মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার খেতের আইল, খাল ও বিলগুলোতে কুঁচিয়া (কুইচ্চা) শিকারীদের আনাগোনা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাকৃতিক উৎস থেকে এই মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন শতাধিক পরিবার। বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি বিশেষ ফাঁদ ‘রুহুঙ্গা’ (কোনো কোনো এলাকায় ‘উকা’ নামেও পরিচিত আবার অনেকে জানেন না এই ফাঁদের নাম কি? কি কাজে ব্যবহার করা হয়) কি দিয়ে তারা এই মাছ শিকার করছেন।
স্থানীয়দের খাদ্য তালিকায় এই মাছের তেমন চাহিদা না থাকলেও বিদেশে রয়েছে ব্যাপক কদর। এই মাছ ধরে বিক্রি করেই তাদের পরিবারের ভাত-কাপড়ের সংস্থান হয়।
শিকারীরা সাধারণত ১৫০টিরও বেশি রুহুঙ্গা নিয়ে এসেছেন কমলগঞ্জ এলাকায়। আগের দিন বিকেল ৩টা থেকে ৪টার দিকে স্যাঁতসেঁতে জমি বা যেখানে কিছু জল জমে আছে, সেসব স্থানে কেঁচো (স্থানীয় ভাষায় ‘জির’) টোপ দিয়ে রুহুঙ্গা জলে ডুবিয়ে রাখা হয়। কেঁচোর টোপ খেতে এসে কুঁচিয়া মাছ রুহুঙ্গা ফাঁদে আটকা পড়ে, আর বের হতে পারে না। সারা রাত ফাঁদ ওই স্থানেই থাকে। পরদিন সকাল ৬টার দিকে এসে শিকারীরা রুহুঙ্গা তোলেন।
কুঁচিয়া শিকারী নিকলেস সরকার জানান, “কুঁচিয়া ধরায় কষ্টও আছে। জির (কেঁচো) তোলা, এগুলা (রুহুঙ্গা) বিভিন্ন জায়গায় নিয়া (নিয়ে) পাতানি (পাতানো)। কোনো মাসে ভালো চলা যায় আবার কোনো মাসে অয় (হয়) না। ওটার (কুঁচিয়া বিক্রি) আয় দিয়ে আমার সংসার চলে। তিনি আরও বলেন, “মাঝেমধ্যে নিজেও খাই, খুব স্বাদ।
শিকারীরা জানান, প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০টি রুহুঙ্গা পাতা হলেও সবগুলোতে মাছ ধরা পড়ে না। কোনো কোনো দিন বেশি, আবার কোনো দিন কম কুঁচিয়া পাওয়া যায়। তবে কোনোদিনই খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয় না। ধরা পড়া কুঁচিয়াগুলোকে জীবিত রাখতে ড্রামের মধ্যে জলে রাখা হয়।
শ্রীমঙ্গল থেকে আসা পাইকার সমিরন শীল জানান, তিনি সপ্তাহে দু’বার এসে শিকারীদের কাছ থেকে কুঁচিয়া সংগ্রহ করেন। শিকারীদের কাছ থেকে প্রতি কেজি কুঁচিয়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে কিনে স্থানীয় বাজারে ১০-২০ টাকা লাভে খুচরা বিক্রি করেন। ‘কুঁচিয়া’ মাছটি বিভিন্ন স্থানে কুঁইচা, কুইচ্চা, কুঁচে, কুঁচো নামেও পরিচিত। স্থানীয় বাসিন্দা অরুন মল্লিক জানান, কুঁচিয়া অনেকটা বাইম মাছের মতো। সাধারণত পুকুর, হাওর-বাঁওড়, খাল বা ধানখেতের তলদেশে মাটির গর্তে এরা থাকে।
জানা যায়, মৌলভীবাজার সদর উপজেলা থেকে শিকারীরা প্রায় ৪ মাস ধরে কমলগঞ্জ উপজেলায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। বিকাল হলেই তারা জীবিকা নির্বাহের জন্য এলাকার বিভিন্ন খাল-বিলে রুহুঙ্গা নিয়ে কুঁচিয়া শিকারে বের হন।