× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

জিপিএ-৫ পেয়েও স্বপ্নপূরণে বাধা

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধি

২১ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০১ পিএম

সালমান ফারসি রাজমিস্ত্রীর কাজ করে এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। বাবার অসুস্থতা, সংসারের অভাব-অনটন, বড়ভাইয়ের বেকারত্ব সবকিছু ছাপিয়ে তার এই অর্জন। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া অদম্য মেধাবী এই ছেলেটির স্বপ্ন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মানুষের সেবা করার। তবে সালমানের স্বপ্নপূরণে বাধা পরিবারের অভাব। 

সালমানের বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্ব ধনিরাম গ্রামে। সে শাহ বাজার এএইচ সিনিয়র ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার শিক্ষার্থী। পরিবারে বাবা আবেদ আলী পেশায় দিনমজুর, তবে গত কয়েক বছর ধরে শারীরিক অসুস্থতায় তিনি কর্মক্ষম নন। সালমানের এক বড়ভাই থাকলেও তিনিও বেকার। অভাবই পরিবারটির নিত্যসঙ্গী । সংসারের এমন পরিস্থিতিতে সালমানের ভালো ফলাফল যেন পরিবারে নতুন করে আশার আলো জ্বেলে দিয়েছে।

সালমান বলে, ‘আমি বাবা-মা আর শিক্ষকদের উৎসাহে ও সহযোগিতায় পড়ালেখা চালিয়ে গিয়েছি। এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছি। আমার স্বপ্ন আমি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চাই। আমি চাই লেখাপড়া শেষ করে মানুষের সেবা করতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।’

সালমান আরও বলে, ‘আমার এ পর্যন্ত আসার পথটা সহজ ছিল না। অভাবের সংসারে বাবা-মা ও বড়ভাইয়ের পক্ষে আমার লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করা সম্ভব ছিল না। আমি যখন নবম শ্রেণির ছাত্র, তখন টাকার অভাবে আমার লেখাপড়া বন্ধ হওয়ায় উপক্রম হয়েছিল। আমি ঢাকা, সিলেট ও কুমিল্লায় কাজের সন্ধানে যেতাম। সেখানে গিয়ে কখনো রাজমিস্ত্রীর কাজ করতাম। কখনো দিনমজুরি করে টাকা রোজগার করতাম। রোজগারের কিছু টাকা বাড়িতে পাঠানোর পাশাপাশি নিজের লেখাপড়ার জন্য সঞ্চয় করতাম। এভাবে প্রায় এক বছর কেটে যায়। বাড়ি ফিরে আবার মাদরাসায় যাওয়া শুরু করি। স্যাররা আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেন। আমি এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হই। বাইরে গিয়ে ভালো কোন প্রতিষ্ঠানে এইচএসসিতে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু অভাবের কথা চিন্তা করে সাহস করিনি। 

পরে একই মাদরাসায় আলিমে ভর্তি হই। ভর্তি হওয়ার পরে আবার দেশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কাজ করার পাশাপাশি পড়ালেখা চালিয়ে যাই। স্যারদের সহযোগিতা আর আমার পরিশ্রমে ও খোদাতায়ালার অশেষ কৃপায় এবারেও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে জিপিএ-৫ পেয়েছি। ধারদেনা করে বর্তমানে রংপুরের উদ্ভাস কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়েছি। তবে অর্থাভাবে ভালো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারব কিনা সে শঙ্কায় আছি। লেখাপড়া চালিয়ে যেতে সরকারি বেসরকারি সহায়তা কামনা করছি।’

সালমানের প্রতিবেশীরাও মুগ্ধ তার সাফল্যে। একজন বলেন, ‘ এই এলাকায় আটজন ছেলে- মেয়ে এবারে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। এরমধ্যে সালমানের পরিবারের অবস্থা একেবারে নাজুক। অভাবের সংসারে থেকেও সালমান এত ভালো রেজাল্ট করবে, এটা ভাবিনি। কিন্তু সামনে তো অনেক খরচ। যদি কেউ ওর পাশে না দাঁড়ায়, তাহলে ছেলেটার ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে।’

মা দুলালী বেগমের চোখেও ছেলের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ। তিনি বলেন, ‘একদিকে সংসারের অভাব আর ছেলের পড়ালেখা, দুই দিক সামাল দিতে পারছি না। সহায়তা না পেলে ছেলেটার পড়ালেখা বন্ধ করে দিতে হবে, এটা ভাবলেই বুকটা ফেটে যায়।’

শাহ বাজার এএইচ সিনিয়র ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম মিঞা বলেন, ‘ সালমান ফারসি আমাদের মাদরাসার অত্যন্ত গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থী। আমরা শিক্ষকরা তাকে যতটা পেরেছি, সহযোগিতা করেছি। তার স্বপ্নপূরণে সমাজের বৃত্তবানরা এগিয়ে আসবেন, এই প্রত্যাশা করছি।’


Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.