকে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
এমনকি নিজেদের ব্যবসা আড়াল করতে মাতারবাড়ী মগডেইলের বাসিন্দা পেন্টাওশান লিমিটেডে কর্মরত আনছার নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমেও বহিরাগত লোক নিয়োগ, ঠিকাদারি ব্যবসা দেখা শোনা করা হচ্ছে প্রকল্প এলাকায়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কোয়ান্টিটি অফিসার আনিছ নিজের ঘনিষ্ঠজনের নামে ‘সততা এন্টারপ্রাইজ’সহ একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। প্রকল্পের অবকাঠামো ও সাপ্লাইয়ের নানা ধরণের কাজ তারা নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে পাচ্ছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, আনিছের নেতৃত্বে এই সিন্ডিকেট বিভিন্ন ধাপে ব্যবসা করে কয়েক কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় করেছে। দুদকে জমা অভিযোগেও এসব অর্থ লেনদেনের বিশদ বিবরণ যুক্ত করা হয়েছে।
সরবরাহ খাতেও এই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিম্নমানের কাঁচামাল ও খাদ্যপণ্য সরবরাহে আনিছ বদরখালীর বাসিন্দা ইলিয়াছকে ব্যবহার করছেন। পেন্টাওশানের কোয়ার্টার গার্ড হিসেবে থাকা ইলিয়াছের মাধ্যমে সিন্ডিকেটটি প্রকল্পের বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ করছে। এসব সরবরাহে মান যাচাইয়ের নিয়ম উপেক্ষা করায় প্রকল্পের কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এছাড়া অবকাঠামো নির্মাণে সাব ঠিকাদার নিয়োগের ক্ষেত্রেও নিজেদের লোকজনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগপত্রে উল্লেখ আছে, প্রকল্পের বিভিন্ন ধাপের কাজ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে বাইরের উদ্যোক্তা ও ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের জন্য সুযোগ সীমিত করে দিয়েছে সিন্ডিকেট। এতে স্থানীয়দের ব্যবসা ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। একাধিক স্থানীয় ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, প্রকল্পের কাজ পেতে প্রভাবশালী চক্রের মুখাপেক্ষী থাকতে হচ্ছে সবাইকে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, সিন্ডিকেট পদ্ধতিগতভাবে কমিশন, সরবরাহ ও ঠিকাদারি খাত থেকে কোটি টাকার লেনদেন করছে। নিজেদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ ভাগিয়ে নিয়ে এ অর্থ বণ্টন করা হচ্ছে। এতে সরকারি তহবিলের অপব্যবহারের পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়নেও গতি কমে যাচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসনিক তদারকি না থাকায় এই চক্র দিনদিন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
অভিযোগের বিষয়ে কোয়ান্টিটি অফিসার মোহাম্মদ আনিছ বলেন, অভিযোগ সত্য নয়। প্রমাণ থাকলে তখন তা নিয়ে আলোচনা করা যাবে। অডিট কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুস সুজন বলেন, অভিযোগ করলে আমি দোষ স্বীকার করব না, আমাদের পরিচালনাকারীদের সাথে কথা বলুন। তাদের বক্তব্যে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অভিযোগকারীরা বলছেন, প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তদন্ত ও ব্যবস্থা না নেওয়াই এই চক্রের মূল বলয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী, জমির মালিক ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রকল্পে এমন সিন্ডিকেট বাণিজ্য সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য বড় বাধা। তারা অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে দ্রুত তদন্ত, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক তদারকি জোরদারের দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ না নিলে এই সিন্ডিকেট আরও বিস্তৃত হয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh