কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নে কোস্ট গার্ডের অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। কোস্ট গার্ডের নেতৃত্বে মোহাম্মদ শাহ ঘোনা ও টেকপাড়া এলাকায় গতকাল শনিবার দুপুর ১২টার থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে রাত ১০ দিকে কোস্ট গার্ড জানায়, মহেশখালীর কালারমারছড়া এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সশস্ত্র একটি গ্রুপ স্থানীয় জনগণকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে লবণের মাঠ ও চিংড়ির ঘোনা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছিল। স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে কোস্ট গার্ড গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ায়। পরে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসীদের আস্তানা থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ৮টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ৮ রাউন্ড তাজা গোলা, ১৫ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, ২টি ম্যাগাজিন, ১৩টি দেশীয় অস্ত্র এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
অভিযানে ৯ জনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন- মোহাম্মদ আলী (৫০), মানিক (৩০) গিয়াস উদ্দিন (৪৫) সালাউদ্দিন (২৭) শহিদুল্লাহ (৫০) সবুজ (২৮) আতিকুর রহমান (৩৫) রিজওয়ান (২৯) নাজেম উদ্দিন (৩৬)। তারা সবাই মহেশখালীর কালারমারছড়া ও হোয়ানক ইউনিয়নের বাসিন্দা। আজ রোববার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে আটককৃতদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ।
এদিকে আটক হওয়া মোহাম্মদ আলী ও নাজেম উদ্দিন মাতাব্বারসহ একাধিক ব্যক্তি জুলাই অভ্যুথানে নিহত শহীদ তানভীর ছিদ্দিকীর পরিবারের সদস্য ও তারা বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত রয়েছেন। পরিবার ও তাদের স্থানীয় স্বজনরা এটি একটি পাতানো অভিযান বলে দাবি করে বিভিন্ন বক্তব্য জানিয়েছেন।
জানাগেছে, দ্বীপের কালারমারছড়া অভিযানকালে বাংলাদেশ কোষ্টগার্ডের সাথে প্রকাশ্যে মহড়া দিয়েছে সোর্স নামধারী দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ওই ছবিতে কয়েকজনকে দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে মহড়া দিতে দেখা যায়।
তবে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, মহড়ায় ছিলেন ১০ থেকে ১৫ জন। মহড়ার পর থেকে ওই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নের মোহাম্মদ শাহ গ্রামে গতকাল শনিবার এ ঘটনা ঘটে। ওই সময় গ্রেপ্তারকৃত অনেকে কৃষক ও মৎস্য পেশায় জড়িত। তারা বিগত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ পলাতক আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীদের দেওয়া ষড়যন্ত্রমুলক মামলার আসামী হয়। তবে তারা শহীদ তানভীর ছিদ্দিকীর আপন-চাচা ও ভাই। তারা পেশাদার কোন সন্ত্রাসী নই বলে দাবী তাদের পারিবারিক সূত্রে।
জানাগেছে, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মোহাম্মদ আলী একজন এইচএসসি পরীক্ষায় উর্ত্তীন শিক্ষিত যুবক হয়েও সংসারের ঘানি টানতে কৃষি ও মৎস্য পেশা বেঁচে নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। এছাড়া তিনি কালারমারছড়া ইউনিয়নের আলোচিত ৭নং ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি।
অভিযোগ উঠেছে, উপজেলার কালারমারছড়ার পূর্বপাশে ফকির জুমপাড়া, গোলাইলার বাগান, নোনা ছড়ি, আঁধার ঘোনা ও মিজ্জির পাড়া পাহাড়ে আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি অস্ত্রের কারখানায় কোষ্টগার্ড অভিযান না করে বার বার লোকালয়ে এসে বির্তকিত অভিযান করে হয়রানি করে আসছে সাধারণ মানুষকেও। স্থানীয় বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম খোকন নামে একজন জানিয়েছেন , কালারমারছড়ার মোহাম্মদ শাহ ঘোনাকে ক্রাইম জোন হিসেবে চিহ্নিত করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে অভিযানের নামে।
এদিকে মোহাম্মদ শাহ ঘোনা দরবারের পাশে লোকালয়ে ২ জনের ধারালো কিরিচের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
তবে অভিযুক্তদের নাম-পরিচয় নিয়ে মুখ খুলছেন না কেউ। এদিকে অভিযান চলাকালে কোষ্টগার্ডের সাথে সোর্স হিসেবে অংশ নিতে আসলে পাহাড়ি সন্ত্রাসী আবু বক্কর নামে একজনকে গ্রেফতার করেন মহেশখালী থানা পুলিশ।
স্থানীয় অনেকে জানান, প্রকৃত অর্থে এটি কোনো দুর্গম এলাকা নয়, এটি একটি গ্রাম- যেখানে বাড়ির পাশে মানুষ কৃষিকাজ করে। এখানে সাংবাদিক, শিক্ষক, ছাত্র,আইনজীবী, ডক্টর ডিগ্রী, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিবিদসহ সকল পেশার মানুষের বসবাস। কেন মহেশখালীকে সন্ত্রাসীদের বড় ঘাঁটি হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে, তা তারাই ভালো জানেন। মহেশখালীর একটি ইউনিয়ন কালারমারছড়া। সেখানে দুটো গ্রুপের মধ্যে বিরোধ যুগযুগ ধরে। তাদের সন্ত্রাসীরা সাধারণত পাহাড়ে অবস্থান নেয়। অভিযান দরকার ছিল কালারমারছড়া পাহাড়ে, লোকালয়ে নয়।
আলোচিত এসব ঘটনার পর থেকে সাধারণ মানুষের মাঝে এক প্রকার আতঙ্ক বিরাজ করছে। কোষ্টগার্ড প্রতিটি অভিযানে সন্ত্রাসীদের সোর্স হিসেবে ব্যবহার করায় সমালোচনার জন্ম দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাই স্থানীয় বাসিন্দারা কোষ্টগার্ডের বির্তকিত অভিযান বন্ধের দাবী জানান।
মহেশখালী থানার পরির্দশক (ওসি তদন্ত) প্রতুল কুমার শীল জানান, কোষ্টগার্ডের অভিযান হয়েছে কালারমারছড়া। যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদেরকে রাতে থানায় সোপর্দ করেছে। আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh