কালামপুর থেকে টাঙ্গাইল পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটি বহুদিন ধরে সংস্কারের জন্য খুঁড়ে রাখা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সংস্কারকাজ চলছে, কিন্তু কাজের গতি অত্যন্ত ধীর। ফলে রাস্তায় তৈরি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ, যেগুলো বৃষ্টিতে কাদা ও পানিতে পরিণত হচ্ছে। দিনের পর দিন ধুলাবালি, কাদা ও যানজটের যন্ত্রণায় ভোগান্তিতে পড়েছেন এলাকাবাসী। স্কুলগামী শিক্ষার্থী, অফিসযাত্রী এমনকি ছোটখাটো ব্যবসায়ী- সবাই দিশেহারা এই অচলাবস্থায়।
এই দুরবস্থার মাঝেই এলাকার এক ভ্যানচালক ক্ষোভে রাস্তার মাঝখানে রোপণ করেন ধানের চারা। প্রথমে অনেকে হাসাহাসি করলেও, কিছুদিন পরেই দেখা যায়- সেই চারাগুলো বড় হয়ে উঠছে, যেন সত্যিকারের এক ক্ষুদ্র ধানক্ষেত!
এখন সেখানে বাতাসে দুলছে সবুজ ধানগাছ, যা দেখে পথচারীরা অবাক না হয়ে পারেন না। অনেকেই দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন, কেউবা বলছেন-“এমন দৃশ্য রাস্তার উপর কখনো দেখিনি! এটা যেমন মজার, তেমনি আমাদের কাজের গতি নিয়ে বড় প্রশ্ন তোলে।”
রাস্তার পাশের দোকানদার মো. রফিক বলেন,“সংস্কারের নাম করে রাস্তাটা খুঁড়ে ফেলা হয়েছে মাসের পর মাস। কেউ আসে না কাজ করতে। ওই ভ্যানচালক রাগে ধান লাগাইছিল, এখন দেখেন আসল ধান গজায় গেছে!”
অন্যদিকে স্থানীয় বাসিন্দা সুমি আক্তার বলেন,“আমরা ভাবছিলাম রাস্তা ঠিক হবে, কিন্তু এখন ধানের ক্ষেত দেখে হাসতেও ইচ্ছে করে আবার কষ্টও লাগে। এমন অবহেলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।”
কিছুদিন আগে এক পথচারী ধানের ক্ষেত হয়ে যাওয়া মহাসড়কের ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পোস্টটি ভাইরাল হয়ে যায়।
ছবির নিচে অসংখ্য মন্তব্য- কেউ লিখেছেন,“যেখানে কাজ হয় না, সেখানে কৃষিই পথ দেখাচ্ছে।”আবার কেউ মন্তব্য করেছেন,“বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন ধানক্ষেতের মধ্যেই আটকে আছে।”
এখন সেই জায়গাটি এলাকায় একধরনের “আকর্ষণ” হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন অনেকে এসে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন, এমনকি ছোট বাচ্চারা খেলতেও আসে। কেউ কেউ বলছেন,“এটা প্রতিবাদও, শিল্পও- উভয়ই।”
এক ভ্যানচালকের এই সরল উদ্যোগ এখন যেন নীরব প্রতিবাদের প্রতীক। যেখানে উন্নয়ন থেমে গেছে, সেখানে প্রকৃতি নিজের ভাষায় কথা বলেছে। ধানের সবুজ শীষের মাঝেই প্রতিফলিত হচ্ছে মানুষের ক্ষোভ, আশা ও ব্যঙ্গ- হয়তো এভাবেই মানুষ প্রতিবাদ জানায় যখন আর বলার ভাষা থাকে না।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, সংস্কারকাজ দ্রুত শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনো সময় জানানো হয়নি।