ফেনীতে নদী ভাঙন এখন নিত্য দিনের সমস্যা। নদী তীরবর্তী জনপদে ভাঙ্গা গড়ার খেলায় নিয়মিত বাস্তুচ্যুত হচ্ছে মানুষ। এর ফলে ভিটেমাটি হারানো, ফসলি জমি নষ্ট হওয়া এবং আতঙ্কের মধ্যে দিনযাপন করা এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের কাছে স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবার সরকারি কোন তহবিল না পেয়ে বসতভিটা রক্ষায় নিজ উদ্যোগে ভাঙন কবলিত নদী তীরে বাঁধ দিচ্ছেন বাড়ির মালিক আবুল বাশার।
সরেজমিন ঘুরে সোমবার সকালে দেখা যায়, জেলার দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভুঞা ইউনিয়নের বাগেরহাট ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় বসত ভিটা রক্ষার জন্য বাঁধ নির্মান করা হচ্ছে।
আবুল বাশার ভুঞা বাড়ির বাসিন্দা আবুল বাশার তার বসত ভিটা রক্ষার জন্য এই উদ্যোগ গ্রহণ করছেন। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, আবুল বাশার বিভিন্ন মহলে র্ধণা দিয়ে কোন সহযোগিতা না পেয়ে বিশ লক্ষ টাকা খরচ করে পিলার তৈরী,বালুর বস্তা সংগ্রহ,মেস্তরী মুজুরী দিয়ে নিজের বসতভিটা রক্ষায় কাজে নেমেছেন। তার একটাই উদ্দেশ্য নিজের মাথা গোঁজার ঠাই রক্ষা করা। কিন্তু তিনি আদৌও জানেন না এ বাঁধ তার বসত ভিটা রক্ষা করবে কিনা?
আবুল বাশার জানান, আমি অনেক কষ্ট করে পাঁকা বাড়ি তৈরি করেছি। এখন নদীর অব্যাহত ভাঙনে বাড়িটি হুমকির মধ্যে রয়েছে। ইতিমধ্যে বড় একটি ফাটল তৈরি হয়েছে।রাত হলে ঘুম আসেনা, কখন নদী সব ভেঙে নিয়ে যায়। আশা করছিলাম সরকারী সহায়তা পাবো কিন্তু তা না পেয়ে আমার বড় ছেলে আজাদের সাথে পরামর্শ করে নিজেরাই নিজেদের বাড়ি রক্ষায় নেমেছি।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ফুয়াদ হাসান জানান, নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত স্থান আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে, খুব শীগ্রই কাজ শুরু হবে। তখন এই অঞ্চলে নদী ভাঙন রোধ করা যাবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নদী ভাঙনে এই এলাকার মানচিত্র পর্যন্ত পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। চোখের নিমিষেই বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। একাধিকবার মানববন্ধন এবং কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানোর পরেও স্থায়ী কোনো সমাধান পাচ্ছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা।
যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের এই উদ্যোগ একটি সাময়িক স্বস্তি এনেছে, তবুও তারা মনে করছেন, এই অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা সম্ভব নয়। এই এলাকার মানুষের একটাই দাবি- সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত টেকসই ও বিজ্ঞানসম্মত বাঁধ নির্মাণ করা হোক। তবে আপাতত সরকারি প্রকল্পের অপেক্ষায় না থেকে নিজেদের সুরক্ষার জন্য স্থানীয়দের এই ঐতিহাসিক উদ্যোগ এক ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে দাগনভূঞার ছোট ফেনী নদীর ভাঙনে বাগের হাট, জগতপুর, মমারিজপুর, তালতলী, মিয়াজীর ঘাট,সালাম নগর, রামানন্দপুর এবং ফাজিলের ঘাট স্কুলসহ বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল বিলীন হয়ে যাচ্ছে।