× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

ছেলের স্মৃতির পাঠাগারে শিক্ষক মুজিবুরের নতুন জীবন

‎পিরোজপুর প্রতিনিধি

০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:৩৪ পিএম । আপডেটঃ ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:৫৯ পিএম

ছবি: সংবাদ সারাবেলা।

‎পিরোজপুর সদর উপজেলার জুজখোলা গ্রামের এক কোণে ছোট্ট একটি শান্ত, নিরিবিলি পাঠাগার। তাকভর্তি বইয়ের গন্ধে ভেসে আসে স্মৃতি, ভালোবাসা, হারানোর ব্যথা আর নতুন জীবনের সন্ধান। এখানে প্রতিদিন নিয়ম করে আসেন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাজী মুজিবুর রহমান (৭৫)। হাতে বই, পাশে শিক্ষার্থীদের ভিড়, আর মনে একটিই প্রতিচ্ছবি তার প্রয়াত ছেলে কাজী মসিউর রহমান রাজীব।

‎এ পাঠাগারটি শুধু বইয়ের নয়, এটি এক পিতার হৃদয়ের আশ্রয়স্থল। ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর, এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মসিউর রহমান রাজীব। রাজীবের স্ত্রী ও সন্তানও ছিলেন সেই দুর্ঘটনায়। সেদিন যেন ভেঙে পড়ে কাজী মুজিবুর রহমানের পৃথিবী। কিন্তু দীর্ঘদিনের শিক্ষক মুজিবুর হার মানেননি। তিনি ছেলের স্বপ্নকেই নিজের বেঁচে থাকার কারণ বানিয়েছেন।

‎রাজীবের হাতে গড়া গ্রামের পাঠাগারটি এখন তার জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। প্রতিদিন তিনি সেখানে সময় কাটান বই সাজিয়ে, শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে, কিংবা নীরবে ডায়েরিতে কিছু লিখে।

‎চোখ ভেজা কণ্ঠে কাজী মুজিবুর রহমান বলেন, এখানে এলেই মনে হয় রাজীব পাশে আছে। শিক্ষার্থীরা যখন বই হাতে বসে, মনে হয় ওদের মধ্যেই রাজীব ফিরে এসেছে।

‎প্রায় আট দশকের জীবনের অর্ধেকেরও বেশি সময় শিক্ষকতায় কাটিয়েছেন মুজিবুর রহমান। ১৯৭৪ সালে পিরোজপুরের সিকদার মল্লিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গণিত শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার শিক্ষা জীবন।

এরপর গোপালগঞ্জের গোপিনাথপুর হাই স্কুল ও পিরোজপুরের কদমতলা জর্জ হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। কাঠের ঘরে শুরু হওয়া সেই স্কুলের ভবন নির্মাণ, মানোন্নয়ন সবকিছুতেই ছিল তার অক্লান্ত পরিশ্রমের ছাপ। ১৯৯৪ সালে পিরোজপুর শহরের টাউন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন এবং ২০১১ সালে সেখান থেকেই অবসর নেন। তার হাতে গড়া শত শত শিক্ষার্থী দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে আছে ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষক, প্রশাসক হিসেবে।

‎টাউন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, কাজী মুজিবুর রহমান স্যার শুধু একজন শিক্ষক নন, তিনি এক চলমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ছেলেকে হারানোর পরও তিনি নিজের দুঃখকে শক্তিতে পরিণত করেছেন। পাঠাগারে বসে তিনি যেন আবার নতুন করে জীবন খুঁজে পেয়েছেন। গ্রামের শিশু-কিশোরদের কাছে এ পাঠাগার এখন আলোকবর্তিকা।

পাঠাগারে আসা ক্ষুদে পাঠক অথৈ বলে, স্কুল শেষে প্রতিদিন আমরা এখানে আসি। স্যার আমাদের বই দেন, গল্প বলেন। আমরা সবাই চাই একদিন স্যারের মতো মানুষ হতে।

অন্যদিকে শেখ সাকিব নামে এক কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী বলেন, স্যার শুধু আমাদের পড়ান না, শেখান কিভাবে মানুষ হতে হয়। তার চিন্তা, তার জীবনদর্শন সবকিছুই আমাদের জন্য এক শিক্ষার দিকনির্দেশনা।

‎ছেলে হারানোর যন্ত্রণা কোনো শব্দে প্রকাশ করা যায় না। কিন্তু কাজী মুজিবুর রহমান সেই যন্ত্রণাকে পরিণত করেছেন ভালোবাসায়, জ্ঞানে, মানবতায়। বইয়ের পাতায়, পাঠাগারের নির্জনতায় তিনি খুঁজে পান হারানো ছেলেকে। আজও যখন পাঠাগারে শিশুরা বই হাতে বসে, তাদের চোখে উজ্জ্বল আগ্রহ দেখে মুচকি হাসেন তিনি। হয়তো তখনই মনে মনে বলেন, রাজীব, তোমার স্বপ্ন আমি ধরে রেখেছি।

‎এই পাঠাগার শুধু এক পিতার শোকের আশ্রয় নয়, এটি এক শিক্ষকের জ্ঞানের মন্দির। যেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ছে আলোর ধারা, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.