জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার কৃতিসন্তান মো. শাহরিয়ার আহমেদ সোহাগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এ. এফ. রহমান হল সংসদ নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) পদে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। তার এই সাফল্য ব্যক্তিগত অর্জন ছাড়াও জয়পুরহাটের মানুষের জন্য গর্বের একটি মুহূর্ত তৈরি করেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) হল সংসদ নির্বাচনে এ. এফ. রহমান হলে বাজিমাত করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এই হলে ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) এবং জেনারেল সেক্রেটারি (জিএস) পদে জয়ী হয়েছেন দুজনেই ছাত্রদল সমর্থিত প্রার্থী। ভিপি নির্বাচিত কাজী মো. শাহরিয়ার আহমেদ সোহাগ ২০১৯-২০ সেশনের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী এবং জিএস পদে জয়ী হয়েছেন ২০২১-২২ সেশনের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. তামিম চৌধুরী।
ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, ভিপি পদে ৩৬৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন শাহরিয়ার আহমেদ সোহাগ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রবিউল ইসলাম পেয়েছেন ৩৪৩ ভোট। জিএস পদে ৩৭৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মো. তামিম চৌধুরী, যেখানে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাবের আহমদ পেয়েছেন মাত্র ৩২ ভোট। এছাড়া ২৯৮ ভোট পেয়ে এজিএস হয়েছেন সাইদুল ইসলাম। তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাইফুর রহমান পেয়েছেন ২৬০ ভোট।
শাহরিয়ার আহমেদ সোহাগ উপজেলার জিয়াপুর গ্রামের কাজী সানাউল ইসলাম ও আইরিন নাহার দম্পতির ছেলে। দুই ছেলে সন্তানের মধ্যে সোহাগ বড়। ছোট ছেলে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে। বাবা কাজী সানাউল ইসলাম মামুদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও পেশায় একজন ব্যবসায়ী এবং মা আইরিন নাহার শিল্পী ক্ষেতলাল উপজেলা মহিলাদলের সাধারণ সম্পাদক।
শাহরিয়ার আহমেদ সোহাগ ক্ষেতলাল উপজেলার জিয়াপুর কাজীপাড়া গ্রামে ২০০০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পশ্চিম দূর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই শুরু হয় তার শিক্ষাজীবন। জয়পুরহাট রামদেও বাজলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে জিপিএ-৫ পান এবং ২০১৯ সালে রাজশাহী গভর্নমেন্ট সিটি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ৪.৪২ জিপিএ-৫ পেয়ে পাশ করেন।
তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ সেশনের লোকপ্রশাসন বিভাগে শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হয়ে স্নাতকে সিজিপিএ ৩.৩৮ পাস করেছেন এবং বর্তমানে স্নাতকোত্তর পরীক্ষা দিচ্ছেন। ভিপি শাহরিয়ার আহমেদ সোহাগ বলেন, এই বিজয় কেবল আমার নয়, এটি ছাত্রদলের আদর্শ, গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব ও শিক্ষার্থীদের বিশ্বাসের জয়। আমি শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
নবনির্বাচিত এই ভিপি বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকেই আমি ছাত্রদলের সাথে পুরোপুরি সংযুক্ত হই। পূর্বেও ছিলাম, তবে পুরোপুরি নয়। আসলে আমার ইচ্ছে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সেখানে রাজনীতি করা। কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে দেখি এখানে কেন্দ্রের প্রতিনিধিত্ব কম, তাই ভেবেছিলাম রাজনীতি করে কিছু হবে না। তাই রাজনীতি করার ইচ্ছা ছিল না একদমই। কিন্তু ছাত্রদলের কিছু বড় ভাই এবং কাছের মানুষের জোরাজুরিতে আমি প্রার্থী হয়েছি। তারা বলেছে- ‘তুই কর, তুই পারবি!’ মনোনয়ন তোলার শেষ দিনে তারাই আমাকে উৎসাহ দিয়ে মনোনয়ন ফর্ম তুলিয়ে দেয়।
তিনি আরও বলেন, এখানে শিবিরের বিরুদ্ধে জয় পাওয়া সহজ ছিল না, কারণ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে শিবিরের ক্যান্টনমেন্ট বলা হয়। সেখান থেকে একটি হল জয় করা সহজ ছিল না। বাবা-মা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তারা কখনও চায়নি আমি ছাত্রজীবনে রাজনীতি করি। তারা চেয়েছিল আমি পড়াশোনা করে ভালো একটা সরকারি চাকরি করি। তবে যখন আমি তাদের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি জানিয়েছি, তখন তারা আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন এবং পূর্ণ সাপোর্ট দিয়েছেন।”
শাহরিয়ার আহমেদ সোহাগের বাবা— মামুদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সানাউল ইসলাম বলেন, আমি তাকে বারবারই বলতাম, তোমাকে আর দশজনের চেয়ে আলাদা হতে হবে। সবার সাথে অমায়িক আচরণ করতে হবে, কারও সাথে অহংকার করা যাবে না। সে ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পেয়েছে, এইটে বৃত্তি পেয়েছে। তারপর রামদেও বাজলা থেকে এসএসসি এবং রাজশাহী নিউ গভ. সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি দিয়েছে।
আমি ও আমার স্ত্রী বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। হয়তো আমাদের রাজনীতির কারণেই সে রাজনীতিতে উৎসাহিত হয়েছে। প্রার্থী হওয়ার সময় সে ভয় পাচ্ছিল আমরা কিছু মনে করব কিনা, কিন্তু আমরা তাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছি এবং উৎসাহিত করেছি। পরামর্শ দিয়েছি যেন নম্রতার সাথে সবার কাছে ভোট চায়।
তিনি আরও বলেন, আর দুটা পরীক্ষা দিলে তাঁর মাস্টার্স কমপ্লিট হবে এবং বর্তমানে বিসিএস কোচিং করছে। বাবা হিসেবে আমি তার মঙ্গল কামনা করি। আপনারাও দোয়া করবেন যেন সে দেশ ও দশের জন্য কিছু করতে পারে, জয়পুরহাট ও ক্ষেতলালের জন্য কিছু করতে পারে। এইটুকুই আমার ছেলের কাছেও চাওয়া।
তার এই সাফল্যে উত্তরবঙ্গ ও জয়পুরহাট জেলায় গর্বের আবহ বিরাজ করছে। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি ভাইরাল হয়েছে। পরিবার, সহপাঠী ও শুভানুধ্যায়ীরা শাহরিয়ার আহমেদ সোহাগকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং তাঁর আগামীর পথচলার সাফল্য কামনা করেছেন। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এজিএস নির্বাচিত হয়ে আলোচনায় এসেছিলেন জয়পুরহাট সদর উপজেলার বম্বু ইউনিয়নের বম্বু খানপাড়া গ্রামের ছেলে মহীউদ্দীন খান।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh