× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়া বংড ক্যহ্

আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান

২০ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৫৯ এএম

প্রকৃতির রঙে রাঙানো এক অপার সৌন্দর্যের পাথরের দেশ বংড ক্যহ । পাহাড়, নদী আর পাথরের এক অনন্য মেলবন্ধনে গড়ে উঠেছে এই জনপদ। বান্দরবানের থানচি উপজেলার তিন্দু ইউনিয়নে পাহাড়ি নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছে এক অদ্ভুত সৃষ্টি- রাজা পাথর। যাকে স্থানীয়দের ভাষায় বলা হয় বংড ক্যহ্। 

দুই পাহাড়ে প্রাকৃতিক সবুজের বুক ছিঁড়ে বয়ে চলেছে সাঙ্গু নদী। আর সেই নদীর বুকে দাঁড়িয়ে আছে পাথরে দেশে মুকুটধারী রাজা পাথর। স্থানীয়দের মুখে মুখে এর গল্প ঘুরে বেড়ায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে মিশে থাকা এই বিশাল পাথর আজ তিন্দুর অন্যতম আকর্ষণ। যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়িয়ে রেখেছে এই বংড পাথরকে।

তিন্দু থেকে নৌকায় প্রায় আধঘণ্টা পথ পাড়ি দিলেই দেখা মেলে রাজা পাথরের। পাহাড়ি নদীর স্বচ্ছ নীলজলে ঘেরা এই পাথর যেন কোনো রাজকীয় আসনের মতো গর্বভরে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ বলেন, এটি প্রকৃতির খেয়ালী শিল্পকর্ম; কেউ বলেন, বহু শতাব্দী আগে রাজা-রানির বাসস্থান ছিল এ পাহাড়চূড়া। বৃষ্টি, রোদ আর সময়ের ছোঁয়ায় পাথরটির গায়ে তৈরি হয়েছে নানা আকৃতির দাগ, যা দূর থেকে দেখতে মুকুটের মতো লাগে। এ থেকেই স্থানীয়দের মুখে নাম হয়েছে- রাজা পাথর।

প্রতিদিন দেশ-বিদেশসহ বিভিন্ন জেলার প্রান্ত থেকে ভ্রমনপিপাসুরা ছুটে আসেন এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে। রাজা পাথরের পাদদেশে দাঁড়িয়ে চারপাশের সবুজ পাহাড় আর ঝিরিঝিরি পানির শব্দ মিলে সৃষ্টি করে অপূর্ব এক দৃশ্য। কেউ আসে ফটো তুলতে, কেউ আসে নিস্তব্ধ প্রকৃতিতে কিছুক্ষণ শান্তি খুঁজতে।

কথিত আছে, বহু বছর আগে এক সাধক দিব্য জ্ঞান লাভ করে জানতে পারেন সাঙ্গু নদীতে গুপ্তধনের অস্তিত্ব রয়েছে। সেই সন্ধানে তিনি আরাকান থেকে কালাডাইন নদী পাড়ি দিয়ে এসে এক বিশাল পাথরের ওপর ধ্যানমগ্ন হন। পরে ফেরার সময় ভুলবশত তার পাগড়ি ওই পাথরের ওপর রেখেই চলে যান। তাই সেই মুকুট আজও পাথরের চূড়ায় দৃশ্যমান। এ থেকেই পাথরটির নাম হয়েছে ‘বংডহ’- পাথরের রাজা। এটি একটি পবিত্র পাথর।  বংডহ ও ক্যহপাজ্জা: স্বং—এই দুই প্রাকৃতিক আকর্ষণ ঘিরে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর এই পাথরের দেশে।

সেখানকার স্থানীয়রা বলছেন, স্থানীয় বম ও মুরং সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে এক মজার কিংবদন্তি- নাকি বহু বছর আগে এই অঞ্চলের এক রাজা পাহাড়ের চূড়ায় বসে বিচার দিতেন, আর সেই আসনটাই আজ “রাজা পাথর” নামে পরিচিত। ইতিহাস, প্রকৃতি আর লোককথা-সব মিলিয়ে রাজা পাথর আজ বান্দরবানের এক জীবন্ত গল্প। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, এই ঐতিহ্যবাহী স্থানটির তেমন কোনো সরকারি সংরক্ষণ ব্যবস্থা নেই। পর্যটনের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও অবকাঠামোগত ঘাটতির কারণে অনেক সময় পর্যটকদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। যদি জায়গাটি যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও প্রচার করা হয়, তবে রাজা পাথর বান্দরবানের পর্যটন মানচিত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, তিন্দু ইউনিয়নের প্রবেশের পর চারিপাশে দেখা মিলছে অসংখ্য ছোট-বড় পাথর। বিশাল আকারের পাথরে মাঝখানে পর্যটকদের নিয়ে বয়ে চলছে ইঞ্জিন চালিত নৌকা। আর পুরো পাথর রাজ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে রাজা পাথর বা বংড ক্যহ্। গোলাকার এই পাথর মুকুট আরশের মোড়ানো। দূর থেকে দেখলে মনে হবে পাথরটি মুকুট পড়ে স্বচ্ছ নদীর বুকে দাঁড়িয়ে আছে। আর সেই পাথরকে পুজা কিংবা প্রার্থনা করছেন স্থানীয়রা। একই সাথে পর্যটকরা ভীড় জমান এই পাথর দেখতে। রাজা পাথর শুধু একটি পাথর নয়, এটি প্রকৃতির এক নিঃশব্দ রাজা -যে পাহাড়, নদী আর মানুষের গল্প একসঙ্গে বয়ে নিয়ে চলছে।

ঢাকা থেকে পাথরের দেশে বেড়াতে এসেছেন সোনাহী, অপূর্ব, প্রান্তসহ ছয় জনের দল। তারা জানান, শুধু রাজার পাথর নামটিই শুনেছেন’ অথচ কোনদিন আসেননি। সুযোগ পেয়ে থানচি বেড়াতে এসেছেন তারা। তিন্দু রাজার পাথর হয়ে পাড়ি দিবেন লাংলোক ঝর্ণাতে। এসব প্রাকৃতিক সবুজের ঘেরা সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত। আর পাথরের দেশে উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা রাজা পাথরকে দেখে তারা অবাক হয়েছেন। তবে সেসব পাথরকে রক্ষণাবেক্ষণ করার দাবি জানান তারা।

থানচি পর্যটক গাইড ও নৌকা চালক, ইমন ইসলাম ও অংশৈনু মারমা জানিয়েছেন, প্রতিদিন এই রাজা পাথর দেখতে পর্যটকরা ভীড় করেন। রাজা পাথরে ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছেন কেউ আবার সেখান থেকে লাংলোক ঝর্ণা দিকে রওনা হচ্ছে। সবশেষে তারাও নিরাপদে একই স্থানে পৌছে দিচ্ছে।

তিন্দু ইউনিয়নের সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যান মংপ্রু অং মারমা ও ভাগ্যরাম ত্রিপুরা বলেন, ছোট বেলায় এই রাজা পাথরকে সবাই মানতেন ও পুজা করতেন। বর্তমানে স্থানীয়রা সেই নিয়ম সংস্কৃতি ও ধর্মীয় আচার-আচরণ ধরে রেখেছেন। তবে পর্যটকরা সেখানে বেড়াতে গেলে সেসব নিয়ম ও লোকজ সেসব সংস্কৃতি রয়েছে সেটি যেন মেনে চলার জন্য পর্যটকদের প্রতি আহ্বান জানান।  

বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য উবাথোয়াই মারমা বলেন, রাজা পাথর বা বংডহ ক্যহ্ পাহাড়ের মানুষের কাছে এটি একটি ধর্মীয় ও রীতিনীতি রেওয়াজ। আদিকাল থেকে এই পাথরটাকে ধর্মীয় আচার ও রীতিনীতি অনুসারে পুজা করে থাকেন। এছাড়াও এসব পাথরকে কিভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কৃতি ঐতিহ্য ধরে রাখা যায় সেটি জেলা পরিষদ থেকে সে উদ্যেগ নেয়া হবে। যাতে করে সাংগু বুকে দাঁড়িয়ে থাকা অসংখ্য পাথর যেন যুগযুগ ধরে টিকে থাকে।


Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.