× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

চাল কেলেঙ্কারির তদন্তে ইউএনওর রিপোর্ট

শরীয়তপুর প্রতিনিধি

০৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩৮ পিএম

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঘড়িষার নোয়াদ্দ বাংলাবাজারে সরকারি চাল বিতরণে অনিয়মের তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল কাইয়ুম খান বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার সাগর ট্রেড ইন্টার ন্যাশনালের মালিক ও নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান সাগরের রোষানলে পড়েছেন তিনি। এ ঘটনায় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম উদ্বেগ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাগর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামের ডিলারের বিরুদ্ধে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণে অনিয়ম এবং অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সরকারী নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি কার্ডধারীকে মাসে ৩০ কেজি চাল দেওয়ার কথা থাকলেও স্থানীয় ক্রেতাদেরকে মাত্র ২৬-২৭ কেজি চাল দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। পাশাপাশি কার্ডধারীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৩০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠে ওই ডিলারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গত ২০ আগস্ট বিভিন্ন অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় সংবাদ প্রচার হলে বিষয়টি নজরে আসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম খানের। ঘটনাটি তিনি সরজমিন পরিদর্শন করেন। ভিজিডি কর্মসূচির চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের সত্যতা পাওয়ায় পরদিন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার সাগর ট্রেড ইন্টার ন্যাশনালের মালিক  মতিউর রহমান সাগরকে চাল বিতরণ অনিয়মের ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি ইস্যু করেন। চিঠিতে তিনি চার দিনের মধ্যে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দিতে বলেন। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ২৭ আগষ্ট স্থানীয় সুবিধাভোগীদের সাথে কথা বলেন এবং পাঁচজন ভুক্তভোগী লিখিতভাবে জানান তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়েছে। এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ২৮ আগষ্ট ডিলারের বিক্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করে চালের মজুদ ও বিক্রির মাষ্টাররোল যাচাই করে ৩৫৫ কেজি চাল কম পান। এসময় তিনি উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ জন্য বলেন। এছাড়াও স্থানীয় সাক্ষ্য ও তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় ডিলারের ডিলারশিপ বাতিলের সুপারিশ করেন। তদন্ত শেষে তিনি বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেন।  কয়েকদিন আগে মতিউর রহমান সাগর ঘড়িসার ইউনিয়নের নোয়াদ্দা বাংলাবাজার এলাকায় একটি ওয়াসব্লক নির্মাণের ঠিকাদারি কাজ পায়। এসময় তিনি কাজ না করে বিল তুলে নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চাপ প্রয়োগ করে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেন এবং জানতে পারেন ওই বিএনপি নেতা কাজ না করেই বিল তুলতে চাচ্ছেন। পরে ওই নেতাকে ফোন করে সাফ জানিয়ে দেন কাজ শেষ না করলে তিনি বিল পরিশোধ করবেন না। এতেই আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন বিএনপি নেতা মতিউর রহমান সাগর। এরপর থেকে মতিউর রহমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করতে থাকেন। পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মতিউর রহমানের কাছে ৫ লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছেন বলে গত সোমবার (৬ অক্টোবর) ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন এমন একটি অভিযোগের কপি তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। চিঠিতে মতিউর রহমান দাবী করেন গত ২৮ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টায় মতিউর রহমান সাগর ইউএনও আব্দুল কাইয়ুম খানের সঙ্গে দেখা করেন এবং উপজেলা পুকুরঘাটের সামনে খামে ভরে ইউএনও আব্দুল কাইয়ুম খানকে ২ লাখ টাকা দিয়ে আসেন। বাকি ৩ লাখ টাকা আর দিতে পারবেন না বলে জানান মতিউর রহমান। কিন্তু ইউএনও এতে মানতে রাজি নন। বাকি টাকা দেওয়ার জন্য মতিউর রহমানকে চাপ প্রয়োগ করেন তিনি। গোডাউনে ৩৫৫ কেজি চাল কম আছে অজুহাত দেখিয়ে মতিউর রহমানকে ৪১ হাজার ৪০৬ টাকা জরিমানা করেন এবং তার খাদ্যবান্ধব ডিলার লাইসেন্সটি স্থগিত করে দেন। তবে গত ২৮ আগষ্ট বিকাল ৪ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের পুকুরপাড়ে সিসিটিভি ফুটেজে মতিউর রহমান সাগরের উপস্থিতি পাওয়া যায় নি। 

বাংলাবাজারের স্থানীয় মো. জামাল হোসেন বলেন,“সরকারের দেওয়া চাল অসহায় মানুষের জন্য। সেখানে যদি কেউ অনিয়ম করে তাহলে ইউএনও স্যার ঠিক কাজই করেছেন। তিনি নিজের দায়িত্ব পালন করছেন। একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির উচিত ছিল তাকে সহযোগিতা করা।’’

স্থানীয় দোকান মালিক আবদুল কুদ্দুস বলেন,“এই এলাকায় চাল বিতরণে আগে থেকেই অনেক অনিয়ম ছিল। এবার ইউএনও বিষয়টা ধরেছেন বলে অনেকেই ভয় পেয়েছে। এখন উল্টো তাকেই হুমকি দেওয়া হচ্ছে এটা লজ্জার। ইউএনও স্যার ন্যায্য কাজ করছেন। তাকে ভয় দেখানো এবং তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া মানে সৎ কাজকে বাধা দেওয়া।’’

এ বিষয়ে বিএনপি নেতা ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার মতিউর রহমান সাগর বলেন, আমার কাছ থেকে নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘুষ নিয়েছে তাই আমি বিভাগীয় কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমি অনেক পত্রপত্রিকায় নিউজ করিয়েছি তার বিরুদ্ধে এটার কারণ তিনি আমার ডিলার বাতিল করে আমাকে রাজনৈতিক ভাবে ছোট করেছে। ইউএনও ঘুষ নিয়েছে কি না এ বিষয়ে জিগ্যেস করা হলে তিনি বলেন, আপনি রেকর্ড কইরেন না। সে আমার বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে আমার ডিলার বাতিল করেছে। আমিও ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযোগ দিয়েছি। তাছাড়া উনি আমাকে জরিমানা না করলে আমি এই অভিযোগ কখনোই দিতাম না। 

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম খান বলেন, আমি রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করেছি। তদন্তে যা পেয়েছি, সেটিই প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি। এজন্য কেউ ক্ষুব্ধ হলে সেটা তার বিষয়। প্রশাসনের কাজে কোনো রাজনৈতিক প্রভাব বা ভয়-ভীতি আমি মেনে নেব না। আমার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ দিয়েছে তা আমি এখনো দেখি নি। অফিসিয়ালি এখনো আমি এই ধরনের চিঠি পাই নি।

এ ব্যাপারে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম বলেন, আমি এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তাই এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারছি না। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখা হবে।


Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.